তেঁতুলিয়ায় ৮ কৃষকের বাগানে হাসছে টিউলিপ ফুলতেঁতুলিয়ায় ৮ কৃষকের বাগানে হাসছে টিউলিপ ফুল

শীত প্রধান দেশের নজরকাড়া ফুল টিউলিপ। এ ফুলের সৌন্দর্য যেমন মনোমুগ্ধকর, ঠিক তেমনি অর্থনৈতিক দিক দিয়েও গুরুত্বপূর্ণ। রাজকীয় এ টিউলিপ ফুল ফুটেছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। প্রথমবারের মতো ছোট ছোট বাগানে এ ফুল চাষ করেছেন আটজন প্রান্তিক কৃষক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তেঁতুলিয়ায় শীতের তাপমাত্রা কম থাকায় টিউলিপ চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পরীক্ষামূলক টিউলিপ চাষে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থা ইএসডিও।

তেঁতুলিয়া উপজেলার দর্জিপাড়া এবং শারিয়াল জোত গ্রামে পরীক্ষামূলক ৪০ শতক জমিতে ৬ প্রজাতির ৪০ হাজার টিউলিপের চাষ করছেন আট কৃষক। সাধারণত ২৫ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে ফুল ধরার কথা থাকলেও গত ১ জানুয়ারি বীজ (বাল্ব) বপনের ২৩ দিনের মাথায় বাগানে শোভা পাচ্ছে টিউলিপ ফুল। টিউলিপের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য দেখে চাষিরা অভিভূত।

সংশ্লিষ্টদের ধারণা, সঠিকভাবে বাজারজাত করতে পারলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিসহ তেঁতুলিয়ার পর্যটনেও নতুনমাত্রা যোগ হবে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পর্যটনের সম্ভাবনাময় এই উপজেলায় টিউলিপ ফুলের বাগান হওয়ায় আকর্ষণ আরও বেড়েছে। নানা রঙের বাহারি টিউলিপ ফুল দেখতে এখানে ছুটে আসছেন অনেকে। কেউ সেলফি তুলছেন। আবার কেউ ফুল কিনছেন।

দেশে এই ফুলের চাহিদা থাকায় বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। উচ্চমূল্যে আমদানির মাধ্যমে এ ফুলের চাহিদা পূরণ করা হয়। নিয়মিত পরিচর্যা, প্রযুক্তি ও কৃষি বিভাগের পরামর্শে তেঁতুলিয়ার কৃষকরা প্রথমবার চাষেই সফলতা পেয়েছেন। এখান বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপ চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

স্থানীয় নারী উদ্যোক্তা মনোয়ারা, মোর্শেদা খাতুন ও আয়শা আক্তার জানান, আটজন মিলে পাঁচ শতক করে ২০ শতক জমিতে টিউলিপ চাষ করেছেন। বীজ বপনের ২৩ দিনেই ফুল ধরতে শুরু করেছে। এরকম জায়গায় নেদারল্যান্ডের ফুল চাষ করতে পেরে খুশি তারা। শুরুতে তারা দুশ্চিন্তায় থাকলেও বাহারি ফুল ফোটায় এখন তারা অভিভূত। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এই ফুল দেখতে আসছেন। এ ফুল বাজারজাত করতে পারলে পরের বছর আরও বেশি জমিতে টিউলিপ চাষ করবেন তারা।

টিউলিপ ফুলচাষ প্রকল্পের সমন্বয়কারী আইনুল হক জাগো নিউজকে বলেন, টিউলিপ ফুল সাধারণত শীত প্রধান অঞ্চলের। যার বৈজ্ঞানিক নাম ‘টিউলিপা’। এটি নেদারল্যান্ডসের ফুল। এ ফুলের ১২টি রঙ আছে। এগুলো হলো- অ্যান্টার্কটিকা (সাদা), ডাচ সানরাইজ (হলুদ), স্ট্রং গোল্ড (হলুদ), বেগুনি প্রিন্স (বেগুনি), ডেনমার্ক (কমলা), রিপে (কমলা), অ্যাড রেম (কমলা), টাইমলেস (লাল সাদা শেড), ইলে দে ফ্রান্স (লাল), লালিবেলা (লাল), বার্সেলোনা (গাঢ় গোলাপি), মিল্কশেক (হালকা গোলাপি)।

তিনি আরও বলেন, টিউলিপ অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফুল উৎপাদনকারী উদ্ভিদ। এটি বাগানে কিংবা কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে বাণিজ্যিকভিত্তিতে চাষ করা হয়। ফুলদানীতে সাজিয়ে রাখার জন্য এর আবেদন অনন্য। বর্ষজীবী ও কন্দযুক্ত প্রজাতির এ গাছটি লিলিয়াসিয়ে পরিবারভুক্ত উদ্ভিদ। টিউলিপের প্রায় ১৫০ প্রজাতি এবং এদের অসংখ্য সংকর রয়েছে। বিভিন্ন ধরণের হাইব্রিডসহ টিউলিপের সব প্রজাতিকেই সাধারণভাবে টিউলিপ নামে ডাকা হয়।

তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেশে এখনো সেভাবে টিউলিপ ফুলের চাষ শুরু হয়নি। বড় পরিসরে টিউলিপ চাষ উত্তরবঙ্গের তেঁতুলিয়ায় প্রথম। ফুলটি চাষ করতে হলে তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে উত্তরের এ উপজেলায় বরফের পর্বতযুগল হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা কাছে থাকায় এখানে দীর্ঘ সময় শীত থাকে। এরকম শীতে টিউলিপ চাষে সুবিধা রয়েছে। এখানে টিউলিপ চাষের বাণিজ্যিক সম্ভাবনাও রয়েছে।

সুত্রঃ জাগো নিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *