আতিকুর হাসান সজীব, আদমদিঘী (বগুড়া) প্রতিনিধি:
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা সদর ও সান্তাহারে সজনের প্রতিবারের মতো এবারও বাম্পার ফলন হয়েছে।
আবহাওয়া এবং প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ এবার না হওয়াই গত কয়েক বছরের চেয়ে সজনে বেশি উৎপাদন বেশি হয়েছে। এবার উপজেলা সদর ও সান্তাহার পৌর শহর এবং এর আশপাশের গ্রামগুলোর গাছে গাছে প্রচুর পরিমানে সজনে উৎপাদন হয়েছে।
স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে সজনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মুখোরচক ও পুষ্টিগুণে ভরপুর এ সজনে স্থানীয়ভাবে বিক্রির পাশাপাশি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় রপ্তানি করা হয়।
বাজারে অন্যান্য সবজির চেয়ে সজনের দাম বেশি। তবে এবার বাম্পার ফলনে এর ফলের গতবারের চেয়ে দাম একটু কমেছে । সান্তাহারে থেকে সজনের পাইকারিতে ১২০০ টাকা মণে বিক্রয় হচ্ছে যা রপ্তানি হচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সান্তাহার স্টেশনে রানীনগর বালুঘড়া এলাকার সজনে ব্যবসায়ী আব্দুল কালাম বলেন অনান্য এলাকার থেকে সান্তাহারে সজনে চাষ বেশি হয়, আমি সান্তাহার থেকে পাইকারি দরে সজনে ক্রয় করে ঢাকাতে নিয়ে গিয়ে বিক্রয় করি এই এলাকার সজনে পুরো বাংলাদেশের মধ্যে বিক্ষাত।
সজনে প্রধানত দুই প্রজাতির। এর মধ্যে এক প্রজাতির সজনে বছরে তিন থেকে চার বার পাওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে এর নাম রাইখজ্ঞন। সজনে গাছ যেকোনো পতিত জমি, পুকুর পাড়, রাস্তার বা বাঁধের ধারে আঙ্গিনা এমনকি শহর বন্দরের যেকোনো ফাঁকা জায়গায় লাগানো যায়। এর কোনো বীজ বা চারার প্রয়োজন হয় না। গাছের ডাল কেটে মাটিতে পুতে রাখলেই সজনে গাছ জম্মায়। সজনে গাছের কোন পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না।
অযত্নে অবহেলায় প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠে এর গাছ। বড়-মাঝারি ধরনের একটি গাছে ছয় থেকে আট মণ পর্যন্ত সজনে পাওয়া যায়। বিনা খরচে অধিক আয় হওয়ায় অনেকেই ব্যাণিজ্যিকভাবে সজনে চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বিশেষ করে আদমদীঘি উপজেলার মাটি, পানি ও আবহাওয়া সজনে চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় এই উপজেলা সদর ও সান্তাহার পৌর শহর ও এর আশেপাশের সবখানেই প্রচুর সজনে গাছ আছে। এইসব গাছ থেকে প্রতিবছর হাজার হাজার টন সজনে উৎপাদন হয়
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিঠু চন্দ্র অধিকারী জানান, এই উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া সজনে চাষে উপযোগী। এখানে ব্যাণিজ্যিকভাবে সজনে চাষ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। ফলে অনেকে আম, জাম, কাঠাল, লিচু বাগানের মত এখন সজনের বাগান করতে শুরু করেছেন।
প্রসঙ্গত, অন্যান্য সবজির চেয়ে সজনে ডাটা পুষ্টিগুণ ও স্বাদে বেশি হওয়ায় যে কোনো বয়সের মানুষ সজনে খেতে ভালবাসেন। চিকিৎসকদের মতে, সজনেতে ক্যালসিয়াম, খনিজ লবণ আয়রণসহ প্রটিন ও শর্করা রয়েছে।
এছাড়া ভিটামিন এ, বি, সি সমৃদ্ধ সজনে মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। শরীরের পুষ্টির জন্য গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের ও বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে বলে সজনে ডাটা ওষুধী হিসেবেও ব্যাপক সমৃদ্ধ। এছাড়া সজনে গাছের ছাল এবং পাতা রক্তামাশায় পেটের পিরা ও উর্চ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।