কুয়াশাঢাকা শীতের ভোরে মাঠ থেকে মুড়িকাটা পেঁয়াজ তুলেই হাটে ছুটছেন চাষিরা। এরপর বেশ কিছু সময় ধরে চলে কৃষক-ব্যাপারীর দর-কষাকষি, ওজন করা, কুলি হাঁকাহাঁকি। সব শেষে নিরাশ মনে বাড়ি ফিরছেন পেঁয়াজচাষিরা।
এ বছর আগাম পেঁয়াজের ফলন ভালো হলেও আশা অনুযায়ী দাম পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তাদের।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে পাবনায় ৮ হাজার ৪০৫ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় প্রতি বিঘায় ৫০ থেকে ৬০ মণ ফলন পেয়েছেন চাষিরা। গত বছর উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১ দশমিক ১১ লাখ টন পেঁয়াজ।
সুজানগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাফিউল ইসলাম জানান, অক্টোবর-নভেম্বরে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ হয়। এই পেঁয়াজ বাজারে আসে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে। চারা পেঁয়াজ ওঠার আগ পর্যন্ত মুড়িকাটাই মানুষের চাহিদা মেটায়। এ বছর জেলায় পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ দশমিক ১১ লাখ টন।
রাফিউল বলেন, ‘৮০ শতাংশ জমির পেঁয়াজ তোলা হয়েছে। এতে ফলন পাওয়া গেছে ১ দশমিক ১০ লাখ টন। এখনও মাঠে যে পরিমাণ পেঁয়াজ আছে তাতে লক্ষ্যমাত্রা পেরিয়ে যাবে।’
চাষিরা বলছেন, উৎপাদন খরচের তুলনায় বাজারে পেঁয়াজের দাম কম। প্রথমদিকে মণপ্রতি ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা পাওয়া গেলেও সরবরাহ বাড়ায় দাম কমে গেছে।
দেশের অন্যতম বড় পেঁয়াজের হাট পাবনার সুজানগরে গিয়ে দেখা যায়, ৮০০ থেকে ১১০০ টাকায় পেঁয়াজ কেনাবেচা হচ্ছে। ১০ দিন আগেও এর দাম ছিল কয়েক শ টাকা বেশি। এই বাজার থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পেঁয়াজ যাচ্ছে।
সুজানগরের মানিকহাট গ্রামের জুয়েল খাঁ বলেন, ‘আমাদের প্রতি মণে খরচ হইছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। গত বছর দাম পাওয়া গেছে ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকা। এই পেঁয়াজ ঘরে রাখা যায় না। তাই দাম না পেলেও বেঁচে দিতে হচ্ছ।’
পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন জানান, বাজারে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। বড় পাইকারদের কাছে এখনও আমদানি করা পেঁয়াজের মজুত আছে। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি হওয়ায় দাম কম।
আফজাল বলেন, ‘কৃষকের স্বার্থে এই মৌসুমে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে সরকারের উচিত উৎপাদন খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দাম নির্ধারণ করে দেয়া।’
তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মিজানুর বলেন, ‘পেঁয়াজের এই দামেও কৃষকদের লোকসান হবে না। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় ও কৃষকদের সক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় তারা লাভবানই হবেন।’
সুত্রঃ nb news