নিউজ ডেস্ক: বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে রপ্তানি আয়ে প্রথম তৈরি পোশাক এবং দ্বিতীয় বড় আয়ের খাত চামড়া রপ্তানিতে বড় ধরনের ধস নামলেও প্রতিকূল এই সময়ে দেশের সাত পণ্য জয় করেছে করোনা। এই সাত পণ্যের মধ্যে রয়েছে ওষুধ, পাট ও পাটজাত পণ্য, আসবাব, কার্পেট, চা, সবজি ও ছাই। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ইপিবির ২০১৯-২০ অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, দেশের স্বাস্থ্য খাতের পণ্য ওষুধ রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ শতাংশ, পাট ও পাটজাত পণ্যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ শতাংশের বেশি। সবজি রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬৪.৫৩ শতাংশ, চা রপ্তানিতে ১০.৬৪ শতাংশ, কার্পেটে ৮.৪১ শতাংশ আর ছাই রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬৪.৫৩ শতাংশ। কালেরকন্ঠ

বাংলাদেশের ছাই যাচ্ছে বিশ্বে
পাটখড়ি থেকে উৎপাদিত একটি পণ্য হচ্ছে এই ছাই, যা আসলে চারকোল বা অ্যাকটিভেটেড কার্বন। কারখানার বিশেষ চুল্লিতে পাটকাঠি পুড়িয়ে ছাই করা হয়। তিন থেকে চার দিন পোড়ানোর পর চুল্লির ঢাকনা খুলে ছাই সংগ্রহ করে ঠাণ্ডা করা লাগে। এ ছাড়া কাঠের গুঁড়া, নারিকেলের ছোবড়া ও বাঁশ থেকেও ছাই বা চারকোল উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে দেশে এখন পর্যন্ত পাটখড়ি থেকেই চারকোল উৎপাদিত হচ্ছে।

কাঠের গুঁড়া, নারিকেলের ছোবড়া ও বাঁশ থেকেও ছাই বা চারকোল উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে দেশে এখন পর্যন্ত পাটখড়ি থেকেই চারকোল উৎপাদিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ থেকে ২০০৯-১০ সালে এই পণ্য রপ্তানি শুরু হয়। এ সব ছাইয়ের মধ্যে গড়ে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কার্বন উপাদান থাকে। টনপ্রতি ৫০০ থেকে ১ হাজার ৭০ ডলারে রপ্তানি হচ্ছে এই পণ্য। পাটখড়ির ছাইয়ে থাকা কার্বন পাউডার দিয়ে প্রসাধনসামগ্রী, ব্যাটারি, কার্বন পেপার, পানির ফিল্টারের উপাদান, দাঁত পরিষ্কার করার ওষুধ ও ফটোকপি মেশিনের কালি তৈরি করা হচ্ছে।

আয় ১২৯ কোটি ৭৮ লাখ ডলার

এদিকে করোনা জয় করা এই সাত পণ্য থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ১২৯ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। এর মধ্যে ওষুধে ১৩ কোটি ৫৭ লাখ ডলার, পাট ও পাটজাত পণ্যে ৮৮ কোটি ২৩ লাখ ডলার, আসবাবে ৭ কোটি ৬৪ লাখ ডলার, চায়ে ৩১ লাখ ২০ হাজার ডলার, কার্পেটে ২ কোটি ১১ লাখ ডলার, সবজিতে ১৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার এবং ছাই রপ্তানি করে আয় হয়েছে ১ কোটি ৫২ লাখ ডলার। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশের ৭৫০টি পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে ৬০০ পণ্য বাড়তি সুযোগ পায়। তাঁদের মতে, দেশের শ্রমঘন সব শিল্পেরই রপ্তানির সুযোগ আছে। এ জন্য রপ্তানি সহায়ক নীতি সহায়তা, প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা, মান সনদের গ্রহণযোগ্যতা, পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করতে হবে।

বাংলাদেশ বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি রাশেদুল করিম মুন্না কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পরিবেশবান্ধব পণ্যের বিশ্বব্যাপী চাহিদা বেড়েছে। পরিবেশবান্ধব আইন এবং অধিক হারে করারোপ করে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার নিরুৎসাহ করা হচ্ছে। ফলে পাটপণ্যের বহুমাত্রিক ব্যবহারে প্রসার ঘটছে। ভোক্তারা ঘরে ও বাড়ির বাগানেও এর ব্যবহার বাড়াচ্ছে। এর সুবিধা দুই বছর ধরে পাচ্ছে বাংলাদেশ। আগামী বছর থেকে চাহিদা আরো বাড়বে বলে আশা করছি।’ রাশেদুল করিম আরো বলেন, ‘বিশেষ করে ইউরোপীয়রা প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বের ৩২টি দেশে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার বন্ধ। ফলে প্রাকৃতিক পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। কভিড-১৯-এর কারণে মানুষ ঘরে থাকছে। ফলে মানুষ পরিবেশবান্ধব পণ্য ব্যবহার বাড়াচ্ছে। পাট খাত ভালো জায়গায় নিতে হলে উচ্চমানের পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে হবে।’

সুত্রঃ আমাদের সময়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *