বেতাগী (বরগুনা): বেতাগীতে এক প্রান্তিক ক্ষুদ্র জেলে সময় কাটাচ্ছে নৌকা মেরামত করেবেতাগী (বরগুনা): বেতাগীতে এক প্রান্তিক ক্ষুদ্র জেলে সময় কাটাচ্ছে নৌকা মেরামত করে

সাইদুল ইসলাম মন্টু
বেতাগী (বরগুনা ) প্রতিনিধি। প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে ও মা ইলিশ রক্ষায় রোববার মধ্যরাত থেকে বন্ধ হচ্ছে জাল ফেলা। নিষেধাজ্ঞা মেনে ইলিশ শিকারে বিরত থাকতে তীরে ভিড়েছে নৌকা ও ট্রলারগুলো। বিষখালী নদীতে চলছে অভিযান। প্রান্তিক ক্ষুদ্র জেলেদের কাটছে অলস সময়। তবুও অনেকে বসে নেই। কেউ কেউ সময় কাটাচ্ছে জাল ও নৌকা মেরামত করে।

এ বছর কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেলেও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারি নিষেধাজ্ঞায় সাগর ও নদীতে জাল ফেলা থেকে বিরত থাকবেন বরগুনার বেতাগী উপজেলার জেলেরা। তবে নিষেধাজ্ঞাকালীন নামমাত্র চাল বরাদ্দ না দিয়ে স্থায়ী পুনর্বাসনের দাবি তাদের ।

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিন সারাদেশে ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার।

নিষেধাজ্ঞাকালীন ইলিশ ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন, মজুত ও বিনিময় বন্ধ থাকবে। শুধু গভীর সমুদ্রেই নয়, বরগুনার প্রধান তিনটি নদীতেও সব ধরনের মাছ ধরার ওপরেও এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকার করলে এক থেকে দুই বছরের কারাদন্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অথবা উভয় দন্ডে বিধান রয়েছে। এই সময়ে ছাড়া কোস্টগার্ড, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

 

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংকটের মাঝেই শেষ হযেছে ইলিশের মৌসুম। মৌসুমের শেষ দিকে হলেও নদনদীতে বেশি মাছ পাওয়া যাবে বলে আশার কথা জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্ত এ বছর মৌসুমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জালে তেমন একটা ইলিশ ধরা পড়েনি। মৌসুমের শেষ দিকে এসে কিছু ইলিশ মিললেও তা আকারে ছিল খুবই ছোট। এবার ইলিশের উৎপাদন নিয়ে হতাশ জেলেরা।

যে পরিমাণ ইলিশ আহরণ করতে পেরেছে, তা দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে সংসার চালানো খুবই কষ্টসাধ্য। আরও কয়েকটা দিন ইলিশ শিকার করতে পারলে এই সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা যেত বলে জানিয়েছেন তারা। জেলেরা জানান, গত বছর ১৪ অক্টোবর থেকে ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। এ বছর সেটা ১০ দিন এগিয়ে ৪ অক্টোবর করা হয়েছে, যা পড়েছে মৌসুমের শেষ অমাবস্যার মধ্যে। ফলে নিষেধাজ্ঞা শেষে আর জেলেদের জালে তেমন মাছ পড়ার সম্ভাবনা নেই।

স্থানীয় একাধিক জেলে জানান, এই মৌসুমে তাদের কপালে কিছুই জোটেনি।এর মধ্যেই সরকারি নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে।তারা সবাই সেটা মানে এবং আশা করেন, নিষেধাজ্ঞা শেষে ভালো মাছ মিলবে।
বেতাগী সদর ইউনিয়নের কেওড়াবুনিয়া এলাকার জেলে মো: সোহরাব হোসেন বলেন, ‘জেলেদের জন্য যে চাল বরাদ্ধ দেওয়া হয় পর্যপ্ত নয়। প্রয়োজন স্থায়ী পুনর্বাসনের।’
নিষেধাজ্ঞাকালীন নামমাত্র চাল বরাদ্দ না দিয়ে স্থায়ী পুনর্বাসনের দাবি করছেন উপজেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুর রব সিকদার। তিনি বলেন, আগামী ৬ অক্টোবর থেকে অমাবস্যা শুরু। অমাবস্যায় প্রচুর ডিমওয়ালা ইলিশ সাগর থেকে নদ-নদীতে ছুটে আসবে।

তাই এই সময়কে সামনে রেখে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু করা না গেলে সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ নদীতে ফেরার পথে মারা পড়তো। ইলিশের প্রজনন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই নিষেধাজ্ঞা গত বছরের চেয়ে ১০ দিন এগিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। ৬-২০ অক্টোবর পূর্ণিমা ধরেই এই নিষেধাজ্ঞা সবচেয়ে বেশি কার্যকর হবে। এতে ইলিশ উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: কামাল হোসেন বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ৩ হাজার ১ ‘শ জেলে পরিবারের জন্য ২০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাকি যে জেলে রয়েছেন, তাদেরকেও এনে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *