নিউজ ডেস্কঃ
গতানুগতিক আমন ও ব্রি-৯৫ জাতের অন্যান্য ধানের চেয়ে অধিক ফলনশীল আগাম জাতের ব্রি ৯৫ ধানের চাষে কৃষকের ভাগ্য বদলে দিতে পারে। এতে করে কৃষকের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হওয়ার সাথে সাথে দেশের কৃষি নির্ভর অর্থনীতিকে করতে পারে শক্তিশালী।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট গাজীপুরের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত ব্রি ৯৫ জাত ধানের ফলন ও বৈশিষ্ট্য দেখে অন্যান্য স্থানের মত ফেনীতে কৃষকদের মাঝেও এই ধান চাষে ধীরে ধীরে আগ্রহ বেড়ে চলেছে। আর এর জন্য নিরলসভাবে কাজ করছেন ফেনী সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তারের নেতৃত্বে সদর কৃষি অফিসের সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ উপ-সহকারীগণ।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ব্রি ৯৫ ধানের সাথে অন্যান্য জাতের ধানের পার্থক্য হলো ওইসব ধানের যেখানে রোপন শুরু থেকে কর্তনের সময় লাগে ১৪০ থেকে ১৫০ দিন সেখানে এই ধানের লাগে মাত্র ১২০ দিন। এর ফলে অন্য ধানের চেয়ে প্রায় এক মাস আগেই এই ধান কেটে কৃষকের উক্ত জমিতে সহজেই শীতকালীন ফসল আলু, সরিষা, মাষকালাইসহ অন্যান্য কৃষি পণ্য আবাদ করে অধিক লাভবান হতে পারবে। ব্রি ৯৫ ধান গাছের উচ্চতা চার ফুট শক্ত কান্ড বা ডাঁটা হয়ে থাকে।
ফলে বাতাসে সহজে হেলে পড়ে না। রোগ বালাইও কম। শতকরা ২০ ভাগ কম সারে এই ধান চাষ করা হয়। সোনালী রংয়ের ধান হয় মাঝারি চিকন। এই জাতের ধানের চালের ভাত হয় হালকা সুগন্ধীযুক্ত।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল করিম জানান, প্রতি বিঘাতে ব্রি ৯৫ ধান ১৮ থেকে ২০ মণ হয়ে থাকে। ২১ থেকে ২৬ দিন বয়সী চারা দিয়ে রোপন করা যায়। এছাড়া আগাম জাতের ধান হওয়াতে এ সময় সাধারণ গো-খাদ্য কম সংকট দেখা দেওয়ায় কৃষকেরা এই ধানের খড় বিক্রয় করে প্রচুর লাভবান হতে পারে।
সদর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার ফেনী পৌর এলাকার বিরিঞ্চিতে ব্রি ৯৫ ধানের কৃষক মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ফেনী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. তোফায়েল আহম্মদ চৌধুরী।
বক্তব্য রাখেন- পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর ডেপুটি ম্যানেজার আবদুল মান্নান, সম্প্রসারণ ও প্রশিক্ষণ বিশেষজ্ঞ রবীন্দ্র কুমার মজুমদার, ডিএই ফেনীর অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. আবু তাহের, সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আহসান হাবীব প্রমুখ। মাঠ দিবসের অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সদর উপজেলা উদ্ভিদ ও সংরক্ষণ কর্মকর্তা মতিউর রহমান। এসময় শতাধিক কৃষক-কৃষাণী উপস্থিত ছিলেন।
প্রদর্শনী প্লটের চাষী মাঈন উদ্দিন আহমদ কামরান, এই ধানের তেমন রোগ-বালাই নেই। উৎপাদন খরচ কম হয়েছে। তবে আগাম জাতের হওয়ার কারণে জমিতে গান্ধী পোকা ও ইঁদুরের কিছুটা উপদ্রপ হতে পারে। তার মতে এ জাতের ধান চাষ ব্যাপক করা হলে দেশের কৃষি অর্থনীতি বদলে যেতে পারে। বদলে যেতে পারে কৃষকের ভাগ্যও।
কৃষিবিদ মো. তোফায়েল আহম্মদ চৌধুরী বলেন, আগাম জাতের ধানের প্রদর্শনীটি চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে এই প্রথম আবাদ করা হয়েছে। এটি দেখে জেলার কৃষকদের মাঝে ধীরে ধীরে ব্রি ৯৫ ধান চাষের আগ্রহ বাড়ছে। আগামী বছরে এই ধান চাষ আরো বাড়বে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন ফসলের নিবিড়তা বাড়াতে হলে স্বল্প জীবনকালের ব্রি ৯৫ জাতের ধান চাষ করে ওই জমিতে সরিষা আবাদের পর বোরো আবাদ ও আউশ ধান আবাদ করে বছরে চারটি ফসল আবাদ করা সম্ভব।
সুত্রঃ পূর্বপশ্চিমবিডি