নুরুজ্জামান, বাঘা :
খবরের শিরোনাম দেখে অনেকেই মনে করতে পারেন, জনি নামে কোন যুবক কৃষিতে বিস্ময়কর সাফল্য এনে দিয়েছেন কিংবা ঘটিয়েছেন কৃষি বিপ্লব। আসলে এ জনি-সেই জনি নন, এখানে যে জনির কথা বলা হচ্ছে, তিনি হলেন একজন কৃষি অফিসার। পুরো-নাম শফিউল্লাহ্ সুলতান জনি।
যিনি এ দেশের মাটি ও মানুষকে ভালোবাসেন। ভালবাসেন কৃষিসহ কৃষি উদ্দমী যুবকদের। যাদের মাধ্যমে তিনি কৃষিতে আনতে চান অমলুক পরিবর্তন। আর সে লক্ষে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। ফলে বিগত যে কোন সময়ের চেয়ে বাঘায় ঘটেছে কৃষি বিপ্লব।
জনি একান্ত সাক্ষাতকারে বলেন, বহুদিন আগে স্বপ্ন দেখে ছিলাম। আমাদের দেশের প্রকৃত নায়ক বেরিয়ে আসবে গ্রাম থেকে। আজ যেন সেই স্বপ্নগুলো পূরণ হচ্ছে। তবে এ নায়ক সিনেমার কোন নয়ক নন, এ নয়ক হলো-প্রান্তিক ও হতদরিদ্র কৃষকের সন্তান। যাদের অনেকেই ইতোমধ্যে কৃষিতে সাফল্যের উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।
স্থানীয় তৃনমুল কৃষকদের মতে, একজন ডাক্তার যেমন বিভিন্ন ঐষধ কম্পানী থেকে নানা রোগের স্যমপল পান, ঠিক একই ভাবে কৃষি কর্মতার নিকটও নানা কম্পানী থেকে স্যমপল আসে। এদিক থেকে ডাক্তারদের মধ্যে সেগুলো বিক্রী করার উদাহারণ অনেক। কিন্তু আমাদের কৃষি কর্মকর্তা জনি স্যার কোন স্যমপল বিক্রী না করে-না। বরং সেগুলো কৃষকদের মাঝে ফ্রি বিতারণ করে থাকেন। কৃষকদের মতে, জনি স্যার রাস্তায় চলার পথে ভাল কোন কৃষি প্রদশনী চোখে পড়লে তিনি সেখান দাড়িয়ে যান এবং সেই ফসলক্ষেতটি দেখার চেষ্টা করেন।
এমনও লক্ষ করা গেছে, সরকারী ভাবে পাওয়া কৃষি উপকরণ শেষ হওয়ার পর দু-পাঁচ জন কৃষক তাঁর কাছে গিয়ে সার-বীজ চেয়েছেন। এ ক্ষেত্রে কাওকে খালি হাতে ফিরে আসতে হয়নি। এই কৃষি কর্মকর্তা জনি নিজ অর্থায়নে জমির পরিমান বুঝে কৃষকদের হাতে সার-বীজ তুলে দিয়েছেন। এ ছাড়াও ভালো উৎপাদনকারীদের হাতে তুলে দিয়েছে বাৎসরিক সাফল্য পুরুষ্কার। কারণ তিনি কৃষদের ভালোবাসেন। এতে করে একদিকে যেমন তাঁর নাম কৃষকদের মুমে-মুখে ফিরছে, অন্যদিকে তার সাফল্য ছড়িয়ে পড়ছে পুরো এলাকায়। সম্প্রতি তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে নিজ খরচে বাঘার একটি এতিম খানায় বনভোজন করে আরো বিশি আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন।
সংশি¬ষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় ১৮ হাজার হেক্টর কৃষি আবাদি জমি রয়েছে। আর কৃষি পেশার সঙ্গে জড়িত প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ। এখানকার প্রধান অর্থকারী ফসলের মধ্যে অন্যতম আম, খেজুরের গুড়, ধান, পাট, আখ এবং আলুসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি। এর মধ্যে পদ্মার চরাঞ্চলকে সবজি ভান্ডার বলা হয়।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানান, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে কৃষি ক্ষেত্রে নানা প্রকার সুযোগ-সুবিধাসহ সরকারি সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। বিশেষ করে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে এ উপজেলায় ১ হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে আউস প্রনোদনার আওতায় উন্নত মানের নেরিকা বীজ, সার নিড়ানী খরচ ও সেচ সহায়তা দেয়া হয়েছে। সেই সাথে এলাকা ভিত্তিক ৩০টি পাওয়ার টিলারসহ আম গাছে কীটনাশক প্রয়োগ করার জন্য বর্তমান সরকারের মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদ আলহাজ শাহরিয়ার আলমের পক্ষ থেকে ৫০টি স্প্রে ম্যাশিন সরবরাহ করা হয়।
সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় ২০ জন উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা নিরলস ভাবে বিভিন্ন ফসলের নতুন-নতুন প্রযুক্তি দ্বারা সরকারের উন্নয়নের ধারা অবহত রেখে কৃষকদের নানা পরার্ম দিয়ে চলেছেন। সেই সাথে পানি সংরক্ষনের জন্য তাল ও খেজুর গাছ রোপন করাসহ মাটির স্বাস্থ্য রক্ষার্থে কৃষকদের জৈবসার উৎপাদনের পরামর্শ দিচ্ছেন।
বাঘা উপজেলা কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম বলেন, এখানকার আম দেশ বিখ্যাত। গত এক বছর পুর্বে হরটেক্স্র ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বাঘার উৎপাদিত ৫০ টন আম যুক্তরাজ্যে রপাতানী করা হয়। সর্বশেষ গত বছর মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর একান্ত প্রচেষ্ঠায় বিভিন্ন দেশে আম রপ্তানী করা হয়। এতে করে আর্থিক ভাবে লাভবান হন এ অঞ্চলের কৃষক।
বাঘার আমোদপুর গ্রামের কৃষক আলী আকবর বলেন, আমরা যে কোন ধরনের কৃষি সেবা চাওয়া মাত্রই তা পেয়ে থাকি। ফসলে পোকা মাকড়ের আক্রমন হলে কোন ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে তা বলে দেন উপজেলা কৃষি বিভাগ।
সার্বিক বিষয়ে বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন,কৃষি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদের কথা, বহুমুখী সমস্যা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবেলা করে ক্রমাগত স্বচ্ছলতার সোপানে পাল্টে যাচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি। এর মূল কারণ কৃষিকে বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এর ফলে মাঠে মাঠে বিভিন্ন সবুজ ফসলের অপরূপ সৌন্দর্যে আগ্রহ বাড়ছে। বাড়ছে উদ্দমী শিক্ষিত যুবকদের উৎপরতা।তারা ফসলের উৎপাদনে বিরাট সফলতা এনে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।