বন্যায় মিলবে ভাসমান ঘাস: সিকৃবি শিক্ষকদের গবেষণাবন্যায় মিলবে ভাসমান ঘাস: সিকৃবি শিক্ষকদের গবেষণা

নিউজ ডেস্কঃ
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সিলেট বিভাগ। সিলেট বিভাগের মাটি এবং আবহাওয়া অন্য অঞ্চল থেকে একটু ভিন্ন।
এখানে যেমন রয়েছে পাহাড়-টিলা তেমনি রয়েছে হাওর-বাওর সহ নিচু জলাভূমি। এই আবহাওয়ার কারণে এখানে গবাদিপশু পালন করা অন্য অঞ্চলের তুলনায় একটু কঠিন। এখানে বছরে দুই থেকে ছয় মাস পানির নিচে ডুবে থাকে। সেসময় গবাদি পশুকে খাওয়ানোর জন্য কোন ঘাস পাওয়া যায় না। যদিও কোন কোন কৃষক হাওড় থেকে কিছু ঘাস কেটে নিয়ে আসেন যার পুষ্টিমান অনেক কম এবং পানির মধ্যে থেকে আনার কারণে এসব ঘাসের মধ্যে থাকে কৃমির ডিম। যা খেয়ে গবাদিপশু কৃমিতে আক্রান্ত হয়। এ কারণে সিলেট বিভাগে বিশেষ করে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় গাভী ও ষাঁড়ের আকৃতি অনেক ছোট হয়ে থাকে এবং দুধ উৎপাদন ও অনেক কম হয়।

অন্যদিকে এসব এলাকার মাটিতে ভালো থাকায় শীতকালে মাটি শুকিয়ে যায় এবং এই শুষ্ক মাটিতে ঘাস উৎপাদন হয় না।

এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন ও বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড কেমেস্ট্রি বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মেহেদী হাসান খান এবং ভেটেরিনারি এনিম্যাল এন্ড বায়োমেডিকেল সাইন্স অনুষদের প্রফেসর ড. মো. জসিম উদ্দিন পানিতে ভাসমান ঘাস চাষ পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় হতে অনুদান প্রাপ্ত হয়ে এই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন তারা।

প্রাথমিক পর্যায়ে জার্মান ও নেপিয়ার এই দুই প্রজাতির ঘাস চাষ করেন গবেষক দল। বৃষ্টির পানিতে নেপিয়ার ঘাস মারা গেলেও জার্মান ঘাস বেঁচে যায়। যা ৬০ দিনে ৫-৬ ফুট এর মতো লম্বা হয়।

গবেষকগন সিলেটে জৈন্তাপুর এর কয়েকজন কৃষকের পুকুরে পরীক্ষামূলক ভাবে মাচা তৈরি করে ভাসমান ঘাস চাষ করেন। যা বর্ষার পানিতে ঠিকে থাকে এবং এই ভাসমান মাচা থেকে ৩ বার পর্যন্ত ঘাস সংগ্রহ করা সম্ভব। পরবর্তীতে ড. মোহাম্মদ মেহেদী হাসান খান ও ড. জসিম উদ্দিন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে গবেষণা অনুমদনের জন্য আবেদন করেন এবং ২০ লক্ষ্য টাকা অনুদান প্রাপ্ত হন। যার আওতায় সিলেটের জৈন্তা ও কানাইঘাট থানার ৪০ জন কৃষকের পুকুরে ও নিচু জলাশয়ে আবারো ভাসমান ঘাস চাষ করেন।

ভাসমান ঘাস চাষ নিয়ে গবেষক ও প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মেহেদী হাসান খান জানান, ‍“এ পদ্ধতিতে প্রথম কাটিং পেতে বর্ষাকালে ৬০-৬৫ দিন সময় লাগে। এরপর প্রতি কাটিং এ ৪৫-৫০ দিন সময় লাগে। যা ৫-৬ ফুল লম্বা হয় ও প্রতি বর্গমিটার এ ১৪-১৬ কেজি ঘাস পাওয়া যায়। এভাবে একটি ১৫ বর্গমিটার এর মাচা থেকে প্রতি কাটিং-এ ২০০-২৫০ কেজি ঘাস সংগ্রহ করা যায়। এতে আলাদাকরে জমি বা রাসায়নিক সার প্রয়োগের ও প্রয়োজন হয় না।”

তিনি আরাও জানান, “শুষ্ক মৌসুমে শুকনো গোবর ব্যবহার করেও এই ঘাস উৎপাদন অব্যাহত রাখা সম্ভব। তাছাড়া শীতকালে পানি শুকিয়ে গেলে বা কমে গেলে কাদামাটিতে বা শুষ্ক মাটিতেও এই ঘাস উৎপাদন সম্ভব।”

শুষ্ক মৌসুমে ঘাসের অভাব দেখা দিলে বর্ষার শেষ দিকে মাটিতে বিশেষ পদ্ধতিতে সাইলেজ তৈরি করে প্রায় এক বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা সম্ভব বলে জানান ড. মেহেদী।

ভাসমান ঘাস চাষ পদ্ধতিতে ৩০-৪০ ফুট লম্বা ও ৫-৬ ফুট চওড়া একটি মাচা তৈরিতে খরচ পড়বে গড়ে ২০০০ টাকা এবং ৫ টি কাটিং এ থেকে প্রায় ১০০০ কেজি ঘাস পাওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে গড় প্রতি কেজি ঘাসের মূল্য মাত্র ২ টাকা হবে। এ রকম ২ টি মাচা তৈরী করলে ৪০০০ টাকায় একটি গাভীর সারা বছরের খাবার উৎপাদন করা সম্ভব।

বন্যা উপদ্রুত নিচু এলাকা হাওড় বাওড় বিল এবং পুকুরে এ পদ্ধতিতে ঘাস চাষ করে বন্যার সময় সহজে গবাদিপশুকে ঘাস প্রদানকরা সম্ভব হবে।
সুত্রঃ সিলেটভিউ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *