বিশুদ্ধ মধুতে পানি বা অন্য কোনো মিষ্টিকারক পদার্থ মিশ্রিত করা হয় না। মধুর অসাধারণ গুণের কারণে প্রাচীনকাল থেকেই এর ব্যবহার সম্পর্কে মানুষ অবগত ছিল। এতে আছে ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৫, বি৬, আয়োডিন, কপার, জিংকসহ আরও অনেক অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা আমাদের দেহের বাহ্যিক, অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করার গুণ ধারণ করে ।
মধু কখনো নষ্ট হয় না। কিন্তু কী করে জানবেন যে মধুটি খাঁটি কিনা। এখন বাজারে নানা ধরনের মধু পাওয়া যায়। কখনো বা সুন্দরবনের খাঁটি মধুর নাম দিয়ে ভেজাল, রাসায়নিকযুক্ত উপাদান বিক্রি করাও হয়। শুধু তাই নয়, অনেক নামি প্রতিষ্ঠানের প্রক্রিয়াজাত মধুতেও মেলে ভেজাল।
মধু যে ভেজাল মেশানো কি না তা যাচাই করেও দেখি না। খাঁটি মধু বলা হয় সেই মধুকেই, যে মধু শীতকালে জমে যায়। এছাড়া যে মধু সারা বছর তরল থাকে তা কিন্তু মোটেই খাঁটি মধু নয়। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক খাঁটি মধু চিনে নেওয়ার কয়েকটি সহজ উপায়।
মধু খাঁটি কি না, তা বোঝার সব চেয়ে সহজ রাস্তা পানিতে মেশানো। এক গ্লাস পানিতে এক চামচ মধু দিন। তার পরে গ্লাসটি আস্তে আস্তে নাড়ান। মধু যদি পানির সঙ্গে তাড়াতাড়ি মিশে যায়, তা হলে সেটি নকল। আর মধু যদি ছোট গোলাকার পিণ্ডের মতো হয়ে পানিতে আস্তে আস্তে মিশতে থাকে, তা হলে সেটি খাঁটি।
গ্লাসে বা পাত্রে খানিকটা পানি নিন। তার মধ্যে এক চামচ মধু দিন। যদি মধু পানির সঙ্গে সহজেই মিশে যায়, তাহলে বুঝবেন যে এটা অবশ্যই নকল। আসল মধুর ঘনত্ব পানির চাইতে অনেক বেশি, তাই তা সহজে মিশবে না। এমনকি নাড়া না দিলেও মধু পানিতে মিশবে না।
মধু আঙুলে লাগান। খুব চটচটে কি? মধু যত খাঁটি, তত চটচটে। শিশির তলায় মধু কি জমাট বাঁধছে? তা হলে এটি নকল মধু।
মধুতে কি পিঁপড়া ধরছে? তা হলেও বুঝতে হবে এটি ভেজাল মেশানো। কারণ পুরোপুরি খাঁটি মধুতে পিপড়ে ধরে না। মধু নকল কি না তা বোঝার আরও এক সহজ রাস্তা, এতে ফেনা হচ্ছে কি না দেখা। ফেনা হলে এটি ভেজাল মেশানো।
মধুকে ফ্রিজের মধ্যে রেখে দিয়ে আসল নাকি নকল তা নির্ণয় করা যায়। খাঁটি মধু জমবে না। ভেজাল মধু ফ্রিজে রাখলে পুরোপুরি না জমলেও জমাট তলানি পড়বে।
মধুর পুরুত্ব দেখার মাধ্যমে আসল মধু চেনা যায়। বৃদ্ধাঙ্গুলে সামান্য মধু নিন, যদি তা বেশ আঠালো মনে হয় তাহলে বুঝবেন এটি আসল মধু। দেখবেন দুটো হাত চিটেই থাকছে।
এক টুকরো সাদা কাপড়ে মধু মাখান। আধা ঘণ্টা রাখুন। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। যদি দাগ থেকে যায়, বুঝবেন মধুটি খাঁটি নয়। শীতের দিনে বা ঠান্ডায় খাঁটি মধু দানা বেঁধে যায়।
মধুর স্বাদ হবে মিষ্টি, এতে কোনো ঝাঁঝালো ভাব থাকবে না। মধুতে কখনো কটু গন্ধ থাকবে না। খাঁটি মধুর গন্ধ হবে মিষ্টি ও আকর্ষণীয়।
মোমবাতির সলতে নিয়ে মধুতে ডুবিয়ে আগুন দিয়ে জ্বালানোর চেষ্টা করুন। যদি জ্বলে ওঠে, তাহলে বুঝবেন যে মধু খাঁটি। আর যদি না জ্বলে, বুঝবেন যে মধুতে পানি মেশানো আছে।
অনেকদিন ঘরে রেখে দিলে মধুতে চিনি জমতেই পারে। কিন্তু যদি পাত্রসহ মধু গরম পানিতে কিছুক্ষণ রেখে দেখুন। এই চিনি গলে মধু আবার স্বাভাবিক হয়ে আসবে। কিন্তু নকল মধুর ক্ষেত্রে এটা হবে না।
এক টুকরো ব্লটিং পেপার নিয়ে তাতে কয়েক ফোঁটা মধু দিন। যদি কাগজ তা সম্পূর্ণ শুষে নেয়, বুঝবেন মধুটি নকল আছে।
দুই-তিন ফোঁটা ভিনেগার এবং পানি মধুর সাথে মিশিয়ে ঝাঁকিয়ে নিন। মিশিয়ে নেওয়ার পর যদি ফেনার মতো তৈরি হয় তাহলে বুঝে নিবেন এটি নকল মধু।
হাতের তালুতে মধু নিন কয়েক ফোঁটা। যদি দেখেন যে তা অন্যান্য তরলের মতোই গড়িয়ে যাচ্ছে তাহলে ধরে নেবেন সেই মধু খাঁটি নয়। মধু খাঁটি হলে কখনই গড়িয়ে যাবে না। এক জায়গায় জমাট বেঁধে থাকবে।
মধুর স্বাভাবিক তাপমাত্রা ১৪০ ডিগ্রির কম, যা আপনার দুধের গ্লাসের চেয়ে অনেক কম। যখন আপনি গরম দুধে মধু মেশাবেন তখন এর উপাদানগুলো বিষাক্ত হয়ে ওঠে যা স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক।
সুত্রঃ ঢাকাটাইমস