নিউজ ডেস্কঃ
জীববৈচিত্র্য রক্ষা না পেলে পুরো মানবজাতিই বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাবে মন্তব্য করে এই পৃথিবী ও মানুষের অস্তিত্ব রক্ষায় চারটি পদক্ষেপ নিতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার প্রথম প্রহরে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বায়োডাইভার্সিটি সামিটে দেওয়া ভিডিও বার্তায় তার এই আহ্বান আসে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা যে বিশ্বে বাস করি, সেখানে প্রতিটি প্রাণী পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল, এই বাস্তুতন্ত্রে প্রতিটি প্রজাতির আলাদা আলাদা ভূমিকা আছে।”
কিন্তু মানুষের কর্মকাণ্ডে সেই বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা বোঝাতে ওয়ারর্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড এবং লন্ডন জুলজিক্যাল সোসাইটির তথ্য তুলে ধরেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭০ থেকে ২০১৬ সালে এসে বিশ্বে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা ৬৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
“বাংলাদেশ স্বাদু পানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। কিন্তু বিশ্বে স্বাদু পানির জীববৈচিত্র্য দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। শিল্প বিপ্লবের পর থেকে এ পর্যন্ত পৃথিবী তার ৮৫ শতাংশ জলাভূমি হারিয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭০ সালের পর থেকে স্বাদু পানির স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, উভচর প্রাণী, সরীসৃপ এবং মাছের জনসংখ্যা প্রতি বছর গড়ে ৪ শতাংশ হারে হ্রাস পেয়েছে।
“আমরা জলবায়ু পরিবর্তন ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়কে বাড়িয়ে তুলছি। যার ফলস্বরূপ, কোভিড-১৯ এর মত জুনটিক (অন্য প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে আসা সংক্রামক ব্যাধি) রোগের ঝুঁকি বাড়ছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা কেবল অন্যান্য প্রজাতির বিলুপ্তির কারণ হচ্ছি না; আমাদের কর্মকাণ্ড যদি এই ধারাতেই চলতে থাকে, তাহলে আমরা প্রকৃতপক্ষে মানবজাতির বিলুপ্তির দিকেই এগিয়ে যাব।”
এই পৃথিবীকে রক্ষা করতে, মানুষের অস্তিত্ব রক্ষা করতে চার দফা পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় তুলে ধরেন।
১. যে কোনো বিনিয়োগের সময় খেয়াল রাখতে হবে, সেটা ভবিষ্যতের জন্য কতটা টেকসই হবে।
২. জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য শিক্ষাব্যবস্থা ও গবেষণার মাধ্যমে বৃহত্তর জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে এবং আইন ও নজরদারি ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে।
৩. জেনেটিক গবেষণার তথ্য এবং এ সংক্রান্ত প্রথাগত জ্ঞান থেকে প্রাপ্ত সুফল যাতে প্রকৃত স্বত্ত্বাধিকারীরা পান, তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
৪. প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে যেসব লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেগুলোর বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করবে আমরা বিলুপ্ত হয়ে যাব, না টিকে থাকব। সুতরাং আমাদের অবশ্যই সেসব অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে হবে।
জীববৈচিত্র রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর কথাও প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মৌলিক নীতি হিসাবে সংবিধানে স্বীকৃত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের শুরুতেই বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অধ্যাদেশ কার্যকর করেছিলেন।
যে ক’টি দেশ জৈব বৈচিত্র্য সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক কনভেনশনটি বাস্তবায়নের জন্য আইন কার্যকর করেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ২০১৭ সালেই বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ‘বাংলাদেশ বায়োলজিকাল ডাইভারসিটি অ্যাক্ট’ পাস হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ তার ভূখণ্ডের ৫ শতাংশের বেশি এবং সমুদ্র অঞ্চলের প্রায় ৫ শতাংশ এলাকাকে ‘ঝুঁকিতে থাকা’ এবং সংরক্ষিত অঞ্চল হিসাবে ঘোষণা করেছে।
সুত্রঃ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম