মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল ॥
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে অসময়ের টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে শতশত হেক্টর কাঁচা আধা পাকা বোরো ধান ক্ষেত। শেষ সময়ে এসে ভেঙ্গে গেছে কৃষকের স্বপ্ন। ধান কেটে বাড়ি উঠাতে না পেরে চরম বিপাকে পরেছেন কৃষকরা। এক দিকে মহামারী করোনা ভাইরাস সংক্রমনের থাবা অপর দিকে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে বোরো ধান কেড়ে নেওয়ায় শতশত কৃষক এখন সর্বশান্ত। গতকাল শুক্রবার উপজেলার কয়েকটি এলাকায় খোঁজ নিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ্য কৃষকরা অভিযোগ করেছেন, একমুঠো ধানও গোলায় তুলতে পারবো না, সারা বছর আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।
মির্জাপুর উপজেলা কৃষি অফিস সুত্র জানায়, মির্জাপুর পৌরসভা ও ১৪ ইউনিয়নের চলতি মৌসুমে বোরো ধানের লক্ষমাত্রা ছিল ২০ হাজার ৫০০শ হেক্টর। উৎপাদন হয়েছে ২০ হাজার ৮১৫ হেক্টর। আবাহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং বীজ, সার, কীটনাশকের দাম কম এবং সেচের কোন সংকট না থাকায় চলতি বছর মির্জাপুর পৌরসভা, উপজেলার মহেড়া, জামুর্কি, ফতেপুর, বানাইল, আনাইতারা, ওয়ার্শি, ভাদগ্রাম, ভাওড়া, বহুরিয়া, লতিফপুর, গোড়াই, আজগানা, তরফপুর এবং বাঁশতৈল এই ১৪ ইউনিয়নে বোরো ধান আবাদের বাম্পার পলন হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টি এবং নদীতে জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় নিচু অঞ্চলের কাঁচা ও আধা পাকা বোরো ধান ক্ষেত তলিয়ে গেছে। উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের বহনতলী, সুতানরী, থলপাড়া, গোবিন্দপুর, বন্যাতলী, পারদিঘিী, চাকলেশ্বর ও গোড়াইল, গাড়াইল, বানাইল, মশাজান, পাথরঘাটা, তরফপুর, বারকাটি বিলের শতশত হেক্টর বোরো ধান ক্ষেত এখন পানির নিচে। একই অবস্থা মহেড়া ইউনিয়নের বিল মহেড়া, দেওভোগ, বলটিয়া, তেতুলিয়া, জামুর্কি ইউনিয়নের উফুলকী, ধল্যা, ভাদগ্রাম, বর্ধনপাড়া, রোয়াইল, ভাওড়া, কামারপাড়া, বহুরিয়া, লতিফপুর, টাকিয়া কদমা, গোড়াই, আজগানাসহ বিভিন্ন গ্রামের নিচু এলাকার ৫০০শত হেক্টর বোরো ধান ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে পরেছেন কৃষকরা। এক দিকে জমির ধান নষ্ট অপর দিকে ধানকাটা শ্রমিকের মজুরী বেশী হওয়ায় অনেকেই শ্রমিকের াভাবে ধান কাটতেই পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন।
মির্জাপুর উপজেলার তিন নম্বর ফতেপুর ইফনিয়র পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রউফ বলেন, তার ইউনিয়নে অন্ততপক্ষে দেড়শ হেক্টও জমির পাকা ও আধা পাকা বোরো ধান ক্ষেত পানির নিচে। ফতেপুর ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল জলিল (৫৬) ও রহমত আলী (৬০) অভিযোগ করেন, ২০০শ শথক জমিতে বোরো আবাদ করেছিলেন। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ধান তলিয়ে যাওয়ায় তাদেও স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে। সারা বছর কি খাবেন এই চিন্তায় এখন কান্নাকাটি করছেন। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ধান তলিয়ে যাওয়ায় শেষ সময়ে এসে কৃষকরা ধান কাটতে না পেরে অনেকেই কান্নাকাটি করছেন। অনেকেই পানির নিচ থেকে নৌকা ও ভেলায় করে ধান কাটার চেষ্টা করছেন। ক্ষতিগ্রস্থ্য কৃষকরা সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য কৃষি অফিসসহ স্থানীয় এমপি, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট আকুল আবেদন জানিয়েছেন।
এ ব্যাপাওে উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ মশিউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মির্জাপুওে এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিছু কিছু এলাকার নিচু জমির ধান বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে নষ্ট হয়েছে। যে সব এলাকায় বোরো ধান ক্ষেত বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে ঐ সব এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ্য কৃষকদের তালিকা তৈরী করা হচ্ছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের সার্বিক ভাবে সহযোগিতা করা হবে।