পাট ও কৃষি পণ্যে রপ্তানির মাধ্যমে বছরে এক হাজার কোটি ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করার সম্ভাবনা দেখছে সরকার। এ ছাড়া সরকারের কর্ম পরিকল্পনায় পাটকে দ্বিতীয় বড় রপ্তানি আয়ের খাত হিসেবে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। গতকাল রবিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় পাট দিবসের আলোচনাসভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক ও বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী এসব কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে পাট ও পাটপণ্যের চাহিদা ক্রমে বাড়ছে।
পাটের সম্ভাবনার সঙ্গে সবজি ও ফলমূল রপ্তানির সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারলে, বছরে পাট ও কৃষিপণ্য রপ্তানি করে ১০ বিলিয়ন ডলার বা এক হাজার কোটি ডলার আয় করা সম্ভব।
অনুষ্ঠানে পাট উৎপাদন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন অংশীজনের প্রতিনিধিরা পাট ও পাটশিল্পের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে বক্তব্য দেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১১ জনকে জাতীয় পাট পুরস্কার দেওয়া হয়। ১২ বছরে পাটের উৎপাদন দ্বিগুণ বেড়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, গত ১২ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নানামুখী উদ্যোগের ফলে পাটের হারানো সুদিন প্রায় ফিরে এসেছে। ২০০৫-০৬ সালে পাটের উৎপাদন ছিল মাত্র ১০ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে পাটের উৎপাদন প্রায় ১৭ লাখ মেট্রিক টন।
পাটবীজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে কৃষি মন্ত্রণালয় রোডম্যাপ করেছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘পাটবীজের জন্য আমরা কোনো দেশের ওপর নির্ভরশীল না থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চাই। সে লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় রোডম্যাপ তৈরি করেছে। আমরা আশা করছি, আগামী তিন বছরের মধ্যে দেশে পাটবীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। ’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, সরকারের কর্মপরিকল্পনায় পাট খাত রপ্তানি বাণিজ্যে চামড়াকে ছাড়িয়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হিসেবে অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখছে।
তিনি আরো বলেন, ‘কৃত্রিম তন্তুর ব্যবহার বৃদ্ধি পেলেও বর্তমান টেকসই উন্নয়নের যুগে বিশ্বব্যাপী পরিবেশবান্ধব পাট ও পাটপণ্যের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া সরকার পাটশিল্পের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারকল্পে ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে পাটের ব্যবহার বাড়ছে। এ ছাড়া এই খাতকে সুসংহত করতে ‘পাট আইন, ২০১৭’ ও ‘জাতীয় পাটনীতি, ২০১৮’ প্রণয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, পাটের সঙ্গে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি বিবেচনায় ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬ মার্চ জাতীয়ভাবে পাট দিবস ঘোষণা করেন। এরপর থেকে প্রতিবছর দিবসটি পালন করা হচ্ছে।
এর আগে সকালে জাতীয় পাট দিবস ২০২২ উদযাপন উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। শোভাযাত্রায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বীরপ্রতীক, এমপি, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম, এনডিসি; পাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান, বস্ত্র অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. নুরুজ্জামান, পাট খাতের সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের প্রতিনিধিসহ বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সুত্রঃ কালের কণ্ঠ