বেশি বেশি ধান ফলানোর দুয়ার খুলবে ‘খেজুর ছড়া’বেশি বেশি ধান ফলানোর দুয়ার খুলবে ‘খেজুর ছড়া’

নিউজ ডেস্কঃ
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে প্রচলিত উচ্চ ফলনশীল জাতের চাইতে বেশি ফলনের এক ধানের জাতের সন্ধান পেয়েছেন এক কৃষক, যিনি এর নাম রেখেছেন ‘খেজুর ছড়া’।

উপজেলার কাঁঠালডাঙ্গী গ্রামের সাদেক প্রামানিকের ছেলে কৃষি শ্রমিক আব্দুর রাজ্জাক এই ধানের সন্ধান পেয়েছেন।

কৃষি বিভাগের ধারণা, প্রচলিত উচ্চ ফলনশীল জাতের সঙ্গে এই ধানের জিন সংযোজন করলে আরও ‘অধিক উচ্চ ফলনশীল’ ধান জাতের উদ্ভাবন হতে পারে।

ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, এই ধানের জাত নির্ণয় করে উচ্চ ফলানশীল ধানের সঙ্গে এটির জিন সংযোজন করলে আরও অধিক ফলনের সম্ভাবনা সৃষ্টিতে গবেষণা শুরু হয়েছে।
আব্দুর রাজ্জাক এলঙ্গী গ্রামের গৃহস্থ নজরুল ইসলামের জমিতে স্থায়ী কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন।

আব্দুর রাজ্জাক জানান, দুই বছর আগে বিরি-৫১ জাতের ধান ক্ষেতে দুইটি ভিন্ন জাতের ধান দেখতে পেয়ে তিনি আলাদা করেন; পরে এই ধান বীজ হিসেবে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে পরের বছর সেই বীজ থেকে চারা করেন। ওই বছর বীজের পরিমাণ কিছুটা বৃদ্ধি করেন।

এ বছর আমন মৌসুমে তিনি তৃতীয়বারের মতো ১৮ শতাংশ জমিতে এই বীজের ধান চাষ করেন জানিয়ে বলেন, ধান কাটার পর সেখান থেকে ধান পেয়েছেন ১৫ মণের (৬০০ কেজি) কিছু বেশি, যা প্রচলিত উচ্চ ফলনশীল জাতের তুলনায় বিঘা প্রতি ৪-৫ মণ বেশি।
এই জাতটির ধানের শীষ দেখতে খেজুর ছড়ার মতো বলে তিনি এর নাম ‘খেজুর ছড়া’ রেখেছেন বলে জানান।

ওই গ্রামের গৃহস্থ নজরুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য উচ্চ ফলনশীল জাতের তুলনায় সংগৃহীত ও সংরক্ষিত ‘খেজুর ছড়া’ বীজ থেকে একই খরচে বিঘা প্রতি ৪-৫ মণ বেশি ধান পাওয়া সম্ভব। এতে কৃষক ভেইদের অনেকটা উৎপাদন খরচ সাশ্রয় হবে।
তিনি সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই জাতটির বিস্তার লাভে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার আবেদন করেন।

স্থানীয় চাষি সোহেল রানা বলেন, “আমরা আলদা ধরনের এই ধানের জাতটির ফলন চাক্ষুষ দেখেছি; সেজন্য আমি এবং আরও কয়েকজন চাষি উনাদের কাছ থেকে নতুন এই ‘অধিক উচ্চ ফলনশীল’ জাতের বীজ সংগ্রহ করেছি লাগাব বলে। আসন্ন বোরো মৌসুমে এই জাত রোপন করে দেখি কী ফলাফল হয়।”

জাতটি বছরের দুই মৌসুমেই লাগানো যাচ্ছে বলে জানান সোহেল রানা।

কুমারখালী উপজেলা কৃষি অফিসার দেবাশীষ কুমার দাস বলেন, সাধারণত অন্যান্য সকল উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের শীষে প্রতি বোঁটায় একটি করে ধান হয়; কিন্তু সংগৃহীত এই জাতটির শীষে প্রতিটি বোঁটার সঙ্গে ৩-৫টি করে ধান হতে দেখা গেছে।
“কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে জাতটির নমুনা বীজ সংগ্রহ করে ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে। উনারা গবেষণা করে এর গ্রহণযোগ্যতার ফলাফল জানালে কৃষি বিভাগ সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কুষ্টিয়ার খামার বাড়ির উপপরিচালক শ্যামল কুমার বিশ্বাস বলেন, “সংগৃহীত এই বীজের সঙ্গে বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের যে সব উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান রয়েছে সেগুলির জিন সংযোজন করা সম্ভব হলে দেশে উচ্চ ফলনশীল ধান উৎপাদনে আরও একটি মাইলফলক সৃষ্টি হবে বলে মনে করি।”

বীজটি ইতোমধ্যে গবেষণা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট কুষ্টিয়ার আঞ্চলিক কার্যলয়ের জ্যেষ্ঠ্ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, জাতটি ইতোমধ্যে গবেষণার জন্য পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছি। আমাদের বীজ ব্যাংকে বিদ্যমান এবং প্রচলিত উচ্চ ফলনশীল জাতের সাথে জিন সংযোজন করে আরও বেশি ফলন করা যায় কিনা তা দেখা হবে। কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেলে অবশ্যই এ জাত আরও একটি উচ্চ ফলনের দ্বার খুলে দেবে।
সুত্রঃ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *