নিউজ ডেস্কঃ
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত পুরো দেশকে রেড, ইয়েলো ও গ্রিন-এই তিন জোনে ভাগ করে লকডাউনে যাচ্ছে সরকার। করোনা আক্রান্তের হার কোন এলাকায় কেমন-তার উপর ভিত্তি করে এই তিন জোনে ভাগ বা ম্যাপিংয়ের কাজটি করছে আইসিটি মিনিস্ট্রি। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় করণীয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে জোনভিত্তিক লকডাউনসহ বিকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। রোববার তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপিত হবে। সবকিছু পর্যালোচনা করে নির্দেশনা প্রদান করবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষনিক নির্দেশনা প্রদান করলে রোববারই ঢাকায় করোনা আক্রান্ত হার বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন এলাকাকে রেড জোন হিসেবে লকডাউন ঘোষণা করা হতে পারে। আর এ সপ্তাহের মধ্যেই পুরো দেশকে জোন ভিত্তিক রেড ইয়েলো ও গ্রিন এলাকায় বিভক্তের কাজ সম্পন্ন করে আগামী সপ্তাহের মধ্যেই সেভাবেই ব্যবস্থা নেয়ার কাজ সম্পন্ন করবে সরকার।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত পুরো দেশকে রেড, ইয়েলো ও গ্রিন-এই তিন জোনে ভাগ করে লকডাউনে যাচ্ছে সরকার। করোনা আক্রান্তের হার কোন এলাকায় কেমন-তার উপর ভিত্তি করে এই তিন জোনে ভাগ বা ম্যাপিংয়ের কাজটি করছে আইসিটি মিনিস্ট্রি। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় করণীয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে জোনভিত্তিক লকডাউনসহ বিকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। রোববার তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপিত হবে। সবকিছু পর্যালোচনা করে নির্দেশনা প্রদান করবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষনিক নির্দেশনা প্রদান করলে রোববারই ঢাকায় করোনা আক্রান্ত হার বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন এলাকাকে রেড জোন হিসেবে লকডাউন ঘোষণা করা হতে পারে। আর এ সপ্তাহের মধ্যেই পুরো দেশকে জোন ভিত্তিক রেড ইয়েলো ও গ্রিন এলাকায় বিভক্তের কাজ সম্পন্ন করে আগামী সপ্তাহের মধ্যেই সেভাবেই ব্যবস্থা নেয়ার কাজ সম্পন্ন করবে সরকার।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ও করোনা সংক্রান্ত মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মো. হাবিবুর রহমান খানের সাথে কথা বলেএসব তথ্য জানা গেছে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটিতে ছিল দেশ। অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় নিয়ে সরকার ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত শর্ত সাপেক্ষে সীমিত আকারে সরকারি-বেসরকারি অফিস খোলার ঘোষণা দিয়েছে। একই সাথে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বন্ধ থাকা গণপরিবহনও (বাস, লঞ্চ, ট্রেন) চালু হয়। কিন্তু, চলমান করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় আরো কঠোর হচ্ছে সরকার। পুরো দেশকে ‘রেড, ইয়েলো ও গ্রিন’-এই তিন জোনে ভাগ করে অঞ্চলভিত্তিক লকডাউন দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
এর আগে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্রম অবনতির মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর গত ১ জুন সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভা শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী করোনা সংক্রমণের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন এলাকাকে রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে ভাগ করার কথা জানান।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বেশি আক্রান্ত এলাকাকে রেড, অপেক্ষাকৃত কম আক্রান্ত এলাকাকে ইয়েলো ও একেবারে কম আক্রান্ত বা মুক্ত এলাকাকে গ্রিন জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। রেড জোনকে লকডাউন করা হবে, ইয়েলো জোনে যেন আর সংক্রমণ না বাড়ে সেই পদক্ষেপ নেয়া হবে। সতর্কতা থাকবে গ্রিন জোনেও।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ও করোনা সংক্রান্ত মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মো. হাবিবুর রহমান খান বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন এলাকা রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে ভাগ করার জন্য অ্যাপ করা হয়েছে। রোববার নাগাদ ঢাকা শহরের একাধিক জায়গার রেড জোনে লকডাউনের মাধ্যমে পাইলটিং শুরু হবে। আর প্রত্যাশা করছি, সারা দেশে আগামী বুধবারের মধ্যে জোনিং করে কাজ শুরু করা হবে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এই প্রতিবেদককে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়ে আমরা অঞ্চলভিত্তিক লকডাউনসহ বিভিন্ন বিকল্প করণীয় প্রস্তাবনা তৈরি করেছি। আগামীকাল (রোববার) তার কাছে এটা উপস্থাপিত হবে। তিনি এসব যাচাই বাছাই, সংযোজন-বিয়োজন করে, যেটা ভাল হয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আমাদের জানাবেন। রোববার থেকে ঢাকায় অঞ্চলভিত্তিক লকডাউন প্রক্রিয়া শুরু হবে কিনা জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটা আমি জানি না। কারণ কালকে (রোববার) এটা উপস্থাপিত হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে। এরপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত দেন তাহলে তাৎক্ষনিক। তবে খুব দ্রুতই সিদ্ধান্ত দেয়া হবে, এটাই মনে করি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকায় প্রতি এক লাখে যদি ৩০ জন বা এর বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত থাকে তবে সেটাকে রেড জোন বলা হবে। ৩ জনের বেশি কিন্তু ৩০ জনের কম থাকলে তবে সেই এলাকাকে ইয়েলো জোন বলা হবে। এক বা দু’জন বা কেউ না থাকলে সেটাকে গ্রিন জোন বলা হবে। তবে জোন ঘোষণার ক্ষেত্রে আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আরো জানা যায়, কোন এলাকা কোন জোন (রেড, ইয়েলো ও গ্রিন) অ্যাপের মাধ্যমে তা চিহ্নিত করা থাকবে। আক্রান্তরা সুস্থ হয়ে গেলে, রেড জোন পর্যায়ক্রমে ইয়েলো ও গ্রিন হবে। প্রযুক্তিগত সহায়তার কাজটি করছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও এটুআই। আর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও আইইডিসিআর (রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান) তথ্য সরবরাহ করবে।
জানা যায়, রেড জোনে শুধু ফার্মেসি, হাসপাতাল, নিত্যপণ্যের দোকান ছাড়া সব ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। প্রতিটি রেড জোনে স্বেচ্ছাসেবক টিম থাকবে, জনপ্রতিনিধিরা সম্পৃক্ত থাকবেন এসব টিমে। স্বেচ্ছাসেবক টিমের মাধ্যমে আক্রান্ত রোগীদের বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া ও মনিটরিংয়ের কাজ করা হবে। আক্রান্ত রোগীকে আইসোলেশনে রাখা এবং আক্রান্ত রোগীর পরিবারকে কোয়ারেন্টাইনে রাখাও নিশ্চিত করা হবে। সর্বোচ্চ তিন সপ্তাহের জন্য লকডাউন করা হবে। রেড জোনে থাকা মানুষ যাতে বাইরে যেতে না পারে এবং বাইরের লোকজন যাতে সেখানে ঢুকতে না পারে সে জন্য প্রবেশ ও বের হওয়ার সড়কের মুখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেবেন।
করোনা পরিস্থিতি উত্তরণে করণীয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাবনা তৈরির দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিন জোনে বিভক্ত করে লকডাউন দেয়াসহ বিকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রধানমন্ত্রীর কাছে কী ধরনের প্রস্তাবনা দিয়েছেন জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাবনা আমরা ড্রাফট করে পাঠিয়েছি। আইসিটি মিনিস্ট্রি এখানে মূখ্য ভূমিকা পালন করছে। কারণ তারাই ড্রাফ্ট তৈরি ও তিনটি জোনে ভাগ করে ম্যাপিংটা করছে। বিভিন্ন প্রস্তাব আছে। বিকল্প অপশন আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিচার বিশ্লেষণ করে যেটাকে বেস্ট মনে করবেন ফাইনালাইজড হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের অধিকাংশ উপজেলা গ্রিন। এরপর ইয়েলো আছে। আর রেড জোনগুলো তো জানেনই। ঢাকা একটা বিগ সিটি, সিঙ্গাপুরের সমান। তবে ঢাকার সব অঞ্চল রেড না। রেড আছে, ইয়েলো আছে এবং গ্রিনও আছে। সেগুলোকে ভাগ করা হবে। জোন ওয়াইজ কার্যক্রম বা ট্রিটমেন্ট দেয়া হবে। যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
অফিস খোলা থাকবে নাকি ফের ছুটিতে যাওয়া হবে-জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাধারণ ছুটি উঠে গেছে। বিধিনিষেধ দিয়েই অফিস চলছে। এখন পর্যন্ত ছুটি নিয়ে আর আলোচনা হচ্ছে না। অফিস খোলা থাকবে বিধিনিষেধ বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে।
তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই পুরো দেশের জোনিং (রেড, ইয়েলো ও গ্রিন অঞ্চল) সম্পন্ন হবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে থেকে হয়তো এমন সিদ্ধান্তই (জোনিং) আসবে।
স্বাস্থ্য বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান বলেন, একটি এলাকা চিহ্নিত করে সেখানকার প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে কতজন মানুষ আক্রান্ত রয়েছে, সেই অনুযায়ী রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে সেটি পড়বে। যে এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করা হবে, সেই এলাকা সম্পূর্ণ ব্লক রাখা হবে। সেই এলাকায় কেউ ঢুকবেও না, বেরও হবে না। ওই এলাকার নিত্যপ্রয়োজনীয় যেসব জিনিসের দরকার হবে তা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি বলেন, খুব বড় এলাকায় হয়তো এটা করা যাবে না। শহরে ওয়ার্ড বা মহল্লাভিত্তিক রেড জোন ঘোষণা করে তা ব্লক করে দেয়া হবে। তাই ঢাকায় হয়তো বেশি আক্রান্ত থাকা অনেকগুলো এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করা হবে। তবে এটি সফল করতে হলে কমিউনিটির সাপোর্ট লাগবে। স্থানীয় প্রশাসনগুলো কমিউনিটির সহায়তা নিয়েই এটা বাস্তবায়ন করবে।
সুত্রঃ নয়া দিগন্ত