নিউজ ডেস্কঃ
আমবাগান গড়ার কারিগর হিসেবে খ্যাতি আছে মজিবুর রহমানের। ১৯৮৫ সালে বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদার হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বরেন্দ্রভূমির পাহাড়ি টিলাসদৃশ এলাকায় বন গড়ে তোলার কাজে হাতেখড়ি হয় তাঁর। এরপর গাছ ছাড়েননি তিনি, বিশেষ করে আমগাছ। তাঁর হাত ধরে দেশের বিভিন্ন জেলাসহ বৃহত্তর রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে শত শত বাগান গড়ে উঠেছে। নতুন নতুন জাতের এসব বাগান আধুনিক পদ্ধতিতে গড়া। এবার তাঁর হাত ধরে ছড়াচ্ছে নতুন নাবি জাতের আম।
গোড়ার দিকে বরেন্দ্র অঞ্চলে আম ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, তাঁদের অন্যতম মজিবুর রহমান। এবার তিনি নাবি জাতের আম ছড়িয়ে দিতে চলেছেন। আমপ্রেমীরা আমটি পছন্দ করবেন বলে আশাবাদী তিনি। নতুন আমটি দেখতে বারি-৪ জাতের আমের মতো। কিন্তু আসলে আমটি বারি-৪ নয়। অম্লমধুর বলতে যা বোঝায়, আমটির স্বাদ ঠিক তেমন। আমপ্রেমীদের মধ্যে যাঁরা কড়া মিষ্টির বদলে এমন স্বাদ পছন্দ করেন, তাঁদের পছন্দের তালিকায় আমটি ঠাঁই করে নেবে বলে তিনি মনে করেন।
মজিবুর রহমানের দাবি, তিনিই প্রথম নাচোল উপজেলার সানপুর গ্রামে এক বিঘা জমিতে আমবাগান করেছেন আধুনিক পদ্ধতিতে। উচ্চ ঘনত্বসম্পন্ন এ পদ্ধতিতে তিনি এক বিঘা জমিতে লাগিয়েছেন ২৪০টি গাছ। এর মধ্য নতুন জাতের গাছ আছে ২০টি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এবার পাঁচ বছর বয়সী বাগানের গাছগুলোয় গড়ে ১৫ কেজি করে আম ধরেছে। গড় ওজন ৫০০ গ্রাম। আমটি নাবি জাতের অর্থাৎ মৌসুমে শেষ দিকের হওয়ায় বিক্রিও হয়েছে ভালো দামে। ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে আম বিক্রি করেছেন। তাঁর তৈরি চারা নিয়ে নওগাঁর নজিপুর, শিশাহাট চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের আঝইর, মিরকাডাঙা, গোমস্তাপুরে আড্ডা এলাকায় বাগান গড়ে তুলেছেন পাঁচজন আমচাষি।
এসব বাগানে দুই সহস্রাধিক গাছ রয়েছে। তাঁদের বাগানেও ফলেছে এই আম। তাঁরাও এই আম বিক্রি করে ভালো দাম পেয়েছেন। মজিবুর রহমান বলেন, ‘চান্স সিডলিং’-এর মাধ্যমে অর্থাৎ প্রকৃতিতে দৈবভাবে সংকরায়ণের মাধ্যমে সৃষ্ট এই আমগাছ চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রে (আম গবেষণা কেন্দ্র) রয়েছে। আমটি নিয়ে ২০১৬ সালে ‘নাবি জাতের নতুন আম’ নামে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে আমবিজ্ঞানীদের উদ্ধৃত করে উল্লেখ করা হয়, আমটির গড় ওজন ৫৬২ গ্রাম। মিষ্টতা ২৫ ভাগ। আঁটি ও ছিলকা পাতলা। কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে হলুদ রঙের হয়। খাওয়ার উপযোগী অংশ ৮০ ভাগ। গাছ ওপরের দিকে বাড়ে কম এবং ছাতার মতো ছড়ানো হয়। ফলে এর পরিচর্যা সুবিধাজনক। আমের এই জাত মুক্ত করার জন্য বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
সুত্রঃপ্রথম আলো