বিশেষ সংবাদদাতাঃ

বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম ও পাকুরিয়া ইউনিয়নের ০৩ বিঘা জমিতে বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে পরীক্ষামূলক ভাবে চাষ হচ্ছে। নতুন এই ফসল ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, খরিফ-২ মৌসূমে বাঘা উপজেলার আমসহ বিভিন্ন ফল বাগান সাধারণত পতিত থাকে। উঁচু জমি, যেখানে সাধারণত পানি জমে না এবং হালকা ছায়া পড়ে এমন জমিতে পেরিলা সহজেই আবাদ করা যায়। মাত্র তিন মাসের ফসল হিসেবে সহজেই পেরিলা আবাদ করে কৃষক রবি ফসলে যেতে পারবে। তাছাড়া ক্রপিং প্যাটার্নে নতুন একটি ফসল যোগ করতে পারায় অত্র উপজেলার শস্য নিবিড়তার হার বাড়ানো সম্ভব পেরিলা আবাদের মাধ্যমে।

কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম বলেন, পেরিলা সাধারণত বীজতলায় থেকে সংগ্রহ পর্যন্ত প্রায় ৯০-১০০ দিন সময় লাগে। জুলাই মাসে বীজতলায় বীজ বপণ করে আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ২৫-৩০ দিনের চারা মূল জমিতে রোপণ করতে হয়। পেরিলায় খুবই কম পরিমাণ সার লাগে, সেই সাথে রোগ বালাই নাই বললেই চলে। বিঘা প্রতি মাত্র ৩-৪ হাজার  টাকা উৎপাদন খরচ হয়। অন্যদিকে প্রায় ০৪ মণের মত ফলন পাওয়া যায়, যার বাজারমূল্য প্রায় ২০ হাজার টাকা। তাই, অল্প পরিশ্রমে কম খরচে পতিত জমিতে পেরিলা আবাদ তাই লাভজনক মনে করেন এই কৃষি কর্মকর্তা৷
পেরিলার পুষ্টি গুণ সম্পর্কে তিনি আরো বলেন,

সাউ পেরিলা-১ নামের নতুন জাতের এই পেরিলা ভোজ্য তৈল দক্ষিণ কোরিয়া, চীন,জাপান,ভারত সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভোজ্য তেল হিসাবে ব্যবহার হয়। পেরিলা তেলের প্রধান বৈশিষ্ট্য উচ্চমাত্রায় ৫১% ওমেগা -৩ এবং ফ্যাটি এসিড বা লিনোলিনিক এসিড সমৃদ্ধ এবং ২২% লিনোলিক এসিড বা ওমেগা -৬ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ। এটি ক্ষতিকারক ইউরেসিক এসিড মুক্ত (০%)ও ৯২% অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড। হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকরী।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, পেরিলার ফুলে প্রচুর মৌমাছির আনাগোনা। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা স্বজন সরকার বলেন, মৌ বাক্স স্থাপন করলে পেরিলার জমি থেকে মধু আহরণ সম্ভব। তাছাড়া, কচি পেরিলার পাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায় এবং পেরিলার পাতার চা বানানো যায়। প্রথম বছর হিসেবে পেরিলার আবাদ এই ইউনিয়নের কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়েছে।

পেরিলা চাষী মোঃ সাজদার রহমান  বলেন, বাঘা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় প্রথম বারের মত পেরিলা আবাদ করছি। কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কামরুল ইসলাম স্যারের মাধ্যমে আমি বীজ পাই, এমনকি স্যার আমাকে সার, কীটনাশক, ছত্রাকনাশক দেয়। নিয়মিত স্যার মাঠে এসে কখন কি করতে হবে পরামর্শ প্রদান করেন। উপসহকারী কৃষি অফিসার স্বজন স্যার প্রায় প্রতিদিন আমার পেরিলার জমি দেখতে আসেন। আশা করি ভালো ফলন পাবো। আমার জমি আগে খালিই পড়ে থাকতো, এখন পেরিলা করাই জমি আর খালি থাকছে না। এই ফসল আমাদের এলাকায় আনার জন্য বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসের সবাইকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *