গৌতম চন্দ্র বর্মন, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:
কয়েকদিন পরেই ঈদ-উল-আজহা। আল্লাহকে খুশি করতে তাঁর নামে পশু কোরবানি করবেন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। এদিকে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও ঠাকুরগাঁওয়ে কোরবানির পশুর কোনও সঙ্কট হবে না বলছে খামারিরা। তবে মহামারি পরিস্থিতিতে পশু বেচা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে তারা। করোনার এ দুঃসময়ে পশু বাজারে নিতে পারবে কিনা, বাজারে নিলেও ক্রেতা মিলবে কিনা, ক্রেতা মিললেও দাম সঠিক পাবে কিনা এসব নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে গরু খামারিরা। আর এদিকে আবার গরুর লাম্পি স্কিন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ঠাকুরগাঁওয়ে জেলা-উপজেলা মিলে গরুর খামার ১১৭৮২টি। আর গরুর সংখ্যা ৮০ হাজার ৪৫৯টি। বাজারে উঠবে অনেক গরু কিন্তু গুটি রোগ এবং লাম্পি স্কিন নামক যে রোগ দেখা দিয়েছে তাতে ক্রেতা কম হতে পারে। সরেজমিনে বুধবার (২২ জুলাই) সদর পৌরসভা সত্যপীরব্রীজ সংলগ্ন মামুন ডেইরি ফার্মের স্বত্ত্বাধিকারী মামুন জানান, করোনা নিয়ে এখনও দুশ্চিন্তামুক্ত হতে পারিনি। মূলত কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে সারা বছর গরু লালন পালনে মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। তাই এখন পশু বেচতে না পারলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হবে। একই এলাকার বাচ্চু, হাবিব বলেন, সারা বছর গরু মোটাতাজা করে কুরবানির ঈদের অপেক্ষায় থাকি। কুরবানিতে লাখ টাকায় বেচার আশায় ভালো ভালো খাবার খাইয়ে লালন পালন করি। তার ভালো দাম যদি না পাই, তাহলে লোকসান হবে অনেক। অন্যদিকে ভাউলার হাট নাপিত পাড়ার গরুর খামারি মোতাহার বলেন, এবার ৫টি গরু মোটাতাজা করেছি। এত টাকা বিনিয়োগ করে যদি কুরবানির ঈদে দাম ভালো না পাই তাহলে আমাদের মতো খামারিদের দুঃখের সীমা থাকবে না। তিনি আরো বলেন, ঋণ করে কুরবানির আশায় গরু পালন করেছি। করোনার বর্তমান অবস্থায় এখন আতঙ্কের মধ্যে আছি। সারা বছর পরিশ্রম করে গরু পালন করি। কয়েক বছর ধরে ঢাকার বড় বড় ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছ থেকে গরু কিনে অনলাইনে ছবি দিয়ে বেচে ফায়দা লুটে। তার মধ্যে এবার গো-খাদ্যের দাম অত্যধিক বেড়ে গেছে। এ কারণে গরু পালনে খরচও বেড়েছে। খোঁচাবাড়ি বাজারে গরু কিনতে আসা ক্রেতা মো. মোহতাদুম ইসলাম মুকুল জানান, একদিকে লাম্পি স্কিন রোগ ও অন্যদিকে করোনার কারণে মানুষের হাতে নেই টাকা-পয়সা। খামারিরা আগের মত দাম ধরে রাখায় বাজারে তেমন ক্রেতার সমাগম হচ্ছে না। এ বিষয়ে প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের কৃষিবিদ আলতাফ হোসেন বলেন, এ বছরও আমাদের দেশে যে পশু আছে তা কুরবানির জন্য যথেষ্ট। দেশের বাইরে থেকে গরু আনার কোনো প্রয়োজন নেই। গত বছর অমাদের কুরবানিযোগ্য পশু ছিল প্রায় এক লাখের ওপরে। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে ঠাকুরগাঁওয়ে অসংখ্য গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার খামারও গড়ে উঠেছে। গ্রামের বিধবা মহিলা বা সাধারণ কৃষক থেকে শুরু করে লাখ লাখ মানুষ গরু, ছাগল ও ভেড়া পালন করে। এখন অনেক শিক্ষিত যুবক ডেইরি ফার্ম ও গরু মোটাতাজাকরণকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে।