নিউজ ডেস্কঃ
গত বছরের হেমন্তে চাষ করা পেঁয়াজ এখন খেত থেকে তুলে বিক্রি করছেন ইয়ানুর। প্রতি কেজির দাম ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা।
একেকটি পেঁয়াজের ওজন ৪০ থেকে ৯০ গ্রাম। কোনোটি ওজন এরও বেশি। রং টকটকে লাল। বাজারে ওঠার পর ক্রেতারা বলছেন, বিদেশি। কিন্তু ভোলায় প্রথমবারের মতো এই পেঁয়াজের চাষ করা কৃষক ইয়ানুর রহমান বলছেন, এটি উচ্চফলনশীল জাতের গুটি বা মুড়িকাটা পেঁয়াজ। চলতি রবি মৌসুমে অন্য কৃষকেরা যখন চাষ শুরু করেছেন, তিনি তখন আগাম চাষ করা পেঁয়াজ বিক্রি করছেন।
ইয়ানুর রহমান ভোলার সবুজ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার নামের একটি খামারের পরিচালক। গুটি পেঁয়াজের চাষ করে তিনি বাম্পার ফলন পেয়েছেন। মূলত রবি মৌসুমে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি) পেঁয়াজের চাষ হলেও ইয়ানুর গুটি পেঁয়াজের চাষ শুরু করেন গত বছরের হেমন্তে (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর)। তখন তিনি এক একরের একটু বেশি আয়তনের জমিতে চাষ শুরু করেন। ফলনের আশা করছেন ১২ মেট্রিক টন। এর মধ্যেই এক সপ্তাহ ধরে কিছু পেঁয়াজ তুলে ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছেন তিনি।
ভোলা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন বলেন, তিনি ইয়ানুর রহমানের পেঁয়াজের খেত পরিদর্শন করেছেন। ইয়ানুরই প্রথমবারের মতো ভোলায় মুড়িকাটা পেঁয়াজের চাষ করেছেন তিনি। ঘের-বেড়ির উঁচু জমির ওপর ছোট ছোট আম, কুল, লেবুখেতের মধ্যে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ করে সফলও হয়েছেন। অন্য কৃষকেরা এভাবে আবাদ করলে ভোলা সদর উপজেলায় কমপক্ষে ১৫০ একরে ও জেলায় প্রায় ১ হাজার একর জমিতে এই পেঁয়াজের আবাদ সম্ভব। এ ছাড়া চরাঞ্চলেও জমি তৈরি করে আগাম পেঁয়াজ আবাদ সম্ভব।
ন্যায্যমূল্যে উন্নত বীজ, সংরক্ষণাগার নির্মাণ, বিদ্যুৎ–সুবিধা পেলে তাঁর মতো ভোলার অন্য চাষিরাও মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ করে লাভবান হতে পারবেন।
গত শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, সবুজ বাংলা কৃষি খামারে নারী-পুরুষ মিলিয়ে ৫০ জনের বেশি শ্রমিক কাজ করছেন। কেউ বড় পেঁয়াজ তুলছেন, কেউ পেঁয়াজ পরিষ্কার করছেন। কেউ আবার জৈব সার মিশিয়ে খেতের মাটি চাষের উপযোগী করে তুলছেন।
মূলত ইয়ানুরের খামারে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আম, লিচু, ধান, লেবু, আলু, ডালসহ মরিচের চাষ হয়। এর মধ্যেই মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ করেছেন তিনি। ইয়ানুরের কৃষিকাজের অভিজ্ঞতা প্রায় ২০ বছরের। তিনি বলছিলেন, দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়তি। বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়। এ অবস্থায় তিনি পেঁয়াজ আবাদের তাগিদ বোধ করেন। কিন্তু গত রবি মৌসুমে (২০২০) ছিল বৈরী আবহাওয়া। এর মধ্যেই প্রথম দফায় ছয় একর জমিতে পেঁয়াজ চাষ শুরু করেন। প্রতি একরে খরচ হয় প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। বৈরী আবহাওয়া সত্ত্বেও ফলন ভালো হয়। একেকটি পেঁয়াজের ওজন ছিল ৪০ থেকে ৯০ গ্রাম। মোট ফলন হয় ১ হাজার মণ। দেশের বাজারে ভারতের পেঁয়াজের আধিক্য আছে। এমন অবস্থায় নিজের জমিতে চাষ করা পেঁয়াজ এক মোটে বিক্রি করতে গেলে লোকসানের সম্ভাবনা থাকে।
ইয়ানুর বলেন, সংরক্ষণ করতে পারলে লাভ আছে। গত রবি মৌসুমে যখন তিনি পেঁয়াজ তোলা শুরু করেন, তখন বাজারে দাম ছিল ৩৮ থেকে ৪৫ টাকা। তাই তিনি সংরক্ষণের চেষ্টা করেন। কিন্তু কীভাবে সংরক্ষণ করে রাখবেন, তা ভেবে পাচ্ছিলেন না। পরে গুগল ঘেঁটে ও অভিজ্ঞ কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জোগাড় পদ্ধতিতে ৬০০ মণ (২৪ মেট্রিক টন) পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেন। ইয়ানুর বলেন, জোগাড় পদ্ধতিতে ভারতের কৃষকেরাও পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেন। এই পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করতে গিয়ে তাঁর প্রচুর খরচ হয়েছে। একটি কক্ষের মেঝের ৮ থেকে ৯ ইঞ্চি ওপরে পাটাতন বসিয়েছেন।
পাটাতনের ওপর পেঁয়াজ রেখে তার মধ্যে ফ্যান বসিয়েছেন। দিনে ২০ থেকে ২২ ঘণ্টা বাতাস দিতে হয়। বিদ্যুৎ বিলসহ মোট খরচ হয়েছে ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা। তবে এই পদ্ধতির কাঠামো একবার গড়ে তুললে আগামী ১০ বছর পর্যন্ত বিদ্যুৎ খরচ ছাড়া আর কোনো খরচ করতে হবে না। ইয়ানুরের আশা, ন্যায্যমূল্যে উন্নত বীজ, সংরক্ষণাগার নির্মাণ, বিদ্যুৎ–সুবিধা পেলে তাঁর মতো ভোলার অন্য চাষিরাও মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ করে লাভবান হতে পারবেন।
সুত্রঃ প্রথম আলো