ফরিদপুরে ১৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্টফরিদপুরে ১৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট

নিউজ ডেস্কঃ

বন্যায় ফরিদপুরে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। এতে ৬৩ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে স্থানীয় হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি। ধান, পাট, সবজি ও রবি শস্যার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।

সরেজমিনে জেলার কয়েকটি ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, প্রথম দফার বন্যায় তলিয়ে যায় জেলার নিন্মাঞ্চল। সে সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাদাম, ভুট্টাসহ বিভিন্ন রবি শস্য। এর পরে দ্বিতীয় দফায় পানি বাড়লে নষ্ট হয় পাকা ধান, সবজি ক্ষেত, কলা বাগান ও পাট। কয়েকদিনের মধ্যেই ধান ও পাট কাটার কথা ছিল কৃষকদের। কিন্তু দ্রুত গতিতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ধান ও পাট কেটে ঘরে তোলার সুযোগ হয়নি তাদের।

শহরতলীর মোস্তফাডাঙ্গী গ্রামের কৃষক আফজাল জানান, তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন তিনি। দেড় বিঘারমতো কাটতে পেরেছেন, বাকিটা পানিতে তলিয়ে গেছে। তিনি জানান, এই এলাকার বেশিরভাগ কৃষক পাট পুরোটা কাটতে পারেননি।

পানিতে নষ্ট কলাবাগানসরকারি হিসাবে পাট ক্ষেতের ক্ষতির তথ্য উল্লেখ না থাকলেও কৃষকরা জানিয়েছে, বেশিরভাগ কৃষকের পাট ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তারা কাটতে পারেননি। আর এতদিন পানিতে ডুবে থাকায় ওই পাট আর কোনও কাজে আসবে না।

জেলা সদর উপজেলার অম্বিকাপুর এলাকার কৃষক বক্কার খান বলেন, ‘প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে কম-বেশি ক্ষতি হয়, কিন্তু এবারের ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। আমার ২০ বিঘা আমন, দুই একর পাট ক্ষেত গত ২০ দিন ধরে পানির নিচে। এই ক্ষেত থেকে ফসল পাওয়ার কোনও আশা নেই।’

একইভাবে বন্যার পানিতে ক্ষতির কথা জানালেন নর্থচ্যানেল এলাকার চাষি হাফিজুর। তিনি বলেন, ‘৬ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছিলাম। একদিনে দেড় হাত পানি বৃদ্ধি পেয়ে সব তলিয়ে গেছে। এই ধান তুলতে পারলে পুরো বছর নিজেদের খাবারের সঙ্গে গবাদিপশুর খাবারের ব্যবস্থাও হয়ে যেত।’

পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত সবজি ক্ষেতসদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুস্তাকুজ্জামান ও ডিক্রিরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিন্টু জানান, তাদের ইউনিয়নের প্রায় পুরোটাই বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। নষ্ট হয়েছে সব ধরনের কৃষি ক্ষেত। ব্যাপক ক্ষতির মুখে কৃষি প্রধান এই অঞ্চলের পরিবারগুলো।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. মো. হযরত আলী জানান, জেলায় আউশ, রোপা আমন, রিলে আমন, বীজতলা ও সবসিক্ষেতসহ ১৪ হাজার ৬শ’ ৫৮ হেক্টর জমির ফসল পানির তলিয়ে নষ্ট হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার ৬৩ হাজার ৪২৫ জন কৃষক।’ এর বাইরে চরাঞ্চলের কলা বাগানসমূহের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।

কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকা করে সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয়েছে। সরকারিভাবে সহযোগিতা এলে তাদের দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের প্রণোদনা হিসেবে ধান ও কালাই বীজ, ধানের চারা, সার দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
সুত্রঃবাংলা ট্রিবিউন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *