নেত্রকোনায় ৫০০ হেক্টর জমির বোরো ধান পানির নিচেনেত্রকোনায় ৫০০ হেক্টর জমির বোরো ধান পানির নিচে

গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে নেত্রকোনায় তলিয়ে গেছে অন্তত ৫০০ হেক্টর জমির পাকা বোরো ধান। পানিতে নিমজ্জিত এসব ধান উদ্ধারে প্রাণপণ চেষ্টা করছেন স্থানীয় কৃষকরা। কিন্তু শ্রমিক-সংকটের কারণে তারা পড়েছেন চরম বেকায়দায়।

এদিকে জেলার সোমেশ্বরী, কংস, ধনু ও উব্ধাখালী নদীর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারাসহ জেলার বাসিন্দারা।

রোববার (২২ মে) দুপুর পর্যন্ত জেলার কলমাকান্দা উপজেলার উব্ধাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল বলে নিশ্চিত করে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের কলমাকান্দার পরিমাপক মোবারক হোসেন।

এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঢলের পানিতে জেলায় মোট ৫০০ হেক্টরের মতো জমির বোরো ধান পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার কথা স্বীকার করলেও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বলছেন, তলিয়ে যাওয়া বোরো ধানের জমির পরিমাণ কয়েক গুণ বেশি হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা ঢলে জেলার সদর, বারহাট্টা ও কলমাকান্দা উপজেলার কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বেশি। এর মধ্যে কলমাকান্দা উপজেলার গণেশ্বরী, মঙ্গলেশ্বরী, মহাদেব, মহেষখলা নদীর পানি বেড়ে ঢুকে পড়েছে ফসলি জমিতে। নিমজ্জিত হয়েছে উপজেলার চানপুর, খাসপাড়া, সোনাডুবি, মহিষাসুরা বিলসহ বেশ কয়েকটি এলাকার প্রায় ৫০০ হেক্টর পাকা বোরো ধান। একই অবস্থা জেলার বারহাট্টা ও সদর উপজেলারও। এসব এলাকায় এখনো ২০ থেকে ৩০ শতাংশ জমির ধান কাটার বাকি রয়েছে বলেও জানান কৃষকরা।

জেলার কলমাকান্দা উপজেলার বড়দল গ্রামের কৃষক ইমান আলী বলেন, আমার জমির ধানগুলো মাত্র কাটার উপযোগী হয়েছিল, ঠিক এমন সময় ঢলের পানি ঢুকে সব ধান তলিয়ে গেছে। কোনো শ্রমিকও পাচ্ছি না। তাই নিজেরা যতটুকু পারছি কাটছি। কিন্তু তা-ও আবার মাড়াই ও শুকানোর জায়গা নাই। কারণ ধানমাড়াই ও শুকানোর জায়গাতেও পানি।

 

ঢলের পানিতে বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ায় জেলার বারহাট্টা উপজেলার সিংধা ইউনিয়নের কালিজানা ও ভাটিপাড়া এলাকার কৃষকরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কালিজানা ও ভাটিপাড়া এলাকায় স্থানীয় আশিয়ল, রামের গেরিয়া, গেরিয়া, সিংধা, ভাটিপাড়া, বানিয়াগাঁও, বাসাউড়া, বেঙ্গালা, পাগলী, বাবনীকোনাসহ অন্তত ১২টি গ্রামের কৃষকদের জমি রয়েছে। ইতোমধ্যে এসব জমির প্রায় ৪০ শতাংশ ধান কাটা হলেও ৬০ শতাংশ ধানই রয়ে গেছে কাটার বাকি।

সিংধা গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মুখলেছ মিয়া বলেন, কয়েক দিন ধরে একটানা বৃষ্টির কারণে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে আমাদের জমির পাকা বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। তলিয়ে যাওয়া এসব ধান কাটা কিছুতেই সম্ভব হচ্ছে না।

নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত বলেন, কলমাকান্দা উপজেলার উব্ধাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার অন্যান্য নদ-নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। তবে বৃষ্টিপাত না কমলে এবং পানিবৃদ্ধির বর্তমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে জেলায় বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।

এ বিষয়ে কথা হলে নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এফ এম মোবারক আলী বলেন, এ বছর জেলায় মোট ১ লাখ ৮৮৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ধান কাটা প্রায় শেষের পথে। তবে হঠাৎ উজান থেকে নেমে আসা ঢলে জেলার বিভিন্ন এলাকার ৫০০ হেক্টরের মতো জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে। এতে অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের সহায়তার আওতায় আনা হবে।

সুত্রঃঢাকাপোষ্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *