কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত কেনাফের জনপ্রিয় জাত এইচসি-৯৫ ‘র আবাদ এবং উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে বিশেষ করে কিশোরগঞ্জে কেনাফের আবাদ দিন দিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু এইচসি-৯৫’র কেনাফ বীজের চাহিদার যোগান ঠিকমতো না হওয়ায় কৃষক বাহিরের আমদানি কৃত বীজ আবাদ করে প্রতারিত হন।
#মুজিব #বর্ষে বাংলাদেশ পাট গবেষণা আঞ্চলিক কেন্দ্র, কিশোরগঞ্জ অত্র অঞ্চলের কৃষকের বীজের চাহিদা পূরণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে কিন্তু গবেষণার জায়গা এবং বীজ করার জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার স্বল্পতার দরুন অত্র অঞ্চলের বীজের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় অত্র খামার থেকে সার্বিকভাবে পাটচাষিদের সহযোগিতা করা হয়। পাট গবেষণা আঞ্চলিক কেন্দ্র কিশোরগঞ্জের প্রধান জনাব ডঃ মোঃ আশরাফুল আলম এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে ৩ টি ব্লকে/গ্রামে কেনাফ ভিলেজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। করিমগঞ্জের কিরাটন, দেহুন্দা ও ভাটিয়া গ্রামে ৩ টি জায়গায় কেনাফ ভিলেজ করা হয়।
আজ ১৫ জুন অত্র কেনাফ ভিলেজ পরিদর্শন ও পাটচাষিদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিতে একদল গবেষক টীম ৩ টি জায়গায় পরিদর্শন করেন। গবেষক দলে ছিলেন পাট গবেষণা আঞ্চলিক কেন্দ্র কিশোরগঞ্জের প্রধান জনাব ডঃ মোঃ আশরাফুল আলম, পিএসও, কৃষি গবেষণা উপকেন্দ্র, কিশোরগঞ্জের প্রধান জনাব ডঃ মোহাম্মদ মহীউদ্দিন, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ আবুল বাশার ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ রঞ্জন চন্দ্র দাস। আরও উপস্থিত ছিলেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ কামালউদ্দিন, পাটচাষি কাজল, সোহাগসহ আরও অনেকেই। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কামালউদ্দিন জানান,কিরাটন ইউনিয়নে কয়েক শতাধিক একর জমিতে কেনাফের জাত এইচসি-৯৫ পাটের আবাদ হয়েছে। কৃষকরা খুবই আশাবাদী ভালো ফলন হবে এবং রোগবালাইও কম হয়েছে।
কৃষক মোঃ কাজল জানান, আমরা অনেক কষ্ট করে এই বীজ পাট গবেষণা আঞ্চলিক কেন্দ্র কিশোরগঞ্জ থেকে সংগ্রহ করেছি। এই বীজের চাহিদা বেশি হওয়ায় আমরা আগে থেকেই পাট গবেষণায় যোগাযোগ করি এবং আমার প্রায় ১০ কাটা জমি করি। স্যারেরা চেষ্টা করেন আমাদের বীজের চাহিদা পূরণ করতে কিন্তু ওনাদের গবেষণার জমি কম, তাই সবার জন্য প্রয়োজনীয় বীজের যোগান দিতে পারেন না। খামার দেহুন্দার কৃষক ওমর ফারুক সিদ্দিক বলেন, এই বছর স্যাররা আমাদের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখেছেন এবং আমাদের গ্রামের সবাইকে অন্য খামার থেকে বীজ এনে চাহিদা পূরণ করেছেন। আমরা পাট গবেষণা কেন্দ্রকে ধন্যবাদ জানাই। সরকারের কাছে অনুরোধ এই জাতের বীজের চাহিদা পূরণ করা হোক এবং পাটের ন্যায্য মূল্য কমপক্ষে ১৭০০ টাকা /মণ করা হোক।
কৃষি গবেষণা উপকেন্দ্র কিশোরগঞ্জের প্রধান ডঃ মোহাম্মদ মহীউদ্দীন বলেন, কিশোরগঞ্জ জেলায় কেনাফ বীজের চাহিদা প্রায় ১২০-১৩০ মে. টন, বিজেআরআই যোগান দিতে পারে মাত্র ২ -২.৫ মে. টন যা চাহিদার ৬০-৬৫ ভাগের একভাগ। কৃষক বিজেআরআই এর বীজ না পেয়ে বাধ্য হয়ে ইন্ডিয়ান বীজ ক্রয় করে যার আঁশের মান অত্যন্ত খারাপ, ফলন অর্ধেক এবং ৫-৬ ফুট লম্বা হয়ে গাছ লালচে ধূসর বর্ণের মতো হয়ে যায়, এতে কৃষক প্রতারিত হচ্ছে। বিজেআরআই কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিএডিসি কে কেনাফ বীজ উৎপাদনের তাগাদা দিতে পারে। এ ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জনাব মোঃ আবুল বাশার বলেন, কিশোরগঞ্জে এ বছর অনেক কেনাফের আবাদ হয়েছে এবং ফসলের রোগবালাই পোকা- মাকড়ের আক্রমণও কম। আমরা এবছর কৃষকদের সঠিক সময়ে পাট বীজের ব্যবস্থা করেছি এবং তাদের বিভিন্ন সময় পরামর্শ দিয়েছি এবং ভবিষ্যতেও আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।তিনি বলেন, কৃষক বাঁচলেই দেশ বাঁচবে।কৃষিই সমৃদ্ধি। বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জনাব রঞ্জন চন্দ্র দাস বলেন,পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট এর বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন জাত আবিষ্কার ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য তাদের গবেষণার কাজ অব্যাহত রেখেছেন।
ডঃ মোহাম্মদ মহীউদ্দীন অত্র এলাকার কেনাফের আবাদ এবং জমির সার্বিক অবস্থা দেখে আমি চমকিত এবং পাট গবেষণা আঞ্চলিক কেন্দ্র কিশোরগঞ্জের ভূয়সী প্রশংসা করেন। প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডঃ মোহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, কৃষক যেন পাটের ন্যায্য মূল্য পান তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন এবং সরকারের পলিসি ম্যাকারদেরও সুদৃষ্টি কামনা করেন। ভবিষ্যতেও কৃষকের পাশে থাকবে পাট গবেষণা কেন্দ্র বলে কৃষকদেরকে আশ্বস্থ করেন। উল্লেখ্য করিমগঞ্জ উপজেলায় ৩ টি কেনাফ ভিলেজ রয়েছে যার সার্বিকভাবে তত্ত্বাবধানে পাট গবেষণা আঞ্চলিক কেন্দ্র, কিশোরগঞ্জ।