নিউজ ডেস্কঃ
দেশের পেঁয়াজের বাজার এখন থমথমে। দাম কোথাও কেজিতে ১০ টাকা কমলেও আবার কোথাও বেড়েছে ১৫ টাকা। এরইমধ্যে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে একদিকে বাজারে চলছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং টিমের নজরদারিসহ ভ্রাম্যমাণ আদালত। অপরদিকে সংকট মেটাতে মিসর, তুরস্ক ও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে ব্যাংকগুলোকে পেঁয়াজ আমদানির এলসির (ঋণপত্র) মার্জিন ন্যূনতম রাখার নির্দেশ দিয়ে বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ সার্কুলার জারি করেছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের পক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পেঁয়াজ রফতানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ করে কূটনৈতিক যোগাযোগ শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে এলসি করা পেঁয়াজের ট্রাকগুলো ছেড়ে দিতেও তৎপরতা শুরু হয়েছে। বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকাল নাগাদ এসব ট্রাক বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের কথা থাকলেও বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকাল পর্যন্ত ট্রাকগুলো প্রবেশের অনুমতি মেলেনি বলে জানা গেছে। এ কারণে এলসি’র অন্তর্গত ভারত-বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তে কয়েকশ ট্রাক পেঁয়াজ নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা না হওয়া পর্যন্ত এই ব্যবস্থা করার জন্য বাংলাদেশ সরকার ভারতকে অনুরোধ করেছে।
জানা গেছে, সরকারি হিসাবে বাংলাদেশে এ বছর প্রায় ২৫ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। এরমধ্যে ২৫ শতাংশ পচে গেছে। এরপরও এ বছর দেশে মোট পেঁয়াজের পরিমাণ ১৯ লাখ ১১ হাজার মেট্রিক টন। অথচ চাহিদা রয়েছে ২৪ থেকে ২৫ লাখ মেট্রিক টন। বাকি ৬ লাখ টন ঘাটতি মেটাতে ভারত থেকেই আমদানি করতে হয় পেঁয়াজ।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, আমরা বিকল্প বাজার থেকে পেঁয়াজ আমদানির চেষ্টা করছি। গত বছর আমাদের তো কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে। মিয়ানমার, তুরস্ক, মিসর ও চীন থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা সম্ভব হলে পরিস্থিতি ভালো হবে।
এদিকে কম দামে পেঁয়াজ আমদানি করে তা বেশি দামে কোনও ব্যবসায়ী বিক্রি করলে তাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) তলব করা হবে। প্রয়োজনে বাজার নজরদারির দায়িত্বে থাকা সরকারের অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাকেও অসাধু আমদানিকারকদের সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করবে এনবিআর।
জানা গেছে, এবার এনবিআরের একাধিক গোয়েন্দা শাখা পেঁয়াজ আমদানির তথ্য সংগ্রহ করতে বাজারে খোঁজ নেবে। কী পরিমাণ পেঁয়াজ, কত দামে আমদানি করেছে, আমদানিকৃত পেঁয়াজ ওই ব্যবসায়ী কোন আড়তদার, খুচরা বা পাইকারি বিক্রেতার কাছে বিক্রি করেছেন তার সব তথ্য তদন্তে জানতে চাওয়া হবে। একইসঙ্গে খতিয়ে দেখা হবে আমদানিকারকদের কাছ থেকে কিনে আড়তদার, পাইকারি বিক্রেতারা বা এজেন্টরা মজুত রেখে বাজারে পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন কিনা। প্রয়োজনে এনবিআরে তাদেরও তলব করা হবে।
এদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত মঙ্গলবার ও বুধবারের তুলনায় বৃহস্পতিবার পেঁয়াজের বিক্রি কমলেও পাইকারি বাজারে দাম কমেনি। যে কারণে খুচরা বাজারেও পেয়াজের দাম কমেনি। সহসা পেঁয়াজের দাম কমার সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১১০ টাকা দরে। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ৫ থেকে ৬ লাখ টন পেঁয়াজ মজুত রয়েছে। এ দিয়ে আরও ৩ মাস চলবে। তবে সিজনের শেষের দিকে প্রথম পেঁয়াজ পাতা এবং পরে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করবে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে বা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। ওই সময়ের কিছু আগে হয়তো পেঁয়াজের সামান্য সংকট বাজারে পরিলক্ষিত হতে পারে। আমদানির সুযোগ থাকলে এটি হতো না। তবে ততদিনে বাজারে মিয়ানমার, মিশর ও তুরস্ক থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারে চলে আসবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে বাজার স্থিতিশীল রাখতে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, এর ফলে বাজারে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। আগামী এক মাসের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে পেঁয়াজের দাম।
সুত্রঃবাংলা ট্রিবিউন