নিউজ ডেস্কঃ
হলুদ চাষ লাভজনক। এ কারণেই পাহাড়ের চাষিরা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হলুদ চাষে ঝুঁকছেন। সারাদেশে পাহাড়ের হলুদের ব্যাপক চাহিদা থাকায় বিগত বছরগুলোয় পাহাড়ের পতিত জমিতে হলুদ চাষ করে ভাগ্য ফিরিয়েছেন অনেকে।
হলুদ চাষে পাহাড়ের জুড়ি নেই। পাহাড়ের পতিত টিলাভূমিতে উৎপাদিত হলুদের খ্যাতি দেশজুড়ে। পাহাড়ে কৃষিপণ্যের তালিকায় সবার শীর্ষে ‘হলুদ’। এসব কারণেই হলুদ সংগ্রহে ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোর, ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা থেকে পাইকাররা ভিড় করেন খাগড়াছড়ির বিভিন্ন হাট-বাজারে।
অনুকূল আবহাওয়ায় চলতি বছরেও পাহাড়ে হলুদের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। হলুদ উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলেও ন্যায্য মূল্য নেই। বিগত বছরগুলোয় প্রতিমণ হলুদ ৮-৯ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও চলতি মৌসুমে দাম কমে দাঁড়িয়েছে ৪-সাড়ে ৪ হাজারে। ফলে দাম না পেয়ে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা।
সম্প্রতি খাগড়াছড়ির গুইমারার বড়পিলাক, সিন্ধুকছড়ি ও হাফছড়ি ঘুরে প্রান্তিক চাষি এবং খাগড়াছড়ির সবচেয়ে বড় হলুদের বাজার গুইমারায় আসা খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
বড়পিলাকের হলুদ চাষি মো. শাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘হলুদ চাষে আগের মতো লাভ নেই। চলতি বছর হলুদের ভালো ফলন হলেও
উৎপাদন খরচের সাথে বাজার দরের বিস্তর ফারাক। পাহাড়ের হলুদের চাহিদা থাকলেও বিশেষ সিন্ডিকেটের কারসাজিতে ন্যায্য মূল্য বঞ্চিত চাষিরা।’
গুইমারা বাজারে হলুদ বিক্রি করতে আসা আব্দুল হক বলেন, ‘প্রতিমণ হলুদ সর্বোচ্চ ৫শ টাকা দরে বিক্রি করেছি। দাম কম পাওয়ায় লোকসান গুনতে হয়েছে। এ বছর হলুদ বিক্রি করে শ্রমিকের মজুরিও পাওয়া যাবে না।’
তৈকর্মা এলাকার হলুদ চাষি জীবন ত্রিপুরা ও তুসাপ্রু মারমা বলেন, ‘ব্যাংক ঋণ নিয়ে হলুদ চাষ করলেও বছর শেষে ঋণ পরিশোধ আর শ্রমিকের মজুরি দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। হলুদ চাষে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।’
হলুদ ব্যবসায়ী ইয়াকুব মিয়া জানান, বাড়তি পরিবহন খরচ ও হলুদের দাম কমে যাওয়ায় আগের মতো লাভ নেই। আগের চেয়ে আয় কমেছে কয়েকগুণ। বিদেশি হলুদের কারণে দেশি হলুদের দাম কমে গেছে।
দীর্ঘদিন হলুদ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মো. আবদুল করিম ও হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘এখানকার হলুদ অত্যন্ত ভালো হওয়ার পরও ইদানিং বড় বড় বিপণন কোম্পানিগুলো এখান থেকে হলুদ না কিনে দেশের বাইরে থেকে হলুদ আনছেন। এ কারণেই ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না স্থানীয় চাষিরা।’
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মর্তুজা আলী বলেন, ‘পাহাড়ি টিলাগুলো হলুদ চাষের জন্য খুবই উপযোগী। দেশের বাজারে স্থানীয় হলুদকে গুরুত্ব দিয়ে হলুদের আমদানি কমানো হলে স্থানীয় কৃষকরা হলুদের ন্যায্য দাম পাবে। পাশাপাশি হলুদ চাষে আগ্রহী হবে।’
ফলে দেশব্যাপী পাহাড়ের হলুদের ব্যাপক সম্ভাবনার কথা চিন্তা করে বিদেশি হলুদের আমদানি বন্ধ করতে হবে। এছাড়া হলুদের বাজার ব্যবস্থাপনা জোরদার আর শিল্পকারখানা গড়ে তোলা গেলে পাহাড়ের প্রান্তিক চাষিরা হলুদ চাষে উৎসাহিত হবে বলে আশা করেন স্থানীয়রা।
সুত্রঃ জাগো নিউজ