নিউজ ডেস্কঃ
সোনালি আঁশ খ্যাত পাটে আবারও ফিরেছে সুদিন। একসময় সোনালি আঁশ যখন কৃষকের গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছিল তখন পাট চাষ বন্ধ করেছিল কৃষক। তবে গত কয়েক বছর ধরে ভালো দাম পাওয়ায় আবারও পাট চাষ শুরু হয়েছে। এবার প্রতিমণ পাট দুই হাজার থেকে ২২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু বহু কষ্টে চাষ করা পাটের ভালো দাম জুটল না লাখ লাখ কৃষকের ভাগ্যে। কেননা পাটের এই ভালো দাম বন্যায় খেয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাব মতে, (১১ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত) এবার ১২ লাখ, ৮১ হাজার, ৫১৫ দশমিক ৮৫ বিঘা জমির ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে দুই লাখ এক হাজার ৪২৮ দশমিক ৫৫ বিঘা জমির পাট পানিতে ডুবে গেছে। যেখান থেকে কৃষক আর এক আঁটি পাটও পাবেন না।
ডুবে যাওয়া পাটের বিষয়ে হিসাব করে দেখা গেছে, প্রতি বিঘা জমিতে ১০ মণ করে পাট হলে ২০ লাখ, ১৪ হাজার ২৮৫ দশমিক পাঁচ মণ পাট হতো। আর প্রতিমণ পাটের দাম দুই হাজার টাকা হলে ৪০২ কোটি ৮৫ লাখ ৭১ হাজার টাকা সরকারের রাজস্ব খাতে জমা হতো। শুধু তাই নয়, বন্যার পানিতে পাট ডুবে না গেলে এ টাকা কৃষকের হাতে যেত। কিন্তু কৃষকের সে স্বপ্ন ডুবে গেল বন্যার পানিতে।
বগুড়ার ধুনট উপজেলার চরপাড়া গ্রামের আদর্শ কৃষক আকিমুদ্দিন শেখ এবার ১০ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। গত বছরও তিনি ১০ বিঘা জমিতে পাট চাষ করে প্রতিমণ ১৮০০ থেকে ২২০০ টাকায় বিক্রি করেন। সেই আগ্রহ থেকে এবারও পাট চাষ করেছেন।
তিনি বলেন, গত তিন বছর ধরে পাটের ভালো দাম পাচ্ছি। ধানের তুলনায় পাট ও ভুট্টা চাষে বর্তমানে লাভ বেশি। কিন্তু এবার ১০ বিঘা জমিতে পাট চাষ করলেও বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছি। পাট নিয়ে যে আশা করেছিলাম তা আর পূরণ হলো না।
একই উপজেলার উল্লাপাড়া গ্রামের মংলা ফকির বলেন, এবার প্রতিমণ পাট ২০০০-২২০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। খুব ভালো লাগছে। তিনি বলেন, আমি উঁচু জমিতে অগ্রিম পাট চাষ করেছিলাম। ফলে বন্যায় কোনো ক্ষতি হয়নি। কিন্তু নিচু জমির পাট বন্যায় ডুবে গেছে। ধুনট ও শেরপুর উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার বিঘা জমির পাট এখন পানির নিচে বলেও জানান তিনি।
মহামারি করোনার কারণে দেশের প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাক, চামড়াসহ অন্যান্য খাত নিয়ে যখন দুশ্চিন্তা বাড়ছে তখন আশার আলো ফুটছে পাট ও পাটজাত পণ্যে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানিতে আয় হয়েছে ৬৯ কোটি ৭৬ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৮ দশমিক ১২ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া এ অর্থবছরে পাট খাত থেকে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮২ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির যে ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা বাকি চার মাস (মার্চ-জুন) অব্যাহত থাকলে এবার পাট খাতের রফতানি এক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ কারণে পাট নিয়ে আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
পাট অধিদফতরের মহাপরিচালক সওদাগর মুস্তাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, চলতি বছরে ৮০-৮৪ লাখ বেল পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তৈরি পোষাকের পরেই পাটের বিশাল সম্ভাবনা দেখছি আমরা।
এবারের বন্যায় দুই লাখ এক হাজার ৪২৮ দশমিক ৫৫ বিঘা জমির পাট পানিতে ডুবে গেছে। কৃষকের ডুবে যাওয়া পাটের বিষয়ে হিসাব করে দেখা গেছে, প্রতি বিঘা জমিতে ১০ মণ করে পাট হলে ২০ লাখ, ১৪ হাজার ২৮৫ দশমিক পাঁচ মণ পাট হতো। এ ক্ষতি লক্ষ্যমাত্রায় প্রভাব ফেলবে কিনা এমন প্রশ্ন অবশ্য তিনি এড়িয়ে যান।
সুত্রঃজাগোনিউজ