চীন নয়, বরং বাংলাদেশকেই প্রথম টপকাতে হবে ভারতেরচীন নয়, বরং বাংলাদেশকেই প্রথম টপকাতে হবে ভারতের

নিউজ ডেস্কঃ

করোনার প্রভাবে ভারতের অর্থনীতি হতাশাজনক পর্যায়ে চলে এসেছে। ২০২০ সালে মাথাপিছু প্রবৃদ্ধিতে প্রতিবেশী বাংলাদেশের পেছনে থাকবে ভারত। বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু আইএমএফ কর্তৃক ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক আউটলুক নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর টুইট করেন। কৌশিক বসু হতাশ হয়ে লিখেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে যে কোনো দেশের উত্থান ভালো খবর। কিন্তু এ খবরটি নিশ্চিত করে হতাশার যে, পাঁচ বছর আগে ২৫ ভাগ অর্থনীতির নেতৃত্ব দেয়া দেশ ভারত এখন পিছিয়ে পড়ছে। খবর দ্যা ওয়াশিংটন পোস্ট।

কৌশিক বসু লিখেছেন-
১৯৯০ সালে অর্থনীতি পুনরুত্থানের সময় ভারতের স্বপ্ন ছিল চীনের আদলে অর্থনীতির দ্রুত সম্প্রসারণ। কিন্তু এর তিন দশকের মাথায় এসে ভারত বাংলাদেশের পেছনে ছিটকে পড়া পুরো বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থানকে চিত্রিত করে।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয়ী হতে বাংলাদেশকে সাহায্য করেছিল ভারত। কিন্তু বৃহৎ শক্তি হিসেবে আত্নপ্রকাশের আকাঙ্খা নিয়ে গড়ে ওঠা ভারত যদি সেই ক্ষুদ্র দেশেরই পেছনে পড়ে থাকে, তাহলে সেটি পুরো দক্ষিণ এশিয়াতেই ভারতের প্রভাব ক্ষয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত বহন করে।
তাহলে সমস্যাটা কোথায়। হ্যাঁ, করোনা মহামারিকে এ ক্ষেত্রে প্রথম দায় দেয়া যায়। ১৬৫ মিলিয়ন জনসংখ্যার দেশ বাংলাদেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ৬শ । যার আট গুণ জনসংখ্যার দেশ ভারতে মৃত্যু বাংলাদেশের ২০ গুণ। করোনায় মৃতের সংখ্যা কমাতে কড়াকড়ি লকডাউন আরোপের ফলে ভারতের মাথাপিছু প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৩ শতাংশ কমে গিয়েছে।
আর্থিক অব্যবস্থাপনা, স্বল্প পুঁজি এবং বিনিয়োগ সংকটের কারণে করোনা পরবর্তী ভারতের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার বিলম্বিত করবে। ভিয়েতনামও নিজেদের সক্ষমতার চেয়েও পরিস্থিতি উতরে উঠেছে। বাংলাদেশ স্বল্প দক্ষ শ্রম শক্তির মাধ্যমে উৎপাদন ধরে রেখেছে। উভয় দেশেরই চীনের আনুকূল্য আছে। করোনা ছাড়াও অর্থনীতির দৌঁড়ে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে ভারত।
ভারত হেঁটেছে অন্য পথে। করোনাকালীন সময়ে উৎপাদন ধরে না রেখে কারখানায় নিয়োজিত এক কোটিরও বেশি শ্রমশক্তিকে শোষণ করেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হিসেবে, পোশাক ও টেক্সটাইল খাতে ১৪০ বিলিয়ন ডলারের উৎপাদন বন্ধ রাখার মধ্য দিয়ে ৫ শতাংশ জিডিপি হ্রাস পেয়েছে।

২০১৯ সালে কম্পিউটার এক্সেসোরিজ রপ্তানি অর্ধেক হওয়ার কারণে ভারতে হট্রগোল শুরু হয়। কিন্তু করোনাকালীন একইভাবে ৬০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় বন্ধ হয়েছে। এ বিষয়ে কথা বলার কেউ নেই। ফুটওয়্যার এবং নিটওয়্যার খাত থেকে এখানে প্রতিষ্ঠা পেতেই দেয়া হয়নি। কিংবা পরিকল্পিতভাবে এসব বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অথচ এই খাতে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ ছিল।
সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হল, কেউই এ বিষয়ে সুপরিকল্পনা নিতে চায় না। অথচ রাজনীতিবিদরা এ বিষয়ে বাংলাদেশের চেয়েও দরিদ্র দেশের কাছে পরিত্রাণ খুঁজতে পারে। ভারত আমাদানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে শ্রমশক্তি বাড়ানো দরকার। এই মুহুর্তে ১৯৬০ এবং ৭০ সালের মতো অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নির্ধারণে স্বনির্ভরতার শ্লোগান ফিরিয়ে আনতে হবে। রপ্তানি বাজারে ভারত কম্পিউটার সফটওয়্যারের মতো অনেক পণ্যের চাহিদা আছে। কিন্তু চীন স্বল্পমূল্যে এসব পণ্য বিক্রি করে থাকে। এসব জায়গায় সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন জরুরি।
প্রতিবছর ৮ মিলিয়ন কর্মসংস্থান তৈরিই এখন করোনা পরবর্তী ভারতের প্রধান মাথা ব্যাথার বিষয়।

সুত্রঃ আরটিভি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *