সজীব হাসান,( নওগাঁ) সংবাদদাতাঃ
এই প্রথম পরীক্ষামূলক ভাবে ইতালির বিখ্যাত “চেরি টমেটো” চাষ হচ্ছে নওগাঁ রাণীনগরে। প্রথমবারের মতো এই উন্নত জাতের টমেটো চাষ করে সাফল্য পেয়েছে উপজেলার গোনা ইউনিয়নের বেতগাড়ী গ্রামের উদ্যোক্তা মাসুদ রানা তুফান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গাছ ভর্তি থোকায় থোকায় ঝুলে রয়েছে চেরি টমেটো। আকারে আঙুরের চেয়ে কিছুটা বড় নতুন জাতের এই টমেটো। কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে তা গাঢ় লাল ও কমলা রং ধারণ করে থাকে। দেখতে খুবই সুন্দর, আকর্ষনীয়। এই জাতের টমেটো গাছ আকারে অনেক বড় ও মজবুত। প্রতিটি গাছ থেকে ৭-৮কেজি টমেটো সংগ্রহ করা যায়। এই টমেটোর বীজ সংগ্রহ করে তা থেকে চারা উৎপন্নসম্ভব।
উদ্যোক্তা মাসুদ রানা তুফান বলেন, এটি মূলত বিশ্বের উন্নত জাতের মধ্যে অন্যতম একটি টমেটো। প্রথমে ইউটিউবে আমি এই চেরি টমেটো চাষ দেখে চাষ করতে উদ্বুদ্ধ হই। পরবর্তীতে কৃষি বিভাগের পরামর্শে বীজ সংগ্রহ করে বোপন করি। পরবর্তীতে বীজ বপনের ২০দিন পর চারা তুলে জমিতে রোপর করি। রোপনের ৯০ থেকে ১০০দিনের মধ্যে পাকা শুর হয়। এটি লম্বাটে আঙুরের মতো দেখতে। গাছটিও প্রচুর লম্বা হয়। থোকায় থোকায় টমেটো ধরে। এটির পুষ্টিগুনও দ্বিগুন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রথমবারে আমি ফলনও ভালো পেয়েছি।
তিনি আরও বলেন, সম্পূর্ণ ভাবে অরগানিক পদ্ধতিতে চাষ করেছি। যা বিষমুক্ত চেরি টমেটো। ৫ শতাংশ জমিতে বীজ, পলি হাউস, মালচিং পেপার, সেচ, ওষুধ, শ্রমিক খরচসহ সব মিলে খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকার মত। সব খরচ বাদ দিয়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মত লাভ হতে পারে। এই চেরি টমেটো আরোও একমাস বাজারজাত করবো।
তবে স্থানীয় বাজারে এর তেমন কোন চাহিদা না থাকায় বর্তমানে ঢাকার সুপারশপগুলোতে চেরি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকা কেজিতে। প্রথম বারের মতো ভিনদেশি এই টমেটো উৎপাদনে সফল হয়েছি।
যদি ভালোভাবে বাজারজাত করতে পারি তাহলে আগামীতে আরও বড় পরিসরে এর চাষাবাদ করবো। এছাড়া আমার এই চাষ দেখে অনেকে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। সবাই এই টমেটো চাষাবাদ শুরু করলে বাজারজাত করাও সহজ হবে। শতভাগ চেষ্টা থাকলে কৃষকদের ভাগ্য বদলে যেতে সময় লাগবে না।
উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আহসান হাবিব বলেন, বেলে মাটিতে শীতকালে চেরি টমেটোর চাষ করা হলে চাষিরা লাভবান হতে পারবেন। মাসুদরানা তুফান সম্পূর্ন আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে উপরে পলি নেট হাউস ও নিচে মালচিং পেপার বিছিয়ে এই টমেটো চাষ শুরু করেন। এই টমেটো চাষের ক্ষেত্রে বলা যায় সম্পূর্ন অর্গানিক পদ্ধতি। কোনো রকম কিটনাশক দেওয়ার দরকার হয় না। সম্পূর্ন বিষমুক্ত পরিবেশে চাষ হচ্ছে এই চেরি টমেটো। তাই কম পরিশ্রম ও অল্প খরচে দ্রুত লাভবান হতে হলে এই ধরনের বিদেশী দামী ফসল চাষ করার পরামর্শ দিবো শিক্ষিত বেকার যুবকদের।
কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম বলেন, চেরি টমেটো আকারে ছোট এবং দেখতে অনেক সুন্দর, আকর্ষনীয় এবং খেতেও অনেক সুস্বাদু ও বেশি পুষ্টি গুণ সম্পন্ন। বর্তমানে চেরি টমেটো ঢাকার বিভিন্ন বড় বড় শপিংমলগুলোতে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তবে স্থানীয় ভাবে বাজারজাত করার মার্কেট গড়ে ওঠে নাই। আশা করি চেরি টমেটো আগামীতে এই উপজেলায় আরও সম্প্রসারিত হবে এবং বেশি পরিমাণ উৎপাদিত হলে কৃষকদের বাজারজাত করার ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা হবে। এতে করে কৃষকরাও এই ধরনের বিদেশী দামী ফসল চাষ করেও অনেক লাভবান হবেন।