জৈন্তাপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসারের করোনা জয়ের গল্পজৈন্তাপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসারের করোনা জয়ের গল্প

করোনাজয়ী এক কৃষি যোদ্ধার দিনলিপি
সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার সুব্রত দেবনাথ সসম্প্রতি করোনা থেকে নিরাময় লাভ করেছেন। তার করোনাকালীন সময়ের চিকিৎসা পদ্ধতি ও দিনলিপি হুবহু পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলোঃ

এই অভিজ্ঞতার বর্ননা যেকোন ঔষুধের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর..মনোবল বৃদ্ধিতে শুধু একবার পড়ে দেখুন…..

আমি গত ২৪/০৫/২০ তারিখে করোনা পরীক্ষার জন্য স্যাম্পল দিয়ে পজিটিভ হওয়ার পর গত ০৩/০৬/২০ তারিখে পুনরায় স্যাম্পল দেওয়ার পর নেগেটিভ রেজাল্ট আসে। আমার অনেক বন্ধু বান্ধব পরিচিত জন আমার কাছে জানতে চেয়েছে মাঝখানের সময়টা কেমন ছিল, অনেকেই চেয়েছে আমি যাতে আমার অভিজ্ঞতাটা শেয়ার করি তাতে হয়ত আমার আশেপাশের পরিচিত জনরা কিছুটা উপকৃত হবে। আর ইতোমধ্যে আমার অনেক সহকর্মী ও আক্রান্ত হচ্ছেন আর সেজন্যই আমার অভিজ্ঞতাটা শেয়ার করতে চাচ্ছি।
২৬/০৩/২০ তারিখ হতে লকডাউন ঘোষণার পর থেকেই সরকারের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ডিপার্ট্মেন্টের পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে সরাসরি কৃষকের সাথে মাঠে ঘাটে কাজ করে যাচ্ছি। শরীরে জ্বর অনুভব করায় আমি গত ২৪/০৫/২০ তারিখে জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আমার স্যাম্পল প্রদান করি, আমি স্যাম্পল দেওয়ার পর ই মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি যে আমার পজিটিভ আসতে পারে কেননা ইতিমধ্যে আমার উপজেলা কৃষি অফিসার স্যার করোনা পজিটিভ হয়েছেন।
স্যাম্পল দেওয়ার পর থেকেই আইসোলেশন মেইনটেইন করেছি। দুদিন পর রাতের বেলা রেজাল্ট এসেছে যে আমি পজিটিভ, শোনার পর কিছুটা বিচলিত হলেও নিজেকে দ্রুত সামলে নিয়েছি। সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমি ভাবব যে আমার কিছুই হয়নি এবং ঘুমিয়ে ও গেলাম এবং ভাল ঘুম ও হয়েছে, অনেকে বলতে পারে বানিয়ে বলতেছি কিন্তু বাস্তবে আমি যেটা ফিল করছি বিষয়টাকে স্বাভাবিক ভাবে নিলে তেমন কিছুই না। সমস্যা যেটা সেটা হল আপনার আশেপাশের পরিবেশ ওইটাই আপনাকে কিছুটা টেনশনে ফেলতে পারে, যেমন আমার গ্রামের বাড়িতে ছড়ানো হইছে নানান গুজব এমনকি আমি মারা গেছি এটাও। পরিবারের সাথে সবসময় যোগাযোগ রক্ষা করেছি যাতে তারা ঘাবড়ে না যায়।

যাইহোক এখন আসি কি কি লক্ষণ আমার ছিল….
১) জ্বর দুদিন ( সহনীয় পর্যায়ে)
২) গলাব্যাথ
৩) পিঠে এবং পায়ের মাংস পেশিতে ব্যাথা
৪) একদিন বুকের বামপাশে ব্যাথা।

কি কি পদ্ধতি অবলম্বন করেছি….

ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো অবলম্বনের ক্ষেত্রে ফেসবুকে দেখেছি বারাবাড়ি রকমের সাজেশন। আমার কাছে কিছু কিছু জিনিস অতিরিক্ত মনে হয়েছে। আমি খুব সাধারণ ভাবেই পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করেছি।
১) দিনে ৩/৪ বার ভাপ নেওয়া সহনীয় মাত্রায়। পানিতে ব্যবহার করেছি শুধুমাত্র আদা, লবঙ্গ, এলাচ। লেবু ব্যবহার করিনি।
২) ভাপ নেওয়া পানি দিয়ে গারগল করেছি ৪/৫ বার, গলার সর্বোচ্চ যত ভিতরে নিয়ে গারগল করা যায়। পানিতে লবণ মিশিয়ে নিয়েছি।
৩) চা এক থেকে দুবার খেয়েছি আদা দিয়ে।
৪) মাল্টা ২ টা সকাল ১১ টায়।
৫) লেবু ভাতের সাথে খেতে যা লাগে তাই খেয়েছি।
৬) স্বাভাবিক খাওয়া দাওয়া করেছি, বাড়াবাড়ি রকমের কিছু না করাই ভাল উল্টো অন্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ডাক্তারের সাজেশন…..
সিভিট সকাল বিকাল একটি করে
জিঙ্ক ট্যাবলেট রাতে একটা
ভিটামিন ডি ট্যাবলেট সপ্তাহে একটা করে চারটা দিয়েছেন।
ডক্সিসাইক্লিন রাতে সকালে একটি করে।এক সপ্তাহ। ( ঔষধ সেবনের পুর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন)

এই হচ্ছে আমার নিয়ম কানুন এবং মেনে চলা বিষয়গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম, বাড়াবাড়ি রকমের খাবার দাবার, ভিটামিন কিছুই গ্রহণ করিনি পরবর্তীতে ০৩/০৬/২০ তারিখ দেওয়া স্যাম্পল নেগেটিভ এসেছে। এই সময়টিতে আমার পরিবার, বন্ধু- বান্ধব, সহকর্মী, সকলেই আমাকে সহযোগিতা করেছে, পাশে থেকেছে তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
আমি সবার জন্য বলব যে এটা মোটেই ভয় পাওয়ার মত কিছু না, মানসিক ভাবে চাঙ্গা থাকুন এটাকে সহজভাবে গ্রহণ করুন এটা আপনার কিছুই করতে পারবেনা। হয়ত অনেকেই আছেন যারা করেনা আক্রান্ত হয়েছেন কখন জানেন ও না আবার সুস্থ ও হয়ে গেছেন। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এবং মৃত্যুর সংখ্যা দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নাই, পরিসংখ্যান কেবলই একটা সংখ্যা।

পরিশেষে বলব সবাই ভাল থাকেন, সুস্থ থাকেন, হাসিখুশি থাকুন 🙂🙂🙂।

সুব্রত দেবনাথ
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার
জৈন্তাপুর সিলেট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *