দেশের দক্ষিণ অঞ্চল লক্ষ্মীপুর জেলা সুপারির রাজধানী হিসেবে পরিচিত। কৃষি জমির পাশে কিংবা বাড়ির আঙিনায় সুপারি গাছ রোপন করে প্রতি বছর উৎপাদন হচ্ছে কোটি টাকার সুপারি। অর্থকারী এ ফসল এখন বাণিজ্যিকভাবে বেশ চাহিদা বেড়েছে। দেখা দিয়েছে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। উৎপাদিত এ ফসলের বাজার দর ভালো থাকায় সুপারি চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে এখানকার মানুষের। একানকার উৎপাদিত সুপারি পানের সাথে খেতে বেশ মজাদার হওয়ায় জেলাবাসীর চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে এ অঞ্চলের সুপারি।
জানা যায়, প্রতি বছর সুপারি বিক্রি করে এখানকার এক একটি পরিবার ব্যাপক লাভবান হয়ে থাকে। পরিবারের বাৎসরিক খরচের উল্লেখযোগ্য অংশের যোগান দিয়ে আসছে সুপারি বিক্রির টাকায়। আবার এ জেলায় সুপারি বিক্রি হয়ে থাকে তিনভাবে। রঙিন সুপারিতে একরকম দাম পাওয়া যায়। এরপর জাগ দিয়ে ভেজানো সুপারি মৌসুম শেষে আরেকটু চড়া দামে বিক্রি হয়। এছাড়া সুপারি শুকিয়ে মজুদ রেখে কয়েকমাস পরে খোসা ছিলেও বিক্রি করা হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি বছর ৭ হাজার হেক্টর ভূমিতে সুপারি উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ হাজার মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য সাড়ে ৪’শ থেকে ৫’শ কোটি টাকা। এবার প্রতি (১২৮০ পিছ) এক ক্রাউন সুপারি প্রথমদিকে ১৮-১৯ ‘শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জেলায় সব চাইতে বেশি সুপারি উৎপাদন হয় রায়পুর ও সদর উপজেলায়। মৌসুমে জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে সুপারি বিক্রির বাজার বসলেও সদর উপজেলার দালাল বাজার বসে সুপারির সবচেয়ে বড় হাট। সরকারি বেসরকারি উদ্যোক্তরা এগিয়ে আসলে এখানকার উৎপাদিত সুপারি দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার পাশাপাশি এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
সুপারি চাষীদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসের বৃষ্টির পানিতে সুপারি গাছে ফুল আসে। এরপর এ ফুল থেকে সৃষ্ট সুপারি। আর পুরোপুরি পাকা হয়ে হলুদ রং ধারন করে কার্তিক-অগ্রহায়ন মাসে। মূলত কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসই সুপারির ভরা মৌসুম। আর তখনই সুপারি বিক্রি শুরু করেন সুপারি চাষিরা। এখন এখানকার প্রতিটি বাগানে সুপারির হলুদ রংয়ের সমারেহ মাইলের পর মাইল পাকা সুপারির হলুদ রং এ চেয়ে গেছে। এতে হাঁসি ফুটেছে সুপারির বাগান মালিকদের মুখে।
চাষিরা জানান, সুপারি বাগানের পরিচর্যা, রক্ষণাবেক্ষণে তারা কৃষি অফিসের কোনো পরামর্শ ও সহযোগিতা কিছুই পান না। এতে করে গাছগুলো দুর্বল হয়ে পড়ায় আশানুরূপ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না।
সুপারি ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বছর এ জেলায় হাজার হাজার মেট্রিক টন সুপারি উৎপাদন হয়। এখানকার সুপারির আকার, স্বাদ ও রং তুলনামূলক ভাবে বড় হওয়ায় বাজারে বেশ চাহিদা রয়েছে। মৌসুমে সুপারি ক্রয় করতে ভিড় জমান দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা সুপারি ব্যবসায়ীরা।
লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, এ অঞ্চলের সুপারির জাত উন্নয়নে গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি চাষীদের মাঝে উন্নত জাতের চারা বিতরণ করা গেলে উৎপাদন আরো বাড়ানো সম্ভব। প্রাকৃতিক কারণে এ জেলায় সুপারের উৎপাদন হওয়ায় এবং সুপারী বিক্রী করে আশানুরূপ আয় হওয়ায় মানুষ সুপারি বাগান করতে বেশি আগ্রহী হয়। এছাড়া সঠিক সময়ে সুপারি চাষীরা বাগান পরিচর্যার কারণে এ জেলায় সুপারির বাম্পার ফলন হয়ে থাকে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ, বেশি বেশি সুপারি গাছ রোপন, কৃষক ও সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগের লোকজনের আন্তরিক প্রচেষ্টাই হতে পারে লক্ষ্মীপুরে সুপারির ঐতিহ্যকে ধরে রাখার পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
সুত্রঃ পূর্বপশ্চিমবিডি