নিউজ ডেস্কঃ
চলতি মৌসুমের বন্যায় আউশ ধানের ‘ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির’ পর আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। তবে অবস্থা খুব খারাপ না হলে আমনের ক্ষতি এড়ানো যাবে বলে আশা করছেন তিনি।
মঙ্গলবার রাতে আওয়ামী লীগের আয়োজনে নিয়মিত ওয়েবনিয়ার ‘বিয়ন্ড দ্য প্যানডেমিক’-এর ১২তম পর্ব ‘করোনা সংকটকালে কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা’ শীর্ষক আলোচনায় যোগ দিয়ে তিনি এ বিষয়ে নিজেদের প্রস্তুতির কথা তুলে ধরেন।
বন্যা পরিস্থিতিতে কৃষির সংকট নিয়ে মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “এ বছর আউশের টার্গেট ছিল ৩৬ লাখ টন। আউশ মাঠে আছে, ঝুঁকির মুখে। ১৩০০ হেক্টর জমির আউশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমনের উৎপাদন ১ কোটি ৫০-৬০ লাখ টন ধরে রেখেছিলাম। কিন্তু সে আমনও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আগাম বন্যা এসে বীজতলা নষ্ট করে দিয়েছে। দেরিতে বন্যা এসেও আমাদের ফসল নষ্ট করছে।”
কৃষিমন্ত্রী জানান, প্রথম পর্যায়ে ২৫ জুন থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত অতিবৃষ্টি, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে বন্যায় রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, সিলেট, সুনামগঞ্জ, জামালপুর, নেত্রকোণা, রাজশাহী, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল জেলাসহ ১৪টি জেলায় ১১টি ফসলের প্রায় ৭৬ হাজার ২১০ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এর মধ্যে ৪১ হাজার ৯১৮ হেক্টর জমি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অঙ্কে এ ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩৪৯ কোটি টাকা। মোট ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৩ লাখ ৪৪ হাজার জন।
বন্যা পরিস্থিতিতে কৃষির প্রস্তুতি নিয়ে তিনি বলেন, “আমরা যদি ১৫ অগাস্ট পর্যন্ত ধান লাগাতে পারি, ধানের উৎপাদন কমবে না। কমিউনিটি লেভেলে চাষীদের নিয়ে আমরা উঁচু জায়গায় বীজতলা করিয়েছি। পর্যাপ্ত বীজ আমরা রেখেছি।
“যদি বীজতলা নষ্ট হয় তাহলে আমরা আবার লাগাব। আমরা যদি অগাস্টের ১ তারিখে নতুন বীজতলা করি তাহলে ১৫ -২০ দিনের মধ্যে ধানের উৎপাদন তেমন কমবে না। এটি মোটামুটি প্রস্ততি।”
এ বছর রবি শস্যের মৌসুমকে সামনে রেখে সরিষা, গম, আলু, ভুট্টা ও দেশীয় শাক-সবজির বিদেশি হাইব্রিড বীজও আমদানি করা হয়েছে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী।
পেঁয়াজ, গম, আখ, ডালে আমদানি নির্ভরতা কমাতে নতুন উচ্চ ফলনশীল জাত নিয়ে বাংলাদেশি কৃষি বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন বলে জানান আব্দুর রাজ্জাক।
“বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন দেশের আবহাওয়া বিবেচনা করে ভালো জাত নিয়ে আসতে। দেশে উৎপাদন করতে পারলে আমদানি অনেকাংশে কমিয়ে নিয়ে আসব। আস্তে আস্তে অন্যান্য ফসলেও স্বয়ংসম্পূর্ণ হব।”
আলোচনায় যুক্ত হয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ইমিরেটাস অধ্যাপক এম এ সাত্তার মণ্ডল গুরুত্ব দেন কৃষি বিপণন ব্যবস্থার উপরে।
তিনি বলেন, “আমাদের কৃষির বড় চ্যালেঞ্জ হল, উৎপাদনশীল ও লাভজনক কৃষি ব্যবস্থা বজায় রাখা। কৃষি পণ্যের মূল্যকে অবশ্যই উচ্চ পর্যায়ে রাখতে হবে। অনেকে বলতে পারেন, এটা কী বলছেন! কৃষকদের কোনোভাবেই যেন আমরা প্যারালাইজড না করি, তাই লাভজনক রাখতে হবে এভাবে।”
খাদ্য শস্যের অভ্যন্তরীণ মজুদের হিসাব নিয়ে পরে খাদ্য আমদানি করা উচিৎ বলেও পরামর্শ দেন তিনি।
মহামারীকালে কৃষি ব্যবস্থার পরিবর্তন নিয়ে অধ্যাপক সাত্তার মণ্ডল বলেন, “আমাদের উৎপাদন ব্যবস্থাতে একটা লক্ষণীয় পরিবর্তন এসেছে। ব্যক্তি পর্যায় থেকে একটা সার্ভিস প্রোভাইডার বা বাজার নেতৃত্বাধীন একটি উৎপাদন ব্যবস্থা কিন্তু ধীরে ধীরে বাংলাদেশে এসেছে।
“এটি একটা গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়, যা কি না বাণিজ্যিক কৃষির সঙ্গে অত্যন্ত সঙ্গতিপূর্ণ। এতে দেখা যাচ্ছে, পেশাজীবী, শিক্ষিত সাপ্লায়ারসরাও গ্রামের হাট-বাজারের চিরায়ত চেইনের মধ্যে ঢুকে গেছে। তারা তাদের জ্ঞানবুদ্ধি দিয়ে, পুঁজি দিয়ে এখানে একটি নতুন একটি সাপ্লাই চেইন বা ভ্যালু চেইন এগুলো তৈরি করার চেষ্টা করছে। এটা শুধু ফসল সম্পদ নয়, এটা প্রাণিসম্পদ, মৎস্য, দুগ্ধ সবকিছুতে দেখা যাচ্ছে।”
কৃষি বিপণন ব্যবস্থাপনায় জেনেটিক্যালি মডিফাইড ফুড হাইব্রিড, টিস্যু কালচার, গ্রিন হাউজ- ক্রমেই ‘গুরুত্বপূর্ণ বিষয়’ হয়ে উঠছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা বাড়ালে দেশের কৃষি বাজার আরও সম্প্রসারিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন অধ্যাপক সাত্তার মণ্ডল।
আলোচনায় যুক্ত হয়ে বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান দেশের মৎস্য সম্পদের বিস্তৃতিতে করণীয় সম্পর্কে আলোকপাত করেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক লুৎফুল হাসান ও আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী এ আলোচনায় যুক্ত হয়েছিলেন।
পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী শাহ আলী ফরহাদ।
সুত্রঃ বিডি নিউজ ২৪