সেলিম মাহবুব, ছাতকঃ
ধান, রবিশস্য গতানুগতিক চাষের চেয়ে বিকল্প চাষ করলে প্রচুর পরিমাণে লাভ করা যায়, তা হাতেনাতে প্রমাণ করে দিয়েছে ছাতক উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর।
এখানের চাষীরা বিকল্প চাষের দিকে ঝুঁকছেন। এবার শখের বশে বাড়ির ছাদে কিংবা টবে নয়, বাণিজ্যিকভাবে ছাতকে চাষ হচ্ছে বিদেশি সবজি ক্যাপসিকাম। ফলনও হয়েছে ভালো। কৃষি উদ্যোক্তারা বলছেন, ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত ও চাষটি ছড়িয়ে দিতে পারলেই কমবে এর আমদানি নির্ভরতা। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর বলেছে, সবজিটির চাষ ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছে তারা।
ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচ একটি জনপ্রিয় বিদেশী সবজি। বিশ্বজুড়ে রয়েছে এর চাহিদা। নতুন কিছু করার প্রত্যয় নিয়ে ছাতকের কালারুকা ইউনিয়নের নুরুল্লাহপুর গ্রামের ছদরুল ইসলাম এক বিঘা জমি নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু করেন ক্যাপসিকামের। অনেক পরিশ্রমের পর এখন গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে সবুজ ক্যাপসিকাম।
বিক্রিও শুরু করেছেন তিনি। সঠিক পরিচর্যা ও সময়মত ওষুধ প্রয়োগ করতে পারলে এ সবজির চাষ সম্প্রসারণ করা সম্ভব বলে মনে করেন ছদরুল ইসলাম। আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে উৎপাদিত ক্যাপসিক্যামের বাজার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তার সফল চাষ দেখে অনেকেই এগিয়ে আসছেন ক্যাপসিকাম চাষে। ক্যাপসিকাম চাষি ছদরুল ইসলাম জানান, ক্যাপসিকামের বীজ বপন করার এক মাস পর চারা তৈরি হয়। চারা উপযুক্ত হওয়ার পর জমি তৈরি করতে হয়। চারা রোপণের আগে পলিথিন দিয়ে বেড তৈরি করে নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গা ফাঁকা রেখে গাছের চারা বপন করতে হয়। বীজ বপনের পর গাছগুলো নিয়মিত পরিচর্যা করতে হয়।
গাছ লাগানোর ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে ফুল আসতে শুরু করে। ফুল আসার ২৫ দিনের মধ্যে ফল বিক্রির উপযুক্ত হয়। কয়েক মাস পর্যন্ত ফল পাওয়া যায় এ গাছ থেকে। তিনি আরও বলেন, এ বছর অল্প পরিসরে তিনি এ মরিচের চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রতিটি ফলের ওজনও ভালো হয়েছে। বাজারে চাহিদা থাকায় দামও ভালো। আগামীতে কয়েকগুণ বাড়িয়ে এ মরিচের চাষ করবেন বলে জানান তিনি। ছাতকের “চিলিজ চায়নিজ” রেস্টুরেন্টের ডিরেক্টর আরিফ আহমদ জানান, চায়নিজ খাবার তৈরির জন্য আগে সিলেট থেকে ক্যাপসিকাম ক্রয় করতেন।
খরচও পড়তো অনেক বেশি। কিন্তু এখন ছাতকে ক্যাপসিকাম পাওয়া যাবে। দামও থাকবে হাতের নাগালে। ছাতক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৌফিক হোসেন খান জানান, ছাতকে বাণিজ্যিকভাবে ক্যাপসিকাম চাষ শুরু হয়েছে। মাঠ পরিদর্শন করে এসেছি। এটি লাভজনক চাষ। চাহিদাও রয়েছে বাজারে। উপজেলাব্যাপী ক্যাপসিকাম চাষ ছড়িয়ে দিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কাজ করছে। ক্যাপসিকাম সবজি হিসেবে যে কোনো খাবারের সঙ্গে খাওয়া যায়। প্রচুর পুষ্টিগুণ আছে বিদেশি এ সবজিটিতে। বীজ রোপণের পর থেকেই ক্যাপসিকাম চাষিকে নানাভাবে সহায়তা করা হয়েছে।
এ ছাড়া উপজেলার অন্যান্য কৃষককেও এ চাষে আগ্রহী করতে উদ্বুদ্ধ করছেন তারা। এর চাষ বাড়াতে ও বাজারজাত করতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। ছাতকে ব্যতিক্রমী ফসল ক্যাপসিকাম উৎপাদনে নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করবে বলে মনে করেন তিনি।