মোরশেদ আলম,যশোর প্রতিনিধি

করোনা পরিস্থিতির সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় আম্পান দেশের ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের গদখালী-পানিসারার ফুলচাষিদের অর্থ সংকট ও ফুলের চারার সংকট দেখা দিয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে ফুল বিক্রি করতে না পারায় অর্থের অভাবে আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত ফুলের শেড পড়ে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। ফুলচাষের মৌসুম আসলেও নতুনভাবে চাষাবাদ শুরু করতে না পারায় ফুল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
এ পরিস্থিতিতে চাষিদের ক্ষতিকাটিয়ে উঠে ঘুরে দাঁড়াতে হলে সরকারের সহায়তা চেয়ে দুই বছরের স্বল্প সুদে ঋণ চেয়েছেন এ খাতের সংশ্লিষ্ট ফুলচাষি-ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি সূত্র মতে, যশোরের ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলার ৭৫টি গ্রামের প্রায় সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা হয় হরেক রকমের ফুল। ঝিকরগাছার পানিসারা-গদখালী গ্রামগুলোর রাস্তার দুইপাশে দিগন্ত বিস্তৃত জমিতে সারাবছরই লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি আর সাদা রঙের ফুলের সমাহার হয়ে থাকে। শত শত হেক্টর জমি নিয়ে গাঁদা, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা, কসমস, ডেইজ জিপসি, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ হয়েছে এখানে। তবে করোনার কারণে এই কার্যক্রমে ছেদ পড়েছে গদখালী-ব্যবসায়ীসহ এই সেক্টরের সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে।
সরেজমিনে ঘুরে ও কৃষকদের সাথে কথাবলে জানা গেছে, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের থাবায় থমকে গেছে দেশে ফুলের রাজধানী খ্যাত গদখালী এলাকা। গত ৫ মাসে মাসে ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীদের ৩০০ কোটি বেশি টাকার ক্ষতি হয়েছে। হতাশায় ভেঙে পড়েছেন ফুল চাষের ওপর নির্ভর এলাকার হাজারো মানুষ। করোনায় ফুল বিক্রি করতে না পারায় নষ্ট হয়ে থাকা জমি ফেলে রেখেছে। কেউ বা অর্থের অভাবে আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত শেড মেরামত করছেন না। এখনই ফুলের চাষ শুরু করতে না পারলে ব্যাহত হবে এ বছরের ফুল উৎপাদন।
এমন অবস্থায় নতুনভাবে শুরু করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন গদখালী-হাড়িয়া এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ফুল চাষি সানজিদা বেগম।
তারা জানান, তবে অর্থের অভাবে তিনি ফুল চাষ করতে পারছেন না। আম্পানে আমার জারবেরার ৪টি শেডই নষ্ট হয়ে গেছে। এগুলো যে মেরামত করবো টাকা নেই। ঘূর্ণিঝড় আম্পানে তার দেড় বিঘা জমির দুটি জারবেরা শেড উড়ে যায়। ব্যাংকে ১৩ লাখ টাকা এবং দুটি এনজিওতে সাত লাখ টাকার ঋণ রয়েছে। গত চার মাসে এক টাকাও ঋণের কিস্তি দিতে পারিনি। ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য ব্যাংক ও এনজিও থেকে চাপ দিচ্ছে। কী করব বুঝতে পারছি না।

সাানজিদার  পঙ্গু স্বামী ইমামুল হোসেন বলেন, আমার ২৫ বছরের জীবনে ফুল চাষে এমন ক্ষতির মুখোমুখি হয়নি কখনো। এমন খারাপ অবস্থা আমার জীবনে আর আসেনি। আমার ২টি টিনের শেড ছিল। প্রতিটি টিন ১ হাজার ৫০ টাকা করে কিনে শেডটি তৈরি করেছিলাম। ঝড়ে শেডটি ভেঙে গেছে। এখন প্রতিটি টিন ২০০ টাকা করে বিক্রি করেছি। টিন বিক্রির টাকা দিয়ে সংসার চালাচ্ছি। বর্তমানে ৭ লক্ষ টাকার মতো মূলধন পেলে নতুনভাবে এই ফুল চাষ শুরু করতে পারবেন বলে তিনি জানান। সরকারি সহায়তা না পেলে ফুল চাষ থেকে সরে দাঁড়াবেন অনেকেই বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, দেশে ফুলের বাজার বছরে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার। দেশের চাহিদার ৮০ ভাগ ফুল যশোর থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। করোনার কারণে গত ৫ মাস ফুল বিক্রির সুযোগ না থাকায় এবার ৪৫০ কোটি টাকার ফুল নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে শুধু যশোরে অঞ্চলে অন্তত ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আগামি মৌসুমের বাজার ধরতে বর্তমানে সময়ে চাষিরা ফুলচাষ বীজ বপন, পরিচর্যা শুরু করে। কিন্তু মূলধনের অভাবে তারা শুরু করতে পারছে না। করোনাভাইরাস ও আম্পানে এই খাতে যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নিতে ৫০০ কোটি টাকার কৃষি প্রণোদনা প্রয়োজন।মহামারি করোনা ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তান্ডবে যশোরের প্রায় সব ফুলচাষিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে ফুলের সব ক্ষেত। ক্ষতির এতো বুঝার কারণে কোন কৃষক যেন এই খাতের বাইরে চলে না যায় সরকার এই জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত তালিকা প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলা যানা যায় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *