পেঁয়াজ চাষে ২৫ কোটি টাকা প্রণোদনাপেঁয়াজ চাষে ২৫ কোটি টাকা প্রণোদনা

নিউজ ডেস্কঃ
উৎপাদন বাড়াতে পেঁয়াজ চাষিদের বীজ কিনে দেবে সরকার। আগামী মৌসুমে চাষের জন্য ২৫ কোটি টাকার বীজ সরবরাহ করা হবে। গতকাল সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয় পেঁয়াজ চাষিদের প্রণোদনা হিসেবে বীজ কিনে দেওয়ার জন্য এই অর্থ অনুমোদন করেছে। শিগগিরই কৃষি মন্ত্রণালয় চাষিদের কাছে বীজ পৌঁছে দেবে। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে কৃষি সচিব মেজবাহুল ইসলাম সমকালকে বলেন, চাষিদের প্রণোদনা হিসেবে পেঁয়াজের বীজ কিনে দেওয়া হবে। এজন্য অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আগামী মৌসুম শুরুর আগেই বীজ সংগ্রহ করে চাষিদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।

সংশ্নিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগামী চার বছরে পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্য নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এজন্য এ বছরই ১২ হাজার ১২ হেক্টর জমিতে চাষ বাড়ানো হচ্ছে। আগামী মৌসুমে দুই লাখ ৫০ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ করা হবে। পর্যায়ক্রমে চাষ আরও বাড়ানো হবে। চেষ্টা রয়েছে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর। বর্তমানে প্রতি হেক্টরে ১০ দশমিক ৭৯ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। আগামী মৌসুমে এই পরিমাণ বাড়িয়ে ১১ টন করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে আগামী মৌসুম থেকে ২৯ লাখ পাঁচ হাজার ৫৪০ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে বলে আশা করছে মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া চাষিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ও উন্নত দেশের পেঁয়াজ কাটা ও সংগ্রহ পদ্ধতির ভিডিও দেখিয়ে দক্ষতা বাড়ানো হবে। যাতে সংগ্রহকালীন সময়ে পচে ও শুকিয়ে নষ্ট হওয়ার পরিমাণ কমবে। এ ছাড়া গ্রীষ্ফ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের উদ্যোগ রয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের।

মন্ত্রণালয় আগামী গ্রীষ্ফ্মে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে এ ধরনের পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্য নিয়েছে। তবে গ্রীষ্ফ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের জন্য প্রয়োজনীয় বীজ মন্ত্রণালয়ের হাতে নেই। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মেহেরপুর জেলা থেকে মাত্র এক টন বীজ পাওয়ার আশা করছে। এই বীজ পাওয়া গেলে ২৫০ থেকে ৩০০ হেক্টর জমিতে রোপণ করা যাবে। তবে মন্ত্রণালয়ের চেষ্টা রয়েছে, ভারতের রাজস্থান থেকে এ জাতীয় বীজ আমদানি করার। উল্লেখ্য, প্রতি হেক্টর জমিতে চাষের জন্য সাড়ে সাত কেজি থেকে সর্বোচ্চ ১০ কেজি পর্যন্ত বীজ লাগে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হাসানুজ্জামান কল্লোল সমকালকে বলেন, এর আগে কৃষকদের বীজ দেওয়া হয়নি। এখন যেহেতু সরকার পেঁয়াজ চাষে উৎসাহিত করছে, সেজন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সার দেওয়ারও উদ্যোগ রয়েছে।

সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, বাড়তি চাষ, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, নষ্ট থেকে বাঁচানোর মাধ্যমে দুই লাখ ১০ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়বে। আর গ্রীষ্ফ্মকালীন চাষ ঠিকভাবে করা গেলে আরও ৪২ হাজার টন উৎপাদন হবে।

গত দুই বছর আমদানি নির্ভরতার কারণে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা দেখা যায়। দেশের চাহিদা মেটাতে বছরে প্রায় ১০ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। যার সিংহভাগ আসে পার্শ্ববর্তী ভারত থেকে। দু’বছর ধরে দেশটি অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের রপ্তানি বছরের একটি সময় বন্ধ রাখছে।
এতে বাংলাদেশের বাজারে সরবরাহ কমে দাম বেড়ে যাচ্ছে।

মিয়ানমার, চীন, পাকিস্তান, মিসর, তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেও বাজার সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। গত বছর পেঁয়াজের দাম ৩০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। এ বছর ভারত রপ্তানি বন্ধের পরপরই ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।

পরে অভ্যন্তরীণ সরবরাহ বাড়ানোর মাধ্যমে দাম কিছুটা কমলেও এখনও ৬৫ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ রকম পরিস্থিতিতে সরকার এ পণ্যটিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করার উদ্যোগ নিয়েছে।
সুত্রঃ সমকাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *