নড়াইল সদর উপজেলার কামাল প্রতাপ গ্রামের আন্ধারকোটা বিলে অপকিল্পিতভাবে মাছের ঘের কাটায় তলিয়ে গেছে অন্তত এক হাজার একর জমির ফসল। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পাঁচটি গ্রামের অন্তত পাঁচ শতাধিক কৃষকদের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে এইসব মাঝের ঘের।
পুরো মাঠ জুড়ে এখন পানি থৈ থৈ করছে। কষ্টার্জিত আমন ধান তলিয়ে যাওয়ায় ভুক্তভোগী কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান না হলে এই এলাকার চাষিদের মাঝে রীতিমতো হাহাকার সৃষ্টি হবে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, নড়াইল সদর উপজেলার বাশগ্রাম ইউপির কামালপ্রতাপসহ পার্শ্ববর্তী আমাদা, কুচিয়াবাড়ী, নওয়াপাড়া ও ঝিকড়া গ্রামবাসীর জীবন-জীবিকার একমাত্র অবলম্বন আন্ধারকোটা বিলের জমি। এই বিলে সারা বছর দুবার ফসলের চাষ করেন চাষিরা।
উৎপাদিত ফসল দিয়েই তাদের সংসারের খরচ, সন্তানদের লেখাপড়া, চাষাবাদের খরচসহ অন্যান্য খরচ চলে। এলাকাবাসীর প্রাকৃতিক মাছের চাহিদা পূরণ হতো এই বিলের মাছ থেকে। কিন্তু এক বছর আগে বহিরাগতরা কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বিলের নিচু এলাকায় অন্তত দেড়শ একর জমি লিজ নিয়ে বেশ কিছু ঘের কাটেন। যার কারণে বর্ষা মৌসুমে বিলের পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হয়।
বর্তমানে এই বিলের অন্তত এক হাজার একর জমির ফসল পানির নিচে। এই করোনাকালে চাষিরা ধার দেনা করে সার, ওষুধ ও বীজ সংগ্রহ করে ধানের চাষ করলেও সবই তলিয়ে গেছে অরিকল্পিত ঘেরের কারণে। বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ফসল তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা।
কামাল প্রতাপ গ্রামের চাষি শরিফুল ইসলাম বলেন, এলাকার চাষিরা বীজ ও সার কিনে ধান রোপণ করেছি। কিন্তু ঘেরের কারণে পানি জমে সব ধান তলিয়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের এলাকায় এই ঘেরের জন্য দুর্ভোগ বেড়েছে। এখন কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। নড়াইল-২ আসনের এমপি দ্রুত সমাধান করে দিলে হয়তো পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবো।
কৃষক মিকাইল কাজী বলেন, ‘এই বিলের পানি নিচু এলাকা দিয়ে বের হতো। কিন্তু বহিরাগতরা এসে জমি লিজ নিয়ে ঘের কাটায় পানি বের হতে পারছে না। যার কারণে পুরো বিল ডুবে গেছে। আমরা দেড়শ টাকা করে ধানের বীজ কিনে ধান লাগিয়েছি, সার দিয়েছি। সবকিছুই ডুবে গেছে। এখন আমরা ছেলে মেয়ে নিয়ে কিভাবে বাঁচবো আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। প্রশাসনের কাছে দাবি আমাদের এই দুর্যোগ থেকে বাঁচান।
কৃষক ইনজাহের কাজী, সাবেক ইউপি সদস্য ইমরুল শেখ জানান, প্রভাবশালীরা অনেকের জমি লিজ নিয়ে আবার কারো কারো জমি চাপ প্রয়োগ করে লিজ নিয়ে ঘের কেটেছে। ঘের কাটার কারণে কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছুদিন আগে প্রবল বর্ষণে পুরো বিল পানিতে সাদা হয়ে হয়। এলাকাবাসী মিলে ঘের কেটে পানি বের করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ঘের মালিকরা ভয়ভীতি দিয়ে কাটা জায়গা বন্ধ করে দেয়। যার কারণে পানি বের হতে পারেনি। এই মাঠে আশেপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষের জমি রয়েছে। তাছাড়া এই বিল থেকে আমরা দেশীয় প্রজাতির মাছ পেতাম। কিন্তু ঘের কাটার জন্য সেই মাছ বিলুপ্তি হয়ে গেছে।
দেশীয় প্রজাতির মাছের প্রজননেরও কোনো সুযোগ নেই। লোহাগড়া উপজেলার কামঠানা গ্রামের মিন্টু মিয়া ৭৫ একর জমি লিজ নিয়ে ঘের কেটেছেন। এছাড়া পার্শ্ব বর্তী আমাদা গ্রামের কামরুল খান ৪০ একর এবং কামাল প্রতাপ গ্রামের এনায়েত কাজী ১৫ একর সহ আরো কিছু প্রভাবশালী মিলে প্রায় দেড়শত একর জমিতে ঘের কেটেছেন।
ঘের মালিক মিন্টু মিয়া বলেন, জলাবদ্ধতার জন্য অন্য ঘের মালিকরাও দায়ী। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু আমার ঘেরের মুখ কেটে দেওয়া হয়েছিল। ঘেরের মুখ কেটে দেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমার অনেক মাছ ভেসে গেছে। তাই কেটে দেওয়া ঘেরের দুটি মুখ বন্ধ করে দিয়েছি।
নড়াইল নড়াইল সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, মৎস্য বিভাগ ও কৃষি বিভাগের সমন্বয় করে এবং সেখানে সরকারি জমির ওপর দিয়ে ক্যানাল করে কিভাবে খালের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা যায় সে চেষ্টা করা হচ্ছে।
নড়াইলের ডিসি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, কৃষকদের সমস্যা সমাধানে নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা. স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ঘের মালিক ও কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করা হবে। আশা করি সুষ্ঠু সমাধানের মধ্যদিয়ে এলাকার এই সমস্যার সমাধান করা হবে। তবে ভুক্তভোগী চাষিরা তাদের জীবন-মরণ সমস্যা সমাধানের মধ্যদিয়ে মাঠ জুড়ে আবারো সবুজ ফসলে মাঠ ভরে উঠবে এবং তাদের মুখে আবারো হাসি ফুটবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন।
সুত্রঃ ডেইলি বাংলাদেশ