নিউজ ডেস্কঃ
বাংলা ও স্থানীয় নাম: বন কাঁঠাল, বর্তা (চট্টগ্রাম), ডেওয়া-চাম (সিলেট), ডেউয়া (বরিশাল), ডেওয়া, ডেহুয়া, ডেওফল,মিয়ালো (মগ), আরমু (গারো)।
ভৌগোলিক বিস্তৃতি: বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া।
বাংলাদেশে বিস্তৃতি ও প্রাপ্তিস্থান: বর্তা মূলত কাঁঠাল পরিবারভুক্ত দেশিয় গাছ হিসেবে চট্টগ্রাম,পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহের প্রাকৃতিক বনাঞ্চলে বুনো পরিবেশে জন্মাতে দেখা যায়। এ ছাড়া দেশব্যাপী গ্রাম-গঞ্জে বিক্ষিপ্তভাবে কম-বেশি লাগানো বর্তা গাছ রয়েছে।
গাছের বৈশিষ্ট্য:
১। বর্তা মাঝারি আকৃতির প্রশ্বস্ত ডালপালায় বিস্তৃত পাতাঝরা বৃক্ষ, উচ্চতায় ১২-১৫ মিটার পর্যন্ত হয়।
২। গুঁড়ি কাণ্ড সরল,সোজা, নলাকার এবং বাকল অমসৃণ, গাঢ় বাদামি বা ধূসর বর্ণের। এর বিভিন্ন অংঙ্গ ভেঙ্গে গেলে দুধের মতো সাদা কষ বের হয়।
৩। পাতা সরল,একান্তর,লম্বায়১৫-২৫ সেন্টিমিটার, পুরু, খসখসে,কিনারা মসৃণ এবং আগা সূচালো।
৪।এপ্রিল-মে মাসে গুচ্ছাকারে ক্রিম-হলুদ বর্ণের ফুল ফোটে। একই গাছে পুরুষ ফুল ও স্ত্রী ফুল আলাদাভাবে ধরে।
৫। স্ত্রী ফুল থেকে ফল হয়। ফল কাঁঠালের মতো, তবে আকারে ছোট, গোলাকার,৫-১০ সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের তবে অসমান, খসখসে ও একাধিক ভাঁজযুক্ত। ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং জুলাই-আগস্ট মাসে পরিপক্ক ফল হলদে-সবুজ থেকে কমলা-লালচে বর্ণের হয়। পাকা ফলগুলোর খোসা (আবরণ) বেশ পাতলা এবং ভেতরের অংশ ফ্যাকাসে হলুদ বা কমলা-লালচে বর্ণের এবং নরম, মাংসলও ভক্ষণীয়। ফলের প্রতিটি কোয়ার সাথে বীজ থাকে। ফলের হলুদ পাল্পের মধ্যে বীজগুলো ছোট গোলাকার সাদাটে বর্ণের। প্রতি কেজিতে বীজের সংখ্যা ৫০০-৭০০টি। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ১০-১৫ দিন পর্যন্ত বীজ সংরক্ষণ করা যায়।
প্রজনন ও বংশবিস্তার: সাধারণত বনাঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে বীজ থেকেবর্তারচারা জন্মায় ও বংশবিস্তার হয়। নার্সারিতে জুলাই-আগস্ট মাসে সংগৃহীত পাকা ফল পানিতে ভিজিয়ে হাত দিয়ে কচলিয়ে বীজগুলো বের করা হয়। অথবা ফল খাওয়ার পর সংগৃহীত বীজ কয়েক দিনের মধ্যে পলিব্যাগে বপন করতে হয়। বীজ গজানো বা অঙ্কুরোদগমেরহার শতকরা ৫০-৬০ ভাগ। চারা গজাতে সময় লাগে ১৮-২০ দিন।
গুরুত্ব ও ব্যবহার: কাঠ হলুদাভ বাদামি বর্ণের, মধ্যম ভারী ও টেকসই। ঘর-বাড়ি নির্মাণে কাঠ ব্যবহৃত হয়। এর লম্বা নলাকার গুঁড়ি খুঁড়িয়ে আস্ত নৌকা/ডিঙ্গি বানানো হয়। ফলের হলুদ পাল্প ভক্ষণীয় এবং স্বাদে হালকা টক-মিষ্টি। পাকা ফল লবণ-মরিচ মাখিয়ে খেতে বেশ মজা। ফল ক্ষুধা ও শক্তিবর্ধক। বর্তার বীজ আগুনে ভেজে বা পুড়িয়ে খাওয়া যায়। পানের সাথে বাকল চিবিয়ে খাওয়া হয় এবং মানব দেহের ক্ষত শুকাতে কার্যকর। গাছের শিকড় থেকে হলুদ রঙ পাওয়া যায়।
সংরক্ষণের জন্য গৃহীত পদক্ষেপ: ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের ৫৫ নম্বর সেকশনে লাগানো বর্তারকিছু গাছ সংরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। আরণ্যক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট এর সহযোগিতায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চারা লাগিয়ে প্রজাতিটিকে সংরক্ষণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে