যশোরের বাঘারপাড়ার কৃষকেরা আখ চাষে ঝুঁকছেনযশোরের বাঘারপাড়ার কৃষকেরা আখ চাষে ঝুঁকছেন

নিউজ ডেস্কঃ
যশোরের বাঘারপাড়ার কৃষকেরা দিন দিন আখ চাষে বেশ ঝুঁকেছেন। আখ চাষিরা জানান আখে আশানুরূপ ফলন হয়ে থাকে। যে কারনে চাষিরা আখ চাষে ঝুকছেন বেশি। ফলন ও আন্যবারের তুলনায় অনেক বেশি। তবে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে সামান্য ক্ষতি হলেও করোনা পরিস্থিতিতে আখ বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন আখচাষিরা। ফলন ভালো হলেও ন্যায্য দাম পাওয়া যাবে কিনা এসব নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন তারা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এবার ২৫ হেক্টর জমিতে আখের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮৫ হেক্টর জমিতে। যা এবছর বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ১১০ হেক্টরে এসে দাঁড়িয়েছে।

ভালো মাটি, আশানুরূপ ফলন, রোগবালাই কম থাকায় ও ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় দিন দিন এ অঞ্চলে আখ চাষের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে ১১০ হেক্টরের প্রায় ৬৫ হেক্টরই দোহাকুলা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় চাষ হয়েছে। উপজেলার সব এলাকার চাষিরা গেন্ডারি জাতের আখ চাষ করেছেন।

আখ বিক্রির পুরোপুরি মৌসুম সেপ্টেম্বরের শুরুতে হলেও কয়েক জায়গায় আগাম লাগানোর কারণে সীমিত আকারে বেচাকেনা চলছে। সেপ্টম্বরের ভিতরে করোনাভাইরাস স্বাভাবিক হলে আখচাষিদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তারা ভালো দামও পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তবে আখ এখনও খাওয়ার তেমন উপযোগী হয়নি।

সরেজমিনে যেয়ে জানা গেছে, উপজেলার দোহাকুলা ইউনিয়নের শুকদেবনগর, ছাইবাড়িয়া, নওয়াপাড়া, খলশী, বহরামপুর ও ইন্দ্রা গ্রামে বেশি আখ চাষের আবাদ হয়েছে। জামদিয়া ইউনিয়নের দাতপুর, করিমপুর, আদমপুর, দরাজহাট ইউনিয়নের হাবুল্যা, লক্ষীপুর, মহিরণ, দাতপুর, নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের ক্ষেত্রপালা, মালঞ্চি, পশ্চিমা,
শ্রীরামপুরহর রায়পুর ইউনিয়নের কিছু এলাকায় সীমিত পরিমাণ আখ চাষ হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় ক্ষেত থেকে কিছু কিছু এলাকা থেকে আগাম আখ কেটে বাজারে বিক্রি করছেন চাষিরা।

যে টা বাছাই মারা আখ। উৎপাদিত আখের আশানুরূপ ফলন পেলেও দাম নিয়ে চিন্তিত রয়েছে কৃষকরা । সরকারি কোনো উদ্যোগ না থাকায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে আখচাষ করেছে বলে জানিয়েছেন আখচাষিরা।

দোহাকুলা এলাকার আখচাষি ও স্থানীয় ইউপি সদস্য ছবির আল মামুন বলেন, ‘আমি এবার তিন বিঘা জমিতে আখ চাষ করেছি। ফলনও মোটামুটি ভালো হয়েছে। বিগত আম্পান ঘূর্ণিঝড়ে ২৬ শতক জমির আখ পড়ে গিয়েছিল। সেকারণে এবার বাড়তি ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে। চারারোপণ থেকে শুরু করে প্রায় ৫ লাখ টাকা মতো খরচ হয়েছে। বিক্রি করার আশা রয়েছে ৮ থেকে ৯ লাখ টাকা। করোনার কারণে ন্যায্যমূল্য পাওয়া যাবে কিনা এনিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছি।’

ছাইবাড়িয়া গ্রামের আখচাষি রিপন হোসেন জানান, ‘আমি কয়েক বছর ধরে আখ চাষ করছি। গত বছর আখের আশানুরূপ ফলন ও ন্যায্য মূল্য পেয়েছিলাম। আম্পানের কারণে আখ কিছুটা বাকা হয়ে গেছে । তবে এ বছর করোনার কারণে বিক্রি হবেনে কিনা আল্লাহ জানে।

চাষিদের চারিপাশে ক্ষতি। এমনিতে আখ চাষে সরকারি কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায় না। তবে কৃষি অফিস সবসময় খোঁজ খবর রাখে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল আলম বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় আখ চাষের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছরও আখের আশানুরূপ ফলন হয়েছে। ফসলটি খুবই লাভজনক হওয়ায় কৃষকরাও আগ্রহী হচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, এক দেড় মাসের মধ্যে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে চাষিরা নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আখচাষিরা ভালো দাম পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
আমাদের কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে সার্বক্ষণিক চাষের ব্যাপারে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করছেন।’
প্রসঙ্গত, এ অঞ্চলের আখের চাহিদা সারা দেশে ছড়িয়ে রয়েছে। আখ কাটার মৌসুম শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলার ক্রেতারা আখ কিনতে বাঘারপাড়ায় আসে।

আখের গুণগতমান ও পরিবহন ব্যবস্থা ভালো থাকায় ব্যাপারীদের স্বাচ্ছন্দ্যবোধ হয়। ঢাকা, খুলনা, যশোর, বরিশাল, বাগেরহাট, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরাসহ বিভিন্ন জেলার ব্যাবসায়ীরা এ এলাকায় আখ কিনতে আসে।
সুত্রঃ জনবানি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *