ধান গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য একুশে পদক পাচ্ছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) তিন বিজ্ঞানী। বোরো মৌসুমের উচ্চফনলশীল ধানের জাত ব্রি ধান৮৯ উদ্ভাবনের জন্য যৌথভাবে তারা ওই পুরস্কার পাচ্ছেন। পুরস্কারপ্রাপ্ত তিন বিজ্ঞানী ব্রি’র জৈব প্রযুক্তি (বায়োটেকনোলজি) বিভাগে কর্মরত। বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য দেশের ২৪ বিশিষ্ট নাগরিককে ২০২২ সালের একুশে পদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে সরকার। গেল ৩ ফেব্রুয়ারি সরকার এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।
গবেষণায় এ বছর যারা একুশে পদক পাচ্ছেন তারা হলেন- মো. আবদুস সাত্তার মণ্ডল এবং দলগতভাবে পুরস্কার পাচ্ছেন মো. এনামুল হক (দলনেতা), সাহানাজ সুলতানা (দলগত) ও জান্নাতুল ফেরদৌস (দলগত)। দলগতভাবে পুরস্কার পাওয়া তিন জন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) বিজ্ঞানী। মূলত ব্রি ধান৮৯ উদ্ভাবনের জন্য তারা এ বছর একুশে পদক পাচ্ছেন। আর মো. আবদুস সাত্তার মণ্ডল এই পুরস্কার পাচ্ছেন পুরো জীবন কৃষি গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য।
জানতে চাইল ব্রি’র জৈব প্রযুক্তি বিভাগের প্রধান ও মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. এনামুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘ব্রি ধান৮৯ উদ্ভাবনের জন্য আমাদের দলগতভাবে এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। মূলত এই পুরস্কার ব্রি-ই পেয়েছে। হয়তো আমরা সিনিয়র বলে আমাদের নির্বাচিত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ব্রি ধান৮৯ বোরো মৌসুমে চাষের উপযোগী। এর ফলন গড়ে হেক্টর প্রতি ৮ টন। ব্রি-ধান ২৯ এর চেয়ে এটি তিন থেকে চার দিন আগে কর্তন করা যায়। এটি একটি উচ্চফলনশীল জাত। ২০০৮ সালে জাতটি উদ্ভাবনে কাজ শুরু হয়। আর ২০১৮ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড জাতটির অনুমোদন দেয়।’
এ বিষয়ে ব্রি’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সাহানাজ সুলতানা সারাবাংলাকে বলেন, ‘ব্রি ধান৮৯ উদ্ভাবনের জন্য আমাদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। যেকোনো উদ্ভাবনই যৌথ গবেষণার ফল। এক্ষেত্রে যৌথভাবে আমরা জাতটি উদ্ভাবন করেছি। সেজন্যই আমাদের এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘একটি জাত উদ্ভাবনে লম্বা সময় লাগে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১২ বছর বা কখনও ১৩ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। এই জাতটি উদ্ভাবনে আমাদের ১০ বছর সময় লেগেছে।’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘জাতটি উদ্ভাবন হয়েছে খুব বেশি দিন হয়নি। এখন পর্যন্ত মাঠে এর পারফরমেন্স খুব ভালোই। মাঠে জাতটি ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।’
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে ব্রি’র জৈব প্রযুক্তি বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জান্নাতুল ফেরদৌস সারাবাংলাকে বলেন, ‘উচ্চফলনশীল ধানের জাত ব্রি ধান৮৯ উদ্ভাবনের জন্য আমাদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এর ফলন খুবই ভালো। আমাদের আগের মেগা ভ্যারাইটি ব্রি ধান২৯ এর চেয়ে এই জাতটির ফলন এক টন বেশি। কোথাও কোথাও জাতটির ফলন ১০ টন পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। এটি খুবই উচ্চফলনশীল জাত।’
তিনি বলেন, ‘ব্রি ধান২৯ এর ফলন হেক্টরে ৭ থেকে সাড়ে ৭ টন। আর ব্রি ধান৮৯ এর ফলন গড়ে ৮ টন। ভালো পরিচর্চায় ধানটির ফলন কোথাও কোথাও ১০ টন পর্যন্তও পাওয়া যাচ্ছে।‘ এক প্রশ্নের উত্তর তিনি বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ে ধানটির প্রসার ভালোই ঘটছে। সারাদেশের কৃষক জাতটির প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে। হাওর অঞ্চলের কৃষক ব্রি ধান২৯ এর পরিবর্তে ব্রি ধান৮৯ আবাদে আগ্রহ দেখাচ্ছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এখন পর্যন্ত ১০৬ জাতের ধান উদ্ভাবন করেছে। ২০১৮ সালে বোরো মৌসুমে চাষের উপযোগী ব্রি ধান৮৯ এর অনুমোদন দেয় জাতীয় বীজ বোর্ড। জাতটির পূর্ণ বয়স্ক গাছের উচ্চতা ১০৬ মিটার। এর জীবনকাল ১৫৪ থেকে ১৫৮ দিন। ব্রি ধান২৯ এর চেয়ে এই জাতের ধান ৩ থেকে ৫ দিন আগে কাটা যায়। এই ধানের অ্যামাইলোজ ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ। এক হাজার পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ২৪ দশমিক ৪ গ্রাম। চালের আকার মাঝারি চিকন। রান্নার পর ভাত ১ দশমিক ৪ গুণ লম্বা হয়। প্রতি হেক্টরে এর গড় ফলন ৮ টন। উপযুক্ত পরিচর্চা পেলে প্রতি হেক্টরে সাড়ে নয় টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম এই জাতটি।
সুত্রঃ সারাবাংলা