নিউজ ডেস্কঃ
দোকানে সাজিয়ে রাখা ফুলে পানি স্প্রে করে সেগুলোকে তাজা রাখছেন বনানীর দোলনচাঁপা ফুলবিতানের বিক্রয়কর্মী মো. পলাশ। লক্ষ্য একটাই, তাজা ফুল ক্রেতাদের হাতে তুলে দেওয়া। পাশাপাশি নিজের বিক্রি বাড়ানো। কর্মী হিসেবে তাঁর দেখা সবচেয়ে কম বিক্রির বছর ২০২০। শেষ দিনেও নেই বেচা-বিক্রি। তবে তাঁর দোকানে রয়েছে নানা জাতের ফুল।
তিনি বলেন, ‘এমন খারাপ ব্যবসা কখনো হয় নাই। করোনা সব নষ্ট করছে। আগের বছর এই সময় ভালোই বিক্রি করেছি, তবে এ বছর কিছুই নাই। যে দুই-চারটা অর্ডার আছে তা-ও খুচরা।’
শুধু পলাশ নন, পলাশের মতো হতাশা নিয়ে গুলশান, বনানী এলাকার দোকানে সাজিয়ে রাখা হয়েছে তাজা ফুল। রয়েছে ফুলের বাহারি তোড়া, তবে এখন অভাব ক্রেতার। ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন পর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে তাঁরা বিপাকে পড়েছেন। প্রতিদিন ফেলতে হচ্ছে হাজার হাজার টাকার ফুল। পাইকারি বাজারের সঙ্গে প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। তাঁদের দাবি, তাঁরা আশা করেছিলেন নতুন বছর শুরুর মধ্য দিয়ে ফুলের ব্যবসাটা শুরু করতে পারবেন, কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। একদিকে করোনার প্রভাব, অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এ ছাড়া কমেছে অফিস-আদালতসহ নানা ক্লাবের অনুষ্ঠান। শহরে নেই কোনো বিনোদন, সংবর্ধনা। সব মিলিয়ে দিন হাজিরা তুলতে হিমশিম খাচ্ছেন অভিজাত এই এলাকার প্রায় ১৫০ ফুল ব্যবসায়ী।
১০ বছর ধরে ফুলের ব্যবসা করছেন সন্তোষ। বনানীর ১২ নম্বর রোডে তাঁর দোকানের নাম ফ্লোলোরিয়া। ক্রেতার হাতে তরতাজা ফুল দিতে প্রস্তুত তিনি। তবে ভালো নেই তাঁর ব্যবসা। বছরের শেষ দিনে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তাঁর বিক্রি হয়েছে চারটি তোড়া।
সন্তোষ বলেন, এই এলাকায় সবচেয়ে বেশি অফিস আর কিছু স্কুল-কলেজ রয়েছে। তবে সব স্কুল-কলেজ তো এখন বন্ধ আর অফিস অর্ডার নেই বললেই চলে। তিনি আরো বলেন, সামনের দিনগুলোতে করোনা গেলে আশা করি ব্যবসা ভালো হবে। একই কথা ফুল ব্যবসায়ী ওয়াসিম হাওলাদারের। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, আগে বড় হোটেলগুলো থেকে প্রতি মাসে অনেক টাকার অর্ডার আসত। কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার অর্ডার এখন কমে হয়েছে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা।
গুলশান-বনানী এলাকাভিত্তিক খুচরা ফুল ব্যবসায়ী সংগঠন ফ্লাওয়ার ফান্ড বিডি ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি এম এ বাশার বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন পর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে হতাশায় ভুগছি। তেমন কোনো বিক্রি নেই। তা ছাড়া অফিস অর্ডার কমে গেছে। করোনায় আমাদের ব্যবসা নেমে গেছে অর্ধেকে। আমরা কোনো ধরনের ঋণ বা প্রণোদনা পাচ্ছি না।’ তিনি আরো বলেন, এই গুলশান-বনানীতে এমন অনেক দোকান আছে, যারা এই সময়টায় দিনে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করত, কিন্তু এখন তাদের দিনে দেড় লাখও হয় না।
রাজধানীর শাহবাগে অর্কিড ফ্লাওয়ার শপে চারজন কর্মী নিয়ে কাজ করছেন মালিক মো. মোমিন হোসেন। বিক্রি কম হলেও ব্যবসার আশায় আগাম বানিয়ে রাখছেন ফুলের তোড়া। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন ফুলের দাম কম, তাও আবার বেচাকেনা নাই। সব কিছু বন্ধ, আর কোনো অনুষ্ঠান নাই। নতুন বছরের ফুলের বিক্রি হয় রাতে কিন্তু ৮টার পর দোকান বন্ধ, তাই এখন বিক্রির আশায় আছি।’
তিনি আরো বলেন, গেল বছর এ সময়ে বিক্রি করেছি প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার ফুল, কিন্তু এখন দিনে ১০ হাজার টাকাই বিক্রি করতে পারছি না। নতুন বছরের এই সময়টায় জান্নাত ফুল ঘরের স্বত্বাধিকারী মো. জাবেদ বিক্রি করেন লাখ টাকার ফুল। তবে এবার তাঁর ব্যবসায়ও নেমেছে ভাটা।
ঢাকা ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সিনিয়র সদস্য নান্টু মোল্লা বলেন, ‘আমাদের ব্যবসা এই সিজনে ভালো নাই। স্কুল-কলেজ বন্ধ, নববর্ষের শুভেচ্ছার ফুলেরও বিক্রি নাই, বিয়ে-সাদি তো আগে থেকে অনেক কম। পাইকারি চাহিদা কম বলে প্রতিদিন নষ্ট হয় হাজার হাজার টাকার ফুল।’
সুত্রঃ কালের কণ্ঠ