পাবনার সুজানগরে এবারে পেঁয়াজ আবাদে কৃষকের খরচ হয়েছে অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি। তা সত্বেও উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। কিন্তু উৎপাদিত পেঁয়াজ হাটে এনে উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন না কৃষকরা।
কৃষকদের দাবি- এবার প্রতি কেজি পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ হয়েছে ২৬ থেকে ২৯ টাকা। অথচ বাজারে ২০ থেকে ২২ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে। পেঁয়াজের নায্য দাম থেকে বঞ্চিত হওয়ায় হতাশ এ অঞ্চলের পেঁয়াজ চাষিরা। উত্তরবঙ্গের মধ্যে পেঁয়াজের ভাণ্ডার বলে পরিচিত এবং দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী উপজেলা সুজানগর।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত বছর সুজানগরে ১৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে চারা পেঁয়াজের আবাদ হলেও এবারে এই উপজেলায় পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে ১৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে। অনুকূল আবহাওয়া ও সঠিক সময়ে সার বীজ দিতে পারায় কৃষকেরা প্রতি বিঘা জমি থেকে উচ্চ ফলনশীল চারা থেকে ৮০ থেকে ৯০ মণ এবং হাইব্রিড জাতের চারা থেকে ১০০-১২০ মণ পর্যন্ত পেঁয়াজ এবারে ঘরে তুলতে পারছে। বর্তমানে সুজানগর পৌর হাটসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে ব্যাপক পেঁয়াজ আমদানি দেখা গেছে।
রোববার সুজানগর পৌর হাটে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি মণ পেঁয়াজ প্রকারভেদে ৮০০-৯০০ মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
পৌর হাটে পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা মথুরাপুর গ্রামের চাষি আলতাফ হোসেন বলেন, পেঁয়াজ উৎপাদন করতে প্রতি বিঘায় তাদের শ্রমিক, সার, বিষ ও দানাসহ যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে আর বর্তমানে তারা যে দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন তাতে ব্যাপক লোকসান হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম সর্বনিম্ন যদি মণ প্রতি এক হাজার চারশত টাকা হয় তাহলে কৃষক তাদের খরচের টাকাটা অন্তত ঘরে তুলতে পারবে বলেও জানান তিনি।
পেঁয়াজ চাষি আব্দুল ওহাব বলেন, অন্য বছরের চাইতে এবার পেঁয়াজের আবাদে আমাদের খরচ অনেক বেশি হয়েছে। আশা করেছিলাম ভালো লাভ করার। কিন্তু এখন লাভ দূরের কথা ,খরচই তুলতে পারছি না।
সুজানগর পৌর হাটের আড়তদার বাদশা হোসেন বলেন, বর্তমানে যে দরে কৃষকেরা পেঁয়াজ বিক্রি করছে, তাতে তাদের ব্যাপক লোকসান হচ্ছে। আর এ রকম দাম থাকলে কৃষকের সর্বনাশ।
এদিকে উত্তরবঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ পাবনার সুজানগর উপজেলায় উৎপাদন হলেও এই পেঁয়াজ সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রাফিউল ইসলাম জানান, এই উপজেলার বৃহত্তর গাজনার বিলে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়ে থাকে এবং এই পেঁয়াজের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ কেনার জন্য এখানে এসে থাকেন। উৎপাদন খরচ বেশি হওয়া সত্বেও এবারে পেঁয়াজ চাষে বেশি আগ্রহী ছিলেন কৃষকেরা। ফলে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে।
সুত্রঃ যুগান্তর