মাচায় উঠলেই ফলন দ্বিগুণমাচায় উঠলেই ফলন দ্বিগুণ

নিউজ ডেস্কঃ
মাচা তৈরি করে টমেটো চাষ করলে ফলন দ্বিগুণ হয়। টমেটোও আকারে বড় ও হৃষ্টপুষ্ট হয়। দামও ভালো পাওয়া যায়।

মাটিতে এক বিঘায় ৮০–৮৫ মণ আর মাচায় ২০০ মণের মতো ফলন হয়।

মাচায় বেশি দিন ফলন পাওয়া যায়। তরতাজা থাকায় দামও বেশি।

অবলম্বন পেলে টমেটোগাছও ওঠে দাঁড়াতে পারে। দ্বিগুণ ফলন দিয়ে বদলে দিতে পারে চাষির ভাগ্য। রাজশাহীতে সাত বছর ধরে টমেটো চাষে এমন সম্ভাবনাই দেখা গেছে। জমিতে বাঁশের কাঠি দিয়ে মাচা তৈরি করে তাতে টমেটোগাছ উঠিয়ে দিলেই বেশি লাভ করার সম্ভাবনাটি কাজে লাগানো যায়।

স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা ও চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাটিতে চাষ করা টমেটো গাছে পাকানো কঠিন। কারণ মাটিতে পড়ে থাকায় পাকার আগেই অধিকাংশ টমেটো পচে নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু মাচায় সেই সমস্যা হয় না। আঙুর ফলের মতো সব টমেটো ঝুলে থাকে মাচায়। টমেটোও তুলনামূলক হৃষ্টপুষ্ট হয়। মাচা থেকেই আহরণ করা যায় গাছপাকা টমেটো। গাছও বেশি দিন বাঁচে। সব মিলিয়ে মাটির চেয়ে মাচায় দ্বিগুণ ফলন হয়। বাজারে দামটা যদি ভালো থাকে, তাতে খুলে যায় চাষির ভাগ্য।

 

সম্প্রতি সরেজমিনে রাজশাহীর বিভিন্ন মাঠে ঘুরে দেখা গেছে, মাটিতে চাষ করা শীতের টমেটো শেষ হওয়ার পথে। যেসব খেতে টমেটো রয়েছে, সেগুলো আকারে ছোট, দামও খুব কম। তবে যেসব জমিতে মাচা বানিয়ে চাষ করা হয়েছে, সেখানে এখনো গাছগুলো বেশ তরতাজা, ঝুলে আছে কাঁচা–পাকা টমেটো। বিক্রি হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে।

চাষিদের হিসাব অনুযায়ী, শুধু মাটিতে এক বিঘা জমিতে টমেটো চাষে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। আর ফলন পাওয়া যায় সর্বোচ্চ ৮০ থেকে ৮৫ মণ। অন্যদিকে মাচায় খরচ হয় প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এতে ফলন পাওয়া যায় ২০০ মণের মতো। এ ছাড়া মাচায় চাষ করা টমেটো বেশ হৃষ্টপুষ্ট দেখায়। মান ভালো হওয়ায় এর দামও বেশি হয়।

রাজশাহীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার গোদাগাড়ী উপজেলাতেই সবচেয়ে বেশি শীতকালীন টমেটোর চাষ হয়ে থাকে। এবারে আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সাড়ে ৫০০ হেক্টর হয়েছে মাচায়। পবা উপজেলায় ২৩৫ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। এর মধ্যে মাচায় হয়েছে ১০০ বিঘা।

রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে গোদাগাড়ী উপজেলার চৈতন্যপুর গ্রামের সৌখিন চাষি মনিরুজ্জামান ২০১৩ সালে প্রথম মাচা পদ্ধতিতে টমেটো চাষ শুরু করেন। ধীরে ধীরে এই পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মনিরুজ্জামান এবারে সাত বিঘা জমিতে মাচা পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করেছেন। সেখানে রয়েছে তাঁর ছোট্ট একটি খামারবাড়িও। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে চোখ জুড়িয়ে গেল। গাছে গাছে ঝুলে আছে চকচকে টমেটো। মৌসুমের শেষের দিকে এসেও টমেটোর আকার বড় রয়েছে।

গোদাগাড়ীতে সাধারণত আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে চাষিরা জমিতে টমেটোর বীজ ফেলেন। এক মাস পরে চারা লাগান। এর দুই মাস পরে টমেটো পুষ্ট হয়। তবে ভালো দাম পাওয়ার আশায় অনেক চাষি অপুষ্ট টমেটো তুলে হরমন ছিটিয়ে বাজারে তোলেন। স্থানীয়ভাবে লোকজন ঠাট্টা করে এই টমেটোকে ‘প্লাস্টিক টমেটো’ বলেন। টমেটোর পর ওই জমিতে ধান চাষ করা হয়।

চৈতন্যপুরেই গোদাগাড়ীর উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অতনু সরকারের সঙ্গে দেখা হয়। তিনি বলেন, মাচার টমেটো যেহেতু গাছেই পাকানো হয়, সেহেতু এটির পুষ্টিমান পুরোপুরি পাওয়া যায়। এই টমেটো বোঁটাসহ বাজারে দেখা যায়। আর যেগুলো হরমন দিয়ে পাকানো হয়, সেগুলোর বোঁটা খুলে পড়ে যায়, স্বাদও তুলনামূলক কম। তিনি বলেন, মাচার টমেটো অন্তত আরও দুই মাস থাকবে। তাই সামনে রোজার বাজারে চাষিরা টমেটোর ভালো দাম পাবেন বলে আশা করা যায়।

অতনু সরকার আরও বলেন, টমেটোর মাচা তৈরি করতে যে কাঠি ব্যবহার করা হয়, সেটা আলকাতরা দিয়ে ব্যবহার করলে তিন বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। এতে পরের বছরের মাচার খরচ কমে যায়। চাষিদের বেশি লাভ হয়।

চাষি মনিরুজ্জামান বলেন, মাচায় টমেটো চাষে খরচ বেশি। তবে দাম ভালো থাকলে আয় বেশি হয়। আর বাজার ভালো না পাওয়া গেলে লোকসানের আশঙ্কাও বেশি থাকে। তাই তাঁর দাবি, সরকার ধানের মতো টমেটোর দামও যেন বেঁধে দেয়, তাহলে চাষিরা লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পেতেন।
সুত্রঃ প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *