বিলের শাপলায় ঘুচছে বেকারত্ব

শুধু গ্রামেই নয়, শহরেও তরকারি হিসেবে শাপলার জনপ্রিয়তা দিনে দিনে বাড়ছে। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র, খাল, বিল, পুকুর, ডোবায় শাপলা পাওয়া যায়। বিল পাড়ের একদল নিবেদিত প্রাণ এ শাপলায় সবজির চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি কাটাচ্ছেন নিজের সংসারের দৈন দশাও। প্রতি ১০০ গ্রাম শাপলার লতায় রয়েছে খনিজ পদার্থ ১.৩ গ্রাম, আঁশ ১.১ গ্রাম, ক্যালোরি-প্রোটিন ৩.১ গ্রাম, শর্করা ৩১.৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৭৬ মিলিগ্রাম। শাপলার ফল দিয়ে তৈরি হয় চমৎকার সুস্বাদু খৈও। গাজীপুরের কালীগঞ্জের বেলাই বিল পাড় ঘুরে এবং স্বাস্থ্য ও কৃষি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

উপজেলার দুবার্টি গ্রামের ফারুক, খলিল, নুরুল ইসলাম ও বেলায়েত টিউবয়েল বসানোর কাজ করেন। তারা জানান, বর্ষার ৬ মাস অন্য কোনো কাজ না থাকায় নিজেদের পেশা বদল করে বিলের শাপলা তুলে সংসার চালান। বর্ষা মৌসুম এলে টিউবয়েল বসানোর কাজ মোটামুটি বন্ধই থাকে। কিন্তু তাই বলে কর্মব্যস্ত ওই মানুষগুলো বসে থাকতে নারাজ। বর্ষার সময় তারা তাদের পেশা বদল করে শাপলা উঠানোর কাজ করেন। আর তা স্থানীয় বাজার ও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরগুলোতে বিক্রি করে সংসারের প্রতিদিনের অন্ন জোগান দেন।

শুধু তারা নয় বিল পাড়ের প্রায় অর্ধশতাধিক দরিদ্র পরিবারের মানুষ এই শাপলা তোলার কাজে নিয়োজিত। আর তাদের এ কাজে পরম বন্ধুর মতো সহযোগিতা করছে তাল গাছ দিয়ে তৈরি কোন্দা বা কাঠ দিয়ে তৈরি ডিঙ্গি নৌকা। এতে একদিকে নিজেদের সংসারের যাবতীয় চাহিদা মেটাচ্ছেন। অন্যদিকে বিলে জন্ম নিয়ে বিলেই পচে যাওয়া জাতীয় ফুল শাপলাকে সবজি হিসেবে করছেন অতি জনপ্রিয়।

সামিজক সংগঠন কালীগঞ্জ কল্যাণ সংস্থার সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. জসিম উদ্দিন পুষ্টি সমৃদ্ধ শাপলা সবজি হিসেবে দেশের অর্থনীতে ভূমিকা রাখার বিষয়টি তিনি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তবে যে শাপলা বিলে জম্মে বিলেই পচে যেত, সে শাপলা সবজি হিসেবে জনপ্রিয় ও দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে ভাবতে ভালো লাগে।

কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র এসএম রবীন হোসেন বলেন, সবচেয়ে আশার কথা, যে শাপলা বিলে ফুটে বিলেই পচে শেষ হয়ে যেত। সেই শাপলা তুলে স্থানীয় প্রায় অর্ধশতাধিক দরিদ্র পরিবারে সচ্ছলতা ফিরেছে। তারাই আবার দেশের অর্থনীতিতে রাখছে অবদান। আর বিল পাড়ের ওই মানুষগুলো ফেলনা শাপলাকে জনপ্রিয় সবজি হিসেবে এগিয়ে নিতে রাখছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তাই দিনরাত কাজ করে যাওয়া মানুষগুলো ভালো থাকুক সব সময় এটাই প্রত্যাশা।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মিনহাস উদ্দিন মিয়া বলেন, শাপলায় রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম। যা আলুর চেয়ে সাতগুণ বেশি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ ফারজানা তাসলিম বলেন, প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া আর্শিবাদ বিলের শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে। বিষয়টি ছোটভাবে দেখার সুযোগ নেই।

সুত্রঃ ডেইলি বাংলাদেশ

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *