চিয়া চাষে খুলবে কৃষকের ভাগ্যচিয়া চাষে খুলবে কৃষকের ভাগ্য

পুষ্টি ও ঔষধি গুণ সম্পন্ন দুষ্প্রাপ্য ফসল চিয়ার চাষাবাদ মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগ নিয়েছে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী হর্টিকালচার সেন্টার।

উচ্চ মূল্যের এ ফসল আবাদ করে কৃষকের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন কাশিয়ানী হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-সহকারী উদ্যান কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম।

ঔষধি গুণ সম্পন্ন এ দানাদার ফসল চিয়ায় প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও প্রোটিন রয়েছে। এটি ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও ক্যান্সার প্রতিরোধী এবং মানব দেহের শক্তির উৎস হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি চেহারার লাবণ্য ধরে রাখতে এবং ওজন কামাতে সাহায্য করে।

খৃষ্টপূর্ব কাল থেকে মেক্সিকো, গুয়েতেমালা ও কলম্বিয়াসহ আমেরিকার কয়েকটি দেশে ঔষধি ফসল চিয়া চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশে চিয়ার পরিচিতি ও ব্যবহার কম হলেও আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এর চাহিদা ব্যাপক।

কাশিয়ানী হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-সহকারী মো. শহিদুল ইসলাম জানান, বছরব্যাপী উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন বাকি না দেওয়ায় গোপালগঞ্জে ব্যবসায়ীকে হত্যা: পুলিশ প্রকল্পের আওতায় রবি মৌসুমে কাশিয়ানী হর্টিকালচার সেন্টারের তিনটি প্লটের ২০ শতাংশে চিয়া বীজ চাষাবাদ করা হয়েছে। এ মাসেই ৩ প্লট থেকে ৪০ কেজি চিয়া বীজ সংগ্রহ করা হবে।

“প্রতি কেজি চিয়া কমপক্ষে ৫’শ টাকা দরে বিক্রি হয়। সে হিসেবে উৎপাদন খরচ বাদে কৃষকের অন্তত ৪৩ হাজার টাকা লাভ হবে।”

তিনি আরও বলেন, “কৃষকদের আমরা চিয়া চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। আগামী রবি সৌসুমে চিয়া বীজ গোপালগঞ্জ জেলার কৃষকের মাঠে চাষাবাদের জন্য ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। এ বীজ দিয়ে ২৫ বিঘা জমি আবাদ করা যাবে।”

কাশিয়ানী হর্টিকালচার সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর/নভেম্বর মাসের দিকে উঁচু জমিতে চিয়া আবাদ করতে হয়। ফেব্রয়ারি মাসে এ ফসল ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করা যায়। স্বল্প মেয়াদ কাল সম্পন্ন চিয়ার ফলন ১১০ থেকে ১১৫ দিনের মধ্যেই পাওয়া যায়। পুরো জীবন কালে মাত্র ৩ বার সেচ দিতে হয়। মাঝে মধ্যে আগাছা পরিষ্কার করতে হয়।

এ ফসলে কোন ধরনের পোকার আক্রমণ হয় না। এক বিঘা জমিতে চিয়া আবাদে সার, সেচ, বীজ ও পরিচর্যা বাবদ টাকা খরচ হয় মাত্র ৭ হাজার টাকা। আর বিঘা প্রতি ১ শ’ থেকে ১১০ কেজি ফলন পাওয়া যায়।
কাশিয়ানী উপজেলার রাতইল গ্রামের কৃষক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, “চিয়ার চাষাবাদ খুবই সহজ। রবি মৌসুমে প্রচলিত যে কোন ফসলের তুলনায় চিয়ার দাম অনেকগুণ বেশি। এ ফসল উৎপাদন করে খুব লাভবান হওয়া যায়। তাই আগামী বছর আমি ৫ বিঘা জমিতে চিয়ার চাষ করব।”

কাশিয়ানী উপজেলার বরাশুর গ্রামের কৃষক গোলাম কিবরিয়া বলেন, “হর্টিকালচার সেন্টারে চিয়া ভাল ফলেছে। সেখানে কৃষি বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে নতুন ও উচ্চ মূল্যের চিয়া ফসল সম্পর্কে শুনেছি। আগামীতে আমি মানবদেহের জন্য উপকারী এ ফসলের চাষ করব।”

ক্যান্সার প্রতিরোধী ও পুষ্টি সমৃদ্ধ চিয়ার চাষ করে মানুষের জীবন রক্ষা করবে; সেই সঙ্গে অর্থ মেলার আশায় এ ফসল চাষের ইচ্ছার কথা জানালেন একই উপজেলার ঘোনাপাড়া গ্রামের কৃষক সুমন হোসেন।

উচ্চ মূল্যের এ ফসল উৎপাদনে কৃষকের আয় অন্তত ৭ গুণ বৃদ্ধি পাবে জানিয়ে না কাশিয়ানী হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যান তত্ত্ববিদ মো. রাকিবুল হাসান বলেন, “বেকাররা চিয়া আবাদ করে বেকারত্ব ঘুচাতে পারেন।”

মানবদেহের জন্য চিয়ার আরও গুণের কথা জানালেন কাশিয়ানী হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম।

দুষ্প্রাপ্য ঔষধি ‘চিয়া’ বীজের বাংলাদেশে সফল চাষ

স্যালমন ফিসের তুলনায় চিয়ায় ৮ গুণ বেশি ওমেগা থ্রি ও ফ্যাটি এসিড রয়েছে; এতে ব্রোকলির চেয়ে ৭ গুণ ম্যাগনেশিয়াম, দুধের চেয়ে ৫ গুণ বেশি ক্যালশিয়াম রয়েছে।চিয়ায় ফাইবারের অংশ ৪০ ভাগ।

তাছাড়া কলার চেয়ে ২ গুণ বেশি পটাশিয়াম আর পালং শাকের তুলনায় ৩ গুণ বেশি আয়রন রয়েছে। শরীরের ক্ষতিকারক কোলস্টোরেল এলডিএল কমিয়ে উপকারী কোলস্টোরেল এইচডিএল বৃদ্ধি করে চিয়া।

আমিনুল বলেন, একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ প্রতিদিন মাত্র ৩০ গ্রাম চিয়া গ্রহণ করে সুস্থ থাকতে পারেন। শিশুরা বয়স ভেদে ৫ থেকে ১০ গ্রাম চিয়া গ্রহণ করতে পারে। চা, কফি, দুধ বা বিভিন্ন খাবারের সঙ্গেও চিয়া খাওয়া যায়।

এ কর্মকর্তা আরও বলেন, “আমাদের দেশে প্রচুর ধান উৎপাদন হয়; এ দিয়ে আমাদের ক্ষুধা দূর হয়েছে। এখন সুস্থ সবল জাতি গড়তে পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। চিয়া সে লক্ষ্য পূরণ করে কৃষকের আয় বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে।”

সুত্রঃ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *