গৌতম চন্দ্র বর্মন,ঠাকুরগাঁওঃ
পাট মানে কৃষকের গলার ফাঁস’—এক সময়ের এই প্রবাদ ছিল, এখন পুরনো হলোও সম্প্রতি সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকল বন্ধ ঘোষণা করায় পাট ক্রয় বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ জুট মিল কর্পোরেশন (বিজেএমসি)। ফলে বাম্পার ফলন হওয়া সত্ত্বেও পাটের বাজার নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ে ঠাকুরগাঁও জেলার কৃষক। তবে ব্যক্তি মালিকানাধীন পাটকলগুলো যথাযথ মূল্যে পাট কেনা শুরু করায় সব শঙ্কা কেটে গেছে জেলার পাট চাষিদের।জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর ঠাকুরগাঁও ৫ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে ৫ হাজার ৯৬০ হেক্টর যা লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে।সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের গৌরিপুর গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি।বিজেএমসি পাট নেওয়া বন্ধ ঘোষণা করায় আমরা খুবই চিন্তায় ছিলাম।এবার ২৮ মণ পাট উৎপাদিত হয়েছে। পাটের আশও ভালো হয়েছে। প্রতি মণ ১৮শ’ টাকা দরে বিক্রি করেছি।আমি এবার পাটের দামে খুবই খুশি।বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিশ্রামপুর গ্রামের কৃষক ললিত বলেন, আমি তিন বিঘা জমিতে পাট লাগিয়েছিলাম। এবার বৃষ্টির কারণে ফলন ভালো হয়েছে। পাটের বাজার নিয়ে নানা রকম কথাবার্তা শুনলেও ভলো দামেই পাট বিক্রি করতে পেরেছি।পীরগঞ্জ উপজেলার কালিয়াগন্জের কৃষক প্রদিব জানান, আবহাওয়া ভালো ছিলো তাই সেচের জন্য বাড়তি খরচ হয়নি। সরকারও করোনাভাইরাসের কারণে বীজ, সার ও অন্যান্য সুবিধা দিয়েছে। বাজারে পাটের দামও ভালো। সবমিলে এবার আমার ৫০ হাজার টাকা মুনাফা আসবে আশা করছি।এবছর স্বাভাবিক বর্ষা হওয়ায় পাট কাটা, জাগ দেওয়া, শুকানো এবং বাজারজাত করা কৃষকদের পক্ষে অনেকটাই সহজ হয়েছে বলে জানা গেছে। এখন জেলার সর্বত্র চলছে পাট কাটা, জাগ দেওয়া, পাটের আশ ছাড়ানো, শুকানো এবং বাজারজাত করা হচ্ছে। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায় পাট চাষিদের যেকোনো সমস্যায় মাঠে গিয়ে পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।সদর উপজেলার বিশিষ্ট পাট ব্যবসায়ী হাবিবুর বলেন, বিজেএমসির কাছে ব্যবসায়ীদের কয়েক কোটি টাকা পাওনা থাকায় অনেক ব্যবসায়ী এবার পাট কিনবে না বলে ভেবেছিলাম। কিন্তু বেসরকারি মিলগুলো নগদ অর্থে পাট কেনায় আমরা অনেকেই আবার কৃষকের কাছ থেকে পাট সংগ্রহ করছি। মিলগুলো ভালো দাম দেওয়ায় আমরা কৃষককেও খুশি করতে পারছি।ঠাকুরগাঁও কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক আফতাব হোসেন বলেন, ‘পাট চাষে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে।এবার পোকার আক্রমণেও পাটের তেমন ক্ষতি হয় না।সেই সাথে সরকারি প্রণোদনা কৃষকের উৎপাদন খরচ অনেক কমিয়ে দিয়েছে। আশা করি এবার এ জেলায় বেশি পাট উৎপন্ন হয়েছে। বর্তমানে পাটের দামও ভালো থাকায়, হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে।