পার্বত্যাঞ্চলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের কৃষাণ-কৃষাণীরা সাধারণত জুম চাষের পাশাপাশি কলা চাষও করে থাকে। তাই পাহাড়ে উৎপাদিত কলা দেশে-বিদেশে সয়লাব করতে খুব বেশি সময় লাগেনি। কম খরচ। ফলন বেশি। লাভও বেশি। তাই চাষীদের অন্যান্য ফসলের তুলনায় কলা চাষের আগ্রহ বেশি। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি কিংবা বান্দরবানে প্রবেশ করলে সবার আগে চোখে পরে পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে কলা বাগান। পাহাড়ের বুক জুড়ে সাজানো সাড়ি সাড়ি কলা গাছ। সবুজ পাতার আড়ালে ঝুলে থাকে কাঁচা-পাকা কলার ছড়ি প্রতি আকর্ষণ সবার। পাহাড়ে উৎপাদিত এসব কলা দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি খেতেও মজাদার। এসব কলায় রয়েছে বেপক পুষ্টিগুণ। পাহাড়ি এলাকায় কলার চাষাবাদ হয় বছর জুড়ে। জুমচাষের পাশাপাশি কলার চাষও পাহাড়িদের আদিম পেশা।
জানা গেছে, পার্বত্যাঞ্চলে ১২মাসেই কলা চাষের ফল পাওয়া যায়। তাই পাহাড়ে কলা মিলে বছর জুড়ে সব মৌসুমে। বর্তমানে স্থানীয়দের কলাচাষে সহায়তা দিচ্ছে সরকারের কৃষি বিভাগ। ফলে কলার ফলন বেড়েছে আগের চেয়ে অধিক হারে। তবে দুর্গম এলাকায় বাজারজাতে পর্যাপ্ত সুবিধা গড়ে না উঠায় অনেক সময় উৎপাদিত কলার ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি ১০টি উপজেলা চলতি বছর কলাচাষ হয়েছে ১১হাজার হেক্টরের অধিক জমিতে। এর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ২৭হাজার ১৩০। জেলা সদর, বরকল, বিলাইছড়ি, নানিয়াচর, লংগদু, জুরাছড়ি, কাপ্তাই, কাউখালী, বাঘাইছড়ি উপজেলা ও সাজেক ইউনিয়নে, কলাচাষের খ্যাতি অনেক। সারা বছর এসব উপজেলায় বাংলা, আনাজি, সবরি, চাম্পা, বরী, নেপালি, সাগার ও সূর্যমুখি ও নেপালি কলার বাম্পার উৎপাদন হয়। একইভাবে অপর দুই পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানেও কলা ব্যাপক উৎপাদন হয়। এসব পাহাড়ি কলাগুলো প্রত্যন্ত উপজেলা থেকে লঞ্চ ও ক্যান্ট্রি বোটে করে নিয়ে আসা হয় রাঙামাটি শহরে। পরে জীপ, ট্রাক, পিকআপে বোঝাই করে জেলা শহর ও ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বাইরে নিয়ে যান পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এছাড়া প্রতি সাপ্তাহিক হাটে কলার হাট বসে রাঙামাটিতে। প্রতি হাটবার বিক্রির জন্য কলা নিয়ে যান রাঙামাটি সদরের কুতুবছড়ি, বন্দুকভাঙ্গা, বালুখালী, সাপছড়ি, কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া, নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট, ঘিলাছড়ি, নানিয়ারচর, সাবেক্ষ্যং এবং খাগড়াছড়ি মহালছড়ি উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বহু কলা চাষি।
কলা চাষী সুনীল চাকমা জানান, প্রতিটি কলার ছড়ি পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। এসব কলার চাহিদা সমতলে বেশি। তাই পাহাড় থেকে এসব কলার ছড়ি পাইকারী ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম-ঢাকাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে বেশি দামে বিক্রি করছে।
সাপ্তাহিক হাটের দিন বেচাকেনা হয় লাখ লাখ টাকার পাহাড়ি কলা। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। তবে কৃষিবিভাগ বলছে, সংরক্ষণের অভাবে কষ্টে উৎপাদিত কলা পাহাড়ে নষ্ট হয়ে যায়। তাই কলার নায্যমূল্য পাচ্ছে না চাষীরা।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তপন কুমার পাল জানান, পাহাড়ে এখন আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তিতে কলার চাষ হচ্ছে। তাই পাহাড়ে কলার উৎপাদন বেড়েছে। কিন্তু কলা সংরক্ষণে কোন ব্যবস্থা না থাকায় চাষীরা ক্ষতির সন্মুখীন হচ্ছেন। হিমাগার স্থাপনের মাধ্যমে কলা চাষের সম্ভাবনাময় স্থান হিসেবে পরিচিতি পাবে তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান। এমনটাই আশা কৃষিবিদদের।
সুত্রঃ বিডি-প্রতিদিন