নিউজ ডেস্কঃ
ঢাকার ধামরাইয়ে স্বল্প পুঁজিতে লেবু চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে বেকারত্ত দূর করেছে অনেক যুবক ও হতদরিদ্র কৃষক। সরকারী ভাবে ছোট-খাট সমস্যা দুর ও পৃষ্ঠ-পোষকতা পেলে বিদেশে লেবু রফতানী করে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব বলে জানালেন লেবুচাষী মীর হোসেন।
কৃষিবিভাগের তথ্যানুসারে, এ বছর ধামরাই উপজেলার বালিয়া , যাদবপুর, গাংগুটিয়া, আমতা, বাইশকান্দা,সোমভাগ, সানোড়া, কুশুরাসহ মোট ১১টি ইউনিয়নে প্রায় ৬২০ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ হয়েছে। এলাকার অনেক বেকার যুবকসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন ব্যক্তিগত ও বানিজ্যিক ভাবে,আবার নিজের জমি চাষের পাশাপাশি অন্যের জমি ইজারা নিয়েও স্বল্প পুঁজিতে লাভ জনক ভাবে লেবুচাষ করছেন। একবার লেবুর চারা লাগিয়ে ৮/১২বছর ফসল পাওয়া যায়। বাজারে চাহিদা থাকায় ও ভাল দাম পাওয়ায় দিন দিন ধামরাইতে লেবুচাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গাছে লেবু ধরা শুরু করলে বছরে প্রায় ১২ বার লেবু সংগ্রহ করা যায়।
এ প্রসঙ্গে কুশুরা ইউনিয়নের পাড়াগ্রাম এলাকার বাসীন্দা লেবু চাষী মীর হোসেন (৪২) জানান, তার ব্যক্তিগত ৬ বিঘা জমি রয়েছে । এ জমিতে পূর্বে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করতো । ধান চাষে প্রতি বিঘায় খরচ বাদে বছরে ৫ হাজার টাকা মুনাফা থাকতো না।আবার, বন্যা, বৃষ্টি,খরার কারণে ফসল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা তো থাকতোই। ফলে সে লেবু চাষের দিকে ঝুকে পড়ে প্রথমে নিজের জমিতেই লেবু চাষ শুরু করে। পরের বছর নিজের লেবু ক্ষেতে কলম তৈরী শুরু করে অন্য জমিতে তা রোপন করে। বর্তমানে সে নিজের জমি বাদে অন্যের জমি বাতষরিক পত্তন নিয়ে লেবু চাষ করছে। লেবু চাষে উৎপাদন খরচ একেবারেই কম অন্যদিকে বন্যার পানিতেও তেমন নষ্ট হয় না। আবার রোগ বালাইও কম থাকায় তার খরচ বাদ দিয়ে প্রতি বছরে এক বিঘা জমি থেকে মুনাফা হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। আব, চাহিদা আরো বেশি হলে বছরে আয়ও বেড়ে যায় অনেক।
জানা যায়,করোনা রোগের কারণে লেবুর দাম অনেক বেশি। পূর্বের চেয়ে ৩ বা ৪ গুন দাম বেশি পাচ্ছে কৃষকরা। বর্তমানে ১ হাজার লেবুর দাম ৩-৫ হাজার টাকা। এখন একটু দাম কমে গেছে। কিন্তু রমযানের শুরুতে লেবুর বেশ চাহিদা ছিল।তখন জমি থেকে লেবু তোলে শেষ করা পারতাম না।এক হালি লেবু আমরা ৩০ টাকায় বিক্রি করেছি। ঢাকা শহরের বড় বড় ব্যাপারিরা চলে আসে ধামরাইতে। কোন কৃষককে আর লেবু নিয়ে বাজাওে যেতে হয় না।
মীর হোসেন আরো বলেন, তিনি প্রায় ১৮০০ শতক জমিতে বর্তমানে লেবু চাষ করছে। তিনি প্রায় ১৫ বছর ধরে লেবু চাষ করে চলেছে। তার লেবু চাষ করে প্রায় ৭ থেকে ১০ লক্ষ টাকা বছরে আয় করে থাকে।তিনি এক সময়ে কোন কাজ কর্মই করতো না। আর জমিতে ধান চাষ করে লাভের পরিমাণ হতো খুবই কম। লাভের চেয়ে খরচ বেশি হয়ে যেত।
মীর হোসেন এ বছর ৩০ লক্ষ টাকা দিয়ে অন্যের জমি পত্তন নিয়েছে। আর পরিচর্যা খরচ হিসেবে আরো ১০ লক্ষ টাকা খরচ হবে। তারপরও বড় কোন ঝামেলা না হলে খরচ বাদে ৭ থেকে ১০ লক্ষ টাকা লাভ হবে বলে আশা রাখি।
তিনি আরো বলেন, যদি আমরা সরকারীভাবে প্রশিক্ষন ও ব্যাংক ঋণের সুবিধা পাই তবে আমরা আরো ভালো করে চাষ করতে পারব এবং আমাদের লেবু এক সময় বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে।
বর্তমানে লেবু চাষ করে ধামরাইয়ের অনেকেরই ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে।তাই লেবু চাষের দিকে অনেকেই এগিয়ে আসতে শুরু করেছে এবং অন্য ফসলের চাষ বাদ দিয়ে লেবু চাষের দিকে আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। যেহেতু এই ফসল চাষে ক্ষতির কোন সম্ভাবনা নাই।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুল হাসান বলেন, এ বছর ধামরাইতে প্রায় ৭৫০ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ করা হচ্ছে। আর যার উতপাদন লক্ষ মাত্রা প্রায় ৮ হাজার মেট্রিকটন। তবে লেবুর সাধারনত মাকরশার আক্রমন বেশি করে। লেবুর লেমন বাটার ফ্লাই,আগামরা রোগ, গ্রীনী রোগ হয়ে থাকে। তবে ধামরাইতে এ ধরনের কোন প্রকার রোগ বালাইয়ের আক্রমন নেই।অন্য ফসলের চেয়ে লাভ বেশি তাই কৃষকরা লেবু চাষে বেশি করে ঝুকে পড়েছে। ধামরাইতে যদি সরকারীভাবে লেবু বাজারজাতকরনের ব্যবস্থা থাকত তবে কৃষকরা বেশি লাভবান হতো।
কৃষি নিউজ