নিউজ ডেস্কঃ

নওগাঁয় দিন দিন কমছে পাটের আবাদ। গত ৭/৮ বছর পাটের চাষ করে নায্য মূল্য না পাওয়ায় গত পাঁচ বছরে প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ কমেছে। কৃষকরা ও পাট শিল্প রক্ষা আন্দোলনে জড়িতরা মনে করছেন, পাট কেনা বেচা করতে বড় বাজার গড়ে তুলতে না পাড়া, পাট শিল্প কারখানা বন্ধ, শিল্প গড়ে তুলতে না পাড়া, জেলা কৃষি বিভাগের অসহযোগিতায় এরই মধ্যে অনেকেই ছেড়ে দিয়েছেন পাট চাষ। সরকার পাট চাষে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে না পারলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে পাঠ চাষ প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে। সোনালী আঁশের সোনালী সেই দিন এখন শুধুই অতীত হতে চলছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে নওগাঁয় ছয় হাজার ১০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। ২০১৯ সালে ছয় হাজার ১৫০হেক্টর, ২০১৮ সালে ছয় হাজার ৯৩০ হেক্টর, ২০১৭ সালে আট হাজার ২৫ হেক্টর এবং ২০১৬ সালে আট হাজার ৮৬০হেক্টর জমিতে পাট পাষ করা হয়েছিল।

কৃষি বিভাগের হিসেব মতে, গত ৫ বছরে নওগাঁয় দুই হাজার ৭৯৬ হেক্টর জমিতে পাট চাষ কমেছে। প্রতি বছর গড়ে ৫৬০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ কমছে নওগাঁয়।

জেলার ১১টি উপজেলায় কমবেশি পাটের আবাদ হয়ে থাকে। তবে চলতি মৌসুমে জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাট চাষ করা হয়েছে মান্দায়, এক হাজার ৭৪৫ হেক্টর। বদলগাছীতে এক হাজার ৫৫০ হেক্টর, ধামইরহাটে এক হাজার ৩৬০ হেক্টর, নওগাঁ সদরে ৮১০ হেক্টর উল্লেখ্যযোগ্য। জেলায় ভারতীয় উচ্চ ফলনশীল তোষা জাতের সবচেয়ে বেশি পাট চাষ হয়ে থাকে। এছাড়া দেশীয় বঙ্গবীর ও ৯৮৯৭ জাতের পাটের আবাদ করা হয়েছে।

স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, এক বিঘা পাট চাষে খরচ হয় প্রায় সাত থেকে নয় হাজার টাকা। ভারতীয় তোষা জাতের পাট প্রতি বিঘায় পাটের ভালো ফলন হলে প্রায় ১০/১২ মণ উৎপাদন হয়ে থাকে। প্রতি মণ পাট বাজারে কেনা বেচা হয়ে থাকে দেড় হাজার টাকায়। পাট চাষের চেয়ে সবজি চাষে বেশি লাভ হওয়ায় পাট চাষীরা দিনদিন সবজি চাষে ঝুঁকে পরছেন। দেশি জাতের পাট প্রতি বিঘায় ৬/৭ মণ উৎপাদন হয়ে থাকে। ফলে কৃষকদের লোকসান গুণতে হয়। একারণে কৃষকরা দেশীয় জাতের পাট চাষ করে না।

আশির দশকে নওগাঁয় ব্যাপক হারে সোনালী আঁশ পাট চাষ করা হতো। সে সময় পাটের নায্য দাম না পাওয়া পাট চাষীদের প্রতিবছর লোকসান গুণতে হতো। ১৯৮০/৮৫ সালের দিকে জেলায় শুরু হয় ইরি-বোরো ধান চাষ। সে সময় পাট চাষীরা সরকারি সহযোগিতা না পাওয়ায় পাট চাষ থেকে সরে এসে ধানের চাষ শুরু করে।

চাষীরা জানান, সহজ শর্তে ঋণ সহায়তা, বিনা মূল্যে প্রকৃত চাষীদের বীজ-সার প্রদান ও পাটের দাম সময় মত নির্ধারণ করে সরাসরি চাষীদের কাছ থেকে সরকারিভাবে পাট কেনার মধ্য দিয়ে আবারও পাটের সোনালী অতীত ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামছুল ওয়াদুদ জানান, কৃষি বিভাগ থেকে পাটচাষীদের সহযোগিতা করা হলেও পাট আবাদের পর দামের অনিশ্চয়তা, শ্রমের দাম বৃদ্ধি, ধানসহ সবজিতে বেশি লাভ হওয়ায় পাট চাষ থেকে কৃষকরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

সুত্রঃ ইত্তেফাক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *