নিউজ ডেস্কঃ
ধানের দাম বেড়েছে সারাদেশেই। এক সপ্তাহ আগে বাজারে ধানের যে দাম ছিল তা থেকে এখন প্রতি মণে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার, মিলার, বেপারী ও মজুদদাররা একসঙ্গে ধান কিনতে বাজারে নেমেছে। তাছাড়া করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে অনেকে ধান বিক্রি করছে না। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, সামনে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। আমনের আবাদ ঠিক মতো করতে না পারলে নিজেদের খাওয়ার ধানও থাকবে না। এ কারণে এখনই ধান বিক্রি করতে চাইছেন না তারা। ফলে ভর মৌসুমে বাজারে যে পরিমাণ ধান ওঠার কথা সে পরিমাণ ওঠেনি। সেজন্য বাজারে ধানের যোগানের চাইতে ক্রেতা বেশি। এ কারণে বাড়ছে ধানের দাম।
আর ধানের দাম বাড়ার বিষয়টিকে দেখিয়ে কুষ্টিয়া, নওগাঁ, দিনাজপুর ও শেরপুরসহ বিভিন্ন এলাকার মিল গেটে চিকন থেকে মোটা ও মাঝারি—সব ধরনের চালের দাম বেড়ে গেছে এক সপ্তাহের ব্যবধানে। মিল মালিকরা বলছেন, ধানের দামের সঙ্গে সমন্বয় করেই বাড়ছে চালের দাম।
খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর জুনে যে চালের কেজি ছিল ৩২ থেকে ৩৩ টাকা, সেই চাল এ বছরে একই সময়ে ৪৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত দুই বছরের মধ্যে এবারই চালের দাম সবচেয়ে বেশি।
চাল ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, আমন মৌসুমের আগ পর্যন্ত চালের বাজারে দাম বাড়তেই থাকবে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বাইরে থেকে সহজেই চাল আমদানি করা যাবে না মনে করে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী, ফড়িয়া ও আড়তদার ধান-চাল মজুত করছেন।
মিল মালিক, কৃষক ও খাদ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রমজানের মধ্যে সারাদেশে পুরোদমে বোরো ধান কাটা শুরু হয়। মিলগুলোতে নতুন ধান আসায় চালের দাম ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ঈদের আগ পর্যন্ত মিনিকেট, কাজললতা, বাসমতি, আঠাশ ও মোটা জাতের চালের দাম কেজিতে মিল গেটে ৩ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত কমে যায়। তবে ঈদের পরের চিত্র একেবারে আলাদা। ঈদের পর থেকে প্রতিনিয়ত বাড়ছে চালের দাম।
বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার চরপাড়া গ্রামের কৃষক আকিমুদ্দিন শেখ বলেন, আমি এবং আমার গ্রামের অনেক কৃষকই ধান বিক্রি করছি না। কারণ সামনে বন্যার বিষয় আছে। আমন ধান কতটুকু করতে পারবো এটা অনিশ্চিত। তাছাড়া জানতে পারলাম এবার নাকি সরকার বিদেশ থেকে চাল আমদানি করতে পারবে না। যদি চাল আমদানি না হয় তাহলের চালের দাম আরও বাড়বে। আজ কম দামে ধান বিক্রি করলে তখন আবার বেশি দামে চাল কেনা লাগবে।
একই গ্রামের চাল ব্যবসায়ী মজিবুর রহমান বলেন, এখন ভরা মৌসুম ধানের। বাজারে অনেক ধান ওঠার কথা। কিন্তু তুলনামূলক ধান অনেক কম উঠছে। প্রতি বছর এই সময় বাজারে অনেক ধান থাকে। এ বছর কেন এমন হলো তা বুঝতে পারছি না। তবে এবার বাজারের চেয়ে ফড়িয়ারা গ্রামে গ্রামে ঘুরে ধান কিনছে বেশি। যেহেতু ধানের দাম বেশি সে কারণে যারা ধান বিক্রি করছে তারা ঘরে থেকেই বিক্রি করছে।
শেরপুরের যমুনা সেমি অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী আইয়ুব আলী বলেন, সব জাতের ধানের দাম মণপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে আঠাশ, কাজললতা ও মিনিকেট (সরু) জাতের ধানের দাম এখন অনেক বেশি। যে ধান গত বছর এই সময়ে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা মণ ছিল এখন তা হাজারে ঠেকেছে। পাশাপাশি সরু ধান গত বছর এই সময়ে ৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হলেও এখন এক হাজার ১০০ টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে। ধানের দাম আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি বলেন, মোকামে আঠাশ জাতের ধানের মণ এখন হাজার টাকা, উনত্রিশ জাতের ধান ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, কাজললতা ৯০০ থেকে ৯৫০টাকা, কাটারী ভোগ ১১০০ টাকা, মিনিকেট প্রতি মণ ১০৫০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কুষ্টিয়ার পৌর বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান জানান, ঈদের আগের তুলনায় এখন বাজার চড়া। করোনার কারণে বাইরে থেকে চাল আনা সহজ হবে না—এমনটা আঁচ করতে পেরে সুযোগ সন্ধানীরা এবার প্রচুর ধান ও চাল কিনে মজুত করেছে। যেন সময় বুঝে তা বাজারে ছেড়ে অধিক মুনাফা অর্জন করা যায়।
তিনি বলেন, যে মিনিকেট চাল ঈদের আগে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা ছিল, তা এখন ৫০ টাকা, আঠাশ ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৬ টাকা, কাজললতাও একই দামে বিক্রি হচ্ছে। এমনকি যে মোটা চাল ৩০ টাকা ছিল, তার দামও বেড়ে গিয়ে এখন ৪০ টাকায় ঠেকেছে।
ধান ও চালের দাম বাড়ার বিষয়ে বাংলাদেশ অটো রাইস মিলস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, চালের দাম বাড়ার জন্য কোনো সিন্ডিকেট প্রয়োজন হয় না। সিন্ডিকেট করে কোনো মিলার চাইলেও দাম বাড়াতে পারে না। এখন প্রতিযোগিতার সময়। সারাদেশেই ধানের দাম বেশি। ধানের বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চালের বাজারদর বাড়ছে। দেশে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ১৫ ভাগ ধান নষ্ট হলেও ফলন ভালো হয়েছে। এতে অভ্যন্তরীণ বাজারে ধান ও চালের সংকট হবে না। তবে দামের হেরফের হবে। কৃষকরা ধানের ভালো দাম পাচ্ছেন। ধানের দাম আরও বাড়তে পারে। ধানের দাম বাড়লে সামনে চালের দামও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ধান ও চালের বাজার নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ অটো রাইস মিলস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি (দিনাজপুর) শহিদুর রহমান পাটোয়ারী মোহনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সরকার, মিল মালিক ও মজুদদাররা এক সঙ্গে ধান কিনছে। সরকার যে রেট দিয়েছে তার চেয়ে বাজারে ধানের দাম বেশি। যে কারণে সরকার এখন আর ধান কিনতে পারছে না। ধান কেনার জন্য সরকার যে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে এখন পর্যন্ত তার ১০ ভাগ ধান কেনা সম্ভব হয়নি। রোদ ভালো হওয়ায় কৃষক ধান শুকিয়ে গোলায় ভরছে। আগামী সাতদিন যদি রোদ এমন কড়া থাকে তাহলে ধানের দাম আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
সুত্রঃ জাগো নিউজ