প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্ধেক দামে মিলবে কৃষি যন্ত্রপাতিপ্রকল্প বাস্তবায়নে অর্ধেক দামে মিলবে কৃষি যন্ত্রপাতি

নিউজ ডেস্কঃ
কৃষিতে যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি, ফসল সংগ্রহোত্তর অপচয় হ্রাস, শস্যের নিবিড়তা বাড়ছে। তাই দেশের কৃষিব্যবস্থায় যান্ত্রিকীকরণ প্রক্রিয়ায় জোর দিচ্ছে সরকার। নিয়েছে তিন হাজার ২০ কোটি ছয় লাখ টাকার বড় প্রকল্প। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে অর্ধেক দামে মিলবে কৃষি যন্ত্রপাতি।

যন্ত্রপাতি কীভাবে স্থানীয়ভাবে তৈরি করা বা সংযোজন করা যায় তা নিয়ে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির সঙ্গে ইতিমধ্যে আলোচনা করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক।

‘সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ প্রকল্পটির উদ্যোগ কৃষি মন্ত্রণালয়ের আর বাস্তবায়ন করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)। সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) এই প্রকল্পটি অনুমোদন হয়েছে। এ প্রকল্পের সব টাকাই সরকারে নিজস্ব তহবিল থেকে দেয়া হবে। প্রকল্পের আওতায় সারাদেশের কৃষকদের কৃষি যন্ত্রপাতি কেনায় অঞ্চলভেদে ৫০-৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি দেবে সরকার। ৫১ হাজার ৩০০টি বিভিন্ন প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি বিতরণ করা হবে।

বৃহস্পতিবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ বিষয়ে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময় করেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক। সভাটি সঞ্চালনা করেন কৃষিসচিব মো. নাসিরুজ্জামান। এসময় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল, অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা) কমলারঞ্জন দাশ, বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. ইকবাল আখতার মিয়া, পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলামসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সংস্থার ঊর্ধ্বতন কৃষি প্রকৌশলীরা উপস্থিত ছিলেন।

স্থানীয়ভাবে কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরিতে গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষককে কৃষিকাজ করে লাভবান হতে হলে কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করতে হবে। যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে উৎপাদন খরচ কমাতে হবে। স্বল্প সময়ে স্বল্প জমিতে অধিক ফসল ফলাতে হবে। একই সাথে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের অপচয় রোধ করতে হবে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই সরকার কৃষির যান্ত্রিকীকরণে সম্প্রতি তিন হাজার ২০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হলে কৃষিক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আসবে। এদেশের কৃষি উন্নত দেশের কৃষির মতো আধুনিক যন্ত্রনির্ভর হবে। কৃষিতে বহুমুখী ফসল উৎপাদন হবে। কৃষিপণ্য রপ্তানির মাধ্যমে কৃষক ও দেশ লাভবান হবে।

মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী স্থানীয়ভাবে কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরিতে গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে পারে। এদেশের উপযোগী কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরি ও বিদেশ থেকে আনা যন্ত্রপাতিকেও এদেশের উপযোগী করতে পারে। তাতে কৃষকেরা যেমন কম দামে কৃষি যন্ত্রপাতি পাবে, তেমনি অন্যদিকে স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে ও বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।

সভা সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী এসব যন্ত্রপাতি কীভাবে স্থানীয়ভাবে তৈরি করা বা সংযোজন করা যায় তা নিয়ে সভায় বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির সাথে আলোচনা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও আলোচনার মাধ্যমে এ ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণ করা হবে। এসময় বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরিতে তাদের সক্ষমতা তুলে ধরে।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, সরকারের এখন মূল লক্ষ্য হলো টেকসই কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষিকে অধিক লাভজনক, আধুনিকীকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণ করা। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও কৃষির বহুমুখীকরণের মাধ্যমেই তা করা সম্ভব। সে লক্ষ্যেই সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রায় তিন হাজার ২০ কোটি টাকার ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৫২ হাজার কৃষি যন্ত্রপাতি কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করা হবে। এসব যন্ত্রপাতির মধ্যে কম্বাইন হারভেস্টার, রিপার, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, সিডার, পাওয়ার থ্রেসার, মেইজ শেলার, ড্রায়ার, পাওয়ার স্প্রেয়ার, পটেটো ডিগার প্রভৃতি রয়েছে।

চলতি মাস (জুলাই) থেকে শুরু হয়ে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়ছে। এটি বাস্তবায়িত হলে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও ব্যবহার বাড়িয়ে ফসলের ১০-১৫ শতাংশ অপচয় রোধ করা যাবে। এছাড়া চাষাবাদে ৫০ শতাংশ সময় এবং ২০ শতাংশ অর্থ সাশ্রয় করা যাবে। পাশাপাশি সমন্বিত সবজি জাতীয় ফসল আবাদ করে কৃষি যন্ত্রপাতির ৫০ শতাংশ কর্মদক্ষতা বাড়ানো যাবে বলে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে।

প্রকল্পটির আওতায় আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির সরবরাহ ও ব্যবহার বৃদ্ধি করে ফসলের অপচয় রোধ, চাষাবাদে সময় এবং অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে কৃষিকে ব্যবসায়িকভাবে অধিক লাভজনক ও বাণিজ্যিকভাবে টেকসই করে ফসল উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব বলে প্রকল্প সূত্র জানা গেছে।

প্রকল্পটি অনুমোদনের পরে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের বিকল্প নেই। আমাদের এগিয়ে যেতে হলে কৃষিকে আধুনিক করতে হবে। উৎপাদন খরচ কমিয়ে উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ হিসেবে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে।’

সুত্রঃ ঢাকাটাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *