গৌতম চন্দ্র বর্মন,ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ পোঁকামাকড় ও রোগবালাই থেকে ফসলকে রক্ষা করা, কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে আনা ও পরিবেশ সম্মতভাবে ফসল উৎপাদন পেতে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পাচিং পদ্ধতি।
উপজেলার ২২ টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক কৃষকের আমন ক্ষেতে ‘ডাল পোতা (পাচিং পদ্ধতি) কার্যক্রমকে উৎসাহিত করতে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সার্বিক সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। ক্ষতিকারক পোঁকার আক্রমণ থেকে আমন ক্ষেত রক্ষায় এ পদ্ধতি একটি কৃষি বান্ধব প্রযুক্তি। সাধারণত ‘লাইভ পাচিং’ ও ‘ডেথ পাচিং’ নামের দুই ধরনের পাচিং পদ্ধতি ব্যবহার হয়ে থাকে। কৃষকরা এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের অধিক ফলন পেয়ে থাকে। এছাড়া জমিতে কীটনাশক খরচ কম ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পায়।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামগঞ্জের কৃষকদের সবুজ ধান ক্ষেত বাতাসে দোল খাচ্ছে। ক্ষেতের মধ্যে একর প্রতি ১০ থেকে ১২ টি বাঁশের কঞ্চি কিংবা গাছের ডাল পোঁতা রয়েছে। ওই পাচিংয়ে (খুঁটিতে) ফিঙ্গে, শালিক, দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বসছে। সুযোগ বুঝে ধানক্ষেতে থাকা ক্ষতিকর পোঁকা মাকর পাখিরা খেয়ে ফেলছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলার প্রায় ৩শ ৫৬ হেক্টর
হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। রোপনকৃত ওইসব ক্ষেতে ক্ষতিকর ঘাঁসফড়িং, পাতা মোড়ানো পোঁকা, চুঙ্গি ও মাজরা পোঁকার আক্রমণ দেখা দেয়। তাই এ সকল পোঁকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় বর্তমানে উপজেলায় প্রায় ৬০ ভাগ কৃষক পাচিং ও আলোক ফাঁদ পদ্ধতি ব্যবহার করে সুফল পাচ্ছেন। এ বিষয়ে একাধিক কৃষক জানান, পাচিং পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে অনেকটা কীটনাশকের ব্যবহার কমে গেছে। তাই এ পদ্ধতিটি আমাদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
এ নিয়ে উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের কৃষক আকালহ বলেন, এ বছর আমি আমার ধান ক্ষেতে পাচিং পদ্ধতির ব্যবহার করেছি। এতে খরচ নেই।
উপজেলার রুহিয়া থানা ঘুরন গাছ এলাকার কৃষক আরসাব আলী বলেন, উৎসবের মধ্য দিয়ে আমার এক একর জমির ফসলের ক্ষেতে ১০টি গাছের মরা ডাল পুঁতেছি। কয়েকদিন ধরে ক্ষেতে গিয়ে দেখি ডালে পাখি বসে আছে, আর উড়ে উড়ে পোঁকামাকড় খাচ্ছে। এ দৃশ্য দেখতে আমার ভালো লেগেছে। এটা যদিও আগেও দেখিছি তারপরেও এবার আরও ভালো লেগেছে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষ্ণ রায় জানান, ধানক্ষেতে গাছের ডাল পুঁতে রাখলে পাখিরা ওই ডালে বসে পোঁকামাকড় খেয়ে ফেলে। ফলে ওই জমিতে কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। পরিবেশ সম্মতভাবে ফসল উৎপাদন করা যায়।
তিনি বলেন, কৃষকরা অনেক আগে থেকেই ফসলের ক্ষেতে গাছের ডাল পুঁতে রাখত। বর্তমান কৃষি বিজ্ঞানিরা গবেষণা করে পোঁকামাকড় থেকে ফসল রক্ষার জন্য ক্ষেতে ডাল পুঁতা পদ্ধতি নতুনভাবে আবিস্কার করেছেন। কৃষি বিভাগ এ মৌসুমে সদর উপজেলার কৃষকদের মাঝে এ পদ্ধতি ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলী হোসেন
বলেন, ‘উপজেলার প্রায় সকল এলাকায় কৃষকদের পাচিং পদ্ধতির আওতায় আনার জন্য কাজ করছি। পাচিং পদ্ধতি কৃষকের কৃষি ও পরিবেশ বান্ধব একটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতিটি কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কোন খরচ ছাড়াই এ পদ্ধতি ব্যবহার করে ক্ষেতে পোঁকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করতে পারবে কৃষকরা।
তিনি বলেন,ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায়
৩৫ হাজার ৮ শ ৪০ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।আমাদের কার্যালয় থেকে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা গ্রামে গ্রামে গিয়ে উৎসব করে ফসলের কৃসকদের নিয়ে ক্ষেতে ডালপালা পুঁতার ব্যবস্থা করেছেন। তিনি নিজেও এ কার্যক্রমের তদারকি করছেন জানিয়ে বলেন, ক্ষেতে ডালপালা পুঁতে রাখলে কী উপকার হবে; এনিয়ে সরেজমিন গিয়ে কৃষককে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ বছর এর সুফল পেলে কৃষক প্রতিবছর নিজের উৎসাহে ফসলের ক্ষেতে ডাল পুঁতে রাখবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।