নাটোরে সেলিম রেজার আম রাজ্যে গৌরবের গৌরমতিনাটোরে সেলিম রেজার আম রাজ্যে গৌরবের গৌরমতি

॥ ফারাজী আহম্মদ রফিক বাবন ॥
নাটোর, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ (বাসস) : রকমারী ফলের বাণিজ্যিক উৎপাদন ও প্রযুক্তির ব্যবহারে সফল হয়েছেন নাটোর তথা দেশের আদর্শ ফল উদ্যোক্তা সেলিম রেজা। তাঁর প্রায় দুইশ’ বিঘার ফল সা¤্রাজ্যের বেশীরভাগই আম। অন্য সব গাছের আম যখন শেষ, তখন এ সেপ্টেম্বরে শুরু হয়েছে গৌরমতির মৌসুম। দেশের আড়াই শতাধিক জাতের আমের ভিড়ে নিজের অনন্য অবস্থানকে জানান দিচ্ছে সম্প্রতি উদ্ভাবিত গৌড়মতি। মিষ্টতার মাত্রা ২৭ টিএসএস নিয়ে সবচে’ মিষ্টি আমের বৈশিষ্ট্য বহন করছে গৌরবের এ গৌড়মতি।
২০০০ সালে এলোভেরাসহ ভেষজ চাষের মধ্যে দিয়ে কৃষিতে অভিষেক ঘটে সেলিম রেজার। দু’বছর পরে নাটোর সদরের আহম্মদপুরে গড়ে তোলেন ৩৮ বিঘার বৃহত্তম আপেল কুল ও থাই কুলের খামার। এ খামারকে কেন্দ্র করে আহম্মদপুরেই গড়ে ওঠে দেশের বৃহত্তম কুলের আড়ত-যা বর্তমানে পাশ্ববর্তী বনপাড়াতে স্থানান্তরিত হয়েছে। বারোমাসি থাই পেয়ারার বাণিজ্যিক উৎপাদনের পথিকৃৎ সেলিম রেজা। বারোমাসি বাতাবি লেবু, কদবেল ও শরীফার মত দেশীয় ফলের বাণিজ্যিক উৎপাদনে সফল সেলিম রেজার খামারে আছে বেদানা, রাম্বুটান, পার্সিমন, স্ন্যাকফ্রুট, ম্যাংগোস্টিন আর রাশি রাশি ড্রাগন এবং আম।
নাটোর সদরের আহম্মদপুর, দত্তপাড়া, ডালসড়ক এবং নলডাঙ্গা উপজেলার বাসুদেবপুরে থাকা খামারগুলোতে নিরাপদ ফল উৎপাদনে সেলিম রেজা ব্যবহার করছেন বিভিন্ন প্রযুক্তি। তাইওয়ান থেকে আনা মালচিং পেপার ব্যবহারের ফলে মাটির আর্দ্রতা রক্ষার পাশাপাশি সার, সেচ কম লাগছে, আগাছা কম হচ্ছে। ব্যাগিং পদ্ধতির কারণে আম হয়ে উঠছে আকর্ষণীয় আর থাকছে বিষমুক্ত। সফল উদ্যোক্তা সেলিম রেজা উদ্যোক্তা সৃষ্টিতেও কাজ করেন বলে তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়ের কমিউনিটি হর্টিকালচার প্রমোটর হিসেবে কাজ করছেন। জাতীয় পর্যায়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ১১টি পুরস্কারসহ তাঁর কৃতিত্বের ঝুলিতে ৭৪টি সনদ ও ক্রেস্ট জমা হয়েছে।
সেলিম রেজার রাজ্যে অসংখ্য আম থাকলেও তিনি বর্তমানে ১১টি নাবি জাতের আম নিয়ে কাজ করছেন। তাঁর চেস্টা, কিভাবে আমের উৎপাদন এগিয়ে নিয়ে শীতকাল পর্যন্ত পৌঁছনো যায়। গৌরমতি ছাড়াও এ তালিকায় আছে যাদুভোগ ও বান্দিগুড়িসহ নাম না জানা সব আম।
আম্পান ঝড়ের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তাঁর আহম্মদপুর ও ডালসড়কের খামারে সবচে’ বড় আকর্ষণ প্রায় দুই হাজার গৌড়মতি আম গাছ। এ গাছের পাতা ল্যাংড়া আম গাছের মত আর গাছের ধরণ খানিকটা আশ্বিণার মত। এ সেপ্টেম্বরে খামারকে সুশোভিত করে রেখেছিল আমের ভারে নুব্জ হয়ে পড়া আম গাছগুলো। সুডৌল আমগুলোর সৌন্দর্য নজরকাড়া। এক একটির গড় ওজন পাঁচশ’ গ্রাম। কীটনাশকমুক্ত এবং সম্পূর্ণ অর্গানিক রাখতে ব্যাগিং করা হয়েছিল প্রায় বারো হাজার আম। রাজধানীসহ দেশের অভিজাত শহরগুলোতে উচ্চ মূল্যে এ আমের বিপণন এখন শেষের পথে।
গৌরমতির পরিধি বাড়ানোর প্রয়োজনে খামারে ২০ হাজার চারা উৎপাদন করলেও আগ্রহীদের কাছে বিক্রি করছেন ১৩০ টাকা দরে। বাণিজ্যিকভাবে চারা উৎপাদনের করে আগ্রহী ফল চাষীদের মাধ্যমে গৌড়মতির বিস্তার ঘটানোর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানালেন সেলিম রেজা। আর জানালেন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। তিনি ফল ও সবজির হিমাগার তৈরী, জুস উৎপাদন ও রপ্তানী করতে চান। এ ব্যাপারে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা আশা করেন সেলিম রেজা।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক সুব্রত কুমার সরকার বলেন, নাটোর জেলায় গৌড়মতিসহ অন্যান্য ফল উৎপাদনে অনন্য অবদান রেখে চলেছেন সেলিম রেজা। তাঁর এ অবদান নাটোরসহ দেশের জন্যে গৌরবের। তাঁর সকল উদ্যোগে কৃষি বিভাগ পাশে থাকবে।

সুত্রঃ বাসস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *