পাটের সোনালি আঁশ সংগ্রহে ব্যস্ত চাষিরাপাটের সোনালি আঁশ সংগ্রহে ব্যস্ত চাষিরা

অনলাইন ডেস্কঃ
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মাঠে মাঠে এখন পাটকাটা, জাগ দেয়া, আঁশ ছাড়ানো, শুকানো এবং বিক্রি করা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।

উপজেলার বিভিন্ন বাজারে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। বর্তমানে বিভিন্ন হাটবাজারে মানভেদে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২১০০-২২০০ টাকায়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অফিসসূত্রে জানা যায়, উপজেলায় তিন হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। গত বছর চাষ হয়েছিল তিন হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে।

এবার পাট চাষে মোটামুটি অনুকূল আবহাওয়া ছিল। কিন্তু শুরুর দিকে কোনো কোনো স্থানে বেশি বৃষ্টিপাতে কিছু রোপণ করা পাট নষ্ট হয়েছিল। বর্তমানে পাটকাটা, জাগ দেয়া, আঁশ ছাড়ানো এবং শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষিরা। উপজেলার বিভিন্ন বাজারে জোরেশোরে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে।

উপজেলার দিঘা গ্রামের মকুল হোসেন বলেন, এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে লাঙল, বীজ, সেচ, কাটা, পরিষ্কার করা, সারসহ যাবতীয় খরচ হয় সাড়ে ৬-৭ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর পাট উৎপাদন হচ্ছে ৭-৮ মণ।

বাউসা আমরপুর গ্রামের পাটচাষি আমিরুল ইসলাম বলেন, জমিতে পানি থাকায় পাটগাছ কাটা শ্রমিকদের অনেক বেশি মজুরি দিতে হচ্ছে। গতবারের মতো এবার পাট চাষে লাভ কম হবে। লোকসান না হলেও লাভ হবে কম।

বর্তমান বাজারে মানভেদে প্রতি মণ পাটের দাম ২১০০-২২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পাটের ফড়িয়া ব্যবসায়ী দিঘা গ্রামের ইদ্রিস আলী বলেন, এই এলাকার চাষিরা খুব একটা যত্ন নিয়ে পাট ধোয়ার কাজ করে না। এতে করে অন্য জেলার পাটের মানের চেয়ে আমাদের পাটের মান ও রঙ ভালো হয় না।

বাউসা হেদাতিপাড়া গ্রামের মকসেদ আলী বলেন, গত শুক্রবার দিঘা হাটে ভ্যানে করে ৬ মণ পাট বিক্রি করতে গিয়েছিলাম। ৯ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। তবে এর মধ্যে ভ্যান খরচ ও খাজনা খরচ দিতে হয়েছে। তবে পাটের চাহিদা আছে। বিক্রি করতে কোনো ঝামেলায় পড়তে হয়নি।

পাট ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, নওগাঁয় প্রতি মণ পাটের দাম আমাদের চেয়ে ৫০০-৬০০ টাকা বেশি। কিন্তু এ এলাকার পাটের মান ভালো না হওয়ার কারণে দাম তুলনামূলক কম পান চাষিরা।

পাট সংরক্ষণকারী দিঘা গ্রামের ব্যবাসায়ী আজিজুল হোসেন বলেন, পাট কিনতে শুরু করেছি। পাটের চাহিদা আছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এবার অন্য এলাকার পাট কম চাষ হয়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে স্থানীয়ভাবে পাটকল। এ ছাড়া বিভিন্ন মোকামে পাটের টান রয়েছে।

আড়ানী সরকারি মনোমোহিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কামরুল হাসান জুয়েল বলেন, সরকারিভাবে খাদ্য বিভাগ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান পাটের ব্যাগ ব্যবহার করে না। যদি সার কারখানা, চিনিকল, সিমেন্ট কারখানা, চাল ও আটাসহ বেশিরভাগ কারখানার পণ্য সরবরাহ করা হলে পাটের দাম বাড়ত বলে মনে করেন তিনি।

আবার বিভিন্ন পণ্যের মোড়কের জন্য দেশের বিপুল অর্থ বিদেশে যেত না। বেঁচে যেত দেশীয় পাটশিল্প।

শ্রমিক আবুল হোসেন বলেন, ১০০ পাটের আঁশ ছাড়ালে ৩০০ টাকা পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিন ৩৫০-৪৫০টি পাটের আঁশ ছাড়ানো যায়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, পাটের জমিতে কিছু পানি থাকলে আঁশের কোনো ক্ষতি হয় না। তবে অপরিপক্ক পাট কাটলে উৎপাদন ব্যাহত হবে। বর্তমান বাজারে ওঠা পাটগুলো হয়তো পরিপক্ক হওয়ার আগে কাটা হয়েছে ফলে ফলন কিছুটা কম হচ্ছে।

এ উপজেলায় তিন হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি ফলন হয়েছে ২ পয়েন্ট ৬৫ টন। উপজেলায় মোট উৎপাদন হয়েছে ৯ হাজার ৬৫৮ টন।
সুত্রঃ যুগান্তর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *